You are currently viewing ই কমার্সে b2b কি, এর গুরুত্ব ও উপকারিতা 
ই কমার্সে b2b

বিজনেস টু বিজনেস মডেল বর্তমানে পরিচিত ইকমার্স মডেলের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়। এই মডেল দুটি বিজনেস কীভাবে একে অপরের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে তা নির্দেশ করে। ছোট বিজনেস থেকে শুরু করে এন্টারপ্রাইস বিজনেস গুলো এই পদ্ধতিতে তাদের পণ্য সংরহ থেকে শুরু করে মূলধন বৃদ্ধি করে থাকে। আমাদের আজকের আলোচনায় ই কমার্সে b2b মডেল কীভাবে কাজ করে, এর গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

ই কমার্সে b2b কি?

ইকমার্সে অনেকগুলো প্রচলিত মডেল রয়েছে। এগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দ্বারা আলাদা করা থাকে। এদের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রচলিত মডেলের মধ্যে B2B মডেল অন্যতম। B2B হচ্ছে বিজনেস টু বিজনেস এর শর্ট ফর্ম। অর্থাৎ যখন একটি বিজনেস থেকে আরেকটি বিজনেস ইকমার্স ইউজ করে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করে তখন তাকে b2b মডেল বলে। 

অর্থাৎ এই ব্যবস্থায় একটি বিজনেসের সাথে যখন আরেকটি বিজনেস পণ্য কেনার জন্য ডিল করে তখন তাকে বি টু বি বলে। আর এই একই সিস্টেম ফলো করে যখন কোন বিজনেস বা এজেন্সি কোন ইকমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে ডিল করে তখন তাকে ই কমার্সে b2b বলে। আরও সহজ করে বলতে গেলে আমরা বাংলাদেশে দারাজের সাথে সবাই পরিচিত। এখানে আপনি যেমন পণ্য কিনতে পারবেন তেমনি নিজের তৈরি করা প্রোডাক্ট অথবা নিজের দোকানের প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন। এখানে আসলে বিজনেসের সাথে কাস্টমারের সরাসরি যোগাযোগ হচ্ছে। 

অন্যদিকে ধরুন আপনার একটি কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের দোকান আছে। এখানে আপনি বিভিন্ন মডেলের পণ্য রেখেছেন যার বেশিরভাগ আপনি বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করে থাকেন। এখন আপনার এলাকায় যদি কেউ এজেন্সি টাইপের অথবা স্টার্টআপ টাইপের প্রতিষ্ঠান দিতে চায় তাহলে কিন্তু তার একসাথে অনেকগুলো কম্পিউটার এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রোডাক্টের প্রয়োজন পড়বে। 

প্রতিটা জিনিস আলাদা আলাদা দোকান থেকে সংগ্রহ করা যেমন ঝামেলার হবে তেমনি খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে সে যদি আপনার সাথে যোগাযোগ করে এবং ৫০ টি কম্পিউটারের অর্ডার দেয় তাহলে এটি একটি B2B ডিল হবে। কারণ এখানে উক্ত কাস্টমার একজন বিজনেস ওনার হিসেবে আপনার থেকে পণ্য কিনছে। 

ই কমার্সে b2b মডেলের প্রকারভেদ 

ই কমার্সে b2b কি

সাধারণত ইকমার্সে ৩ ধরনের B2B মডেলের বিজনেস হয়ে থাকে। নিচে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

সাপ্লায়ার ভিত্তিক

এই সিস্টেমে একজন অথবা একের অধিক সাপ্লায়ার একত্রিত হয়ে একটি ইকমার্স প্লাটফর্ম তৈরি করে। তারা যে যে প্রোডাক্ট সাপ্লাই করে বা তাদের কাছে যা স্টকে আছে সেগুলো সাইটে ডিসপ্লে করে রাখে। বায়ার সাইট ভিজিট করে এই সকল প্রোডাক্ট দেখে এবং যাচাই-বাছাই করে কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পদ্ধতিতে সাপ্লাইয়ারের সাথে বায়ারের সরাসরি কমিউনিকেশন হয় এবং মার্কেট রিসার্চ সঠিক পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। 

এতে অনেক ধরনের সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। সাপ্লায়ার ভিত্তিক B2B প্রতিষ্ঠা করতে হলে অনেক বেশি ইনভেস্ট প্রয়োজন পরে এবং অনেক বড় পরিমানে সাপ্লায়ার নেটওয়ার্ক প্রয়োজন পরে। আর যেখানে অনেক বেশি পরিমানে অংশীদার হয় সেখানে মতের অমিল বেশি হয়ে থাকে। 

বায়ার ভিত্তিক

এটি সিস্টেম অনেকটা সাপ্লায়ার ভিত্তিক B2B এর মতই কাজ করে তবে বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে একটু পার্থক্য রয়েছে। বায়ার ভিত্তিক সিস্টেমে বায়ারগন অথবা ক্রেতার অর্গানাইজেশন মিলিত হয়ে ইকমার্স মার্কেটপ্লেস তৈরি করে। যেখানে সাপ্লায়ার এসে তাদের পণ্য লিস্ট করে এবং বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এই পদ্ধতিতে সাপ্লায়ারদের মধ্যে কম্পিটিশন করার মাধ্যমে পণ্যের দাম কমানো যায়। অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি সাপ্লায়ারদের অনিহা সহ এই প্লাটফর্মের প্রতি নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করে। 

থার্ড পার্টি মধ্যস্থতাকারী ভিত্তিক

আমরা বর্তমানে এই সিস্টেমের সাথে ব্যপকভাবে পরিচিত। এই সিস্টেমে একটি মধ্যস্থতাকারী দল বায়ার এবং সাপ্লায়ারদের জন্য ইকমার্স প্লাটফর্ম তৈরি করে। এখানে সকল ধরনের ট্রানজেকশন মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রন এবং সিকিউর করা হয়। এই ব্যবস্থার সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি যে কোন দেশ থেকে যে কোন দেশে আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। তাছাড়া এভাবে সাপ্লায়ার ও বায়ারের মধ্যে একটি ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি হয়। যা বিজনেসের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করে থাকে। 

ই কমার্সে b2b বলতে কি বুঝায়?

আমরা ইতোমধ্যে B2B মডেল সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমানে ধারনা লাভ করেছি। বাংলাদেশে এই সিস্টেম ধিরে ধিরে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে। তবে আমাদের মধ্যে ই কমার্সে B2B বলতে কি বুঝায় তা নিয়ে একটু সন্দেহ রয়েছে। মূলত ইকমার্স প্লাটফর্ম ইউজ করে যখন দুইটি বিজনেস তাদের নিজেদের মধ্যে পণ্য কেনা-বেচার চুক্তি করে তখন তাকে B2B বা বিজনেস টু বিজনেস ইকমার্স বলে। 

ই-কমার্স ওয়েবসাইট এ সেল বৃদ্ধির ১৫ টি সাধারণ কিন্তু অপ্রতিরোধ্য উপায়

ইকমার্সে এই ধারা অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ ইন্টারনেট ইউজ করে এই বিজনেস করা যাচ্ছে জন্য ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট থেকে সহজেই পণ্য কেনার পাশাপাশি বিক্রি করা যাচ্ছে। সাধারণত গ্লোবালাইজেশনের কারণে বিশ্ববাজারে বিজনেসের সাথে অন্য বিজনেসের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া ই কমার্সে b2b মডেল নামে পরিচিত। 

বিজনেসে b2b মডেলের উপকারিতা 

নিচে B2B মডেলের উপকারিতা বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো। 

বিশ্বায়ন 

B2B মডেলের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আপনার বিজনেসকে বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করাতে পারবেন। পাশাপাশি আপনি ক্রস বর্ডার ট্রেড করার জন্য অনেক সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে ট্রানজেকশন করার জন্য অনেক ধরনের সুবিধা পাবেন এবং পণ্য ডেলিভারী সহ ইকমার্সের সাথে জরিত সকল ধরনের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। সব থেকে বড় বিষয় বিশ্বের যে কোন দেশে আপনি বাসায় বসেই পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। 

পরিচালনার দক্ষতা

B2B বিজনেসে ইকমার্স ইন্টিগ্রেট করার ফলে কাজের গতি অনেক বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো মার্কেটে এই মডেল কাজের গতি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। কারণ এখানে বেশীরভাগ কাজ ম্যানুয়ালি করা হয়। যে কারণে সময় বেশি প্রয়োজন পরে পাশাপাশি ব্যায় বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যদি ইকমার্স ইন্টিগ্রেট করা হয় তাহলে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে ট্রানজেকশন পর্যন্ত সবকিছু অটোমেটিক হয়ে যায়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিকে কাজ হওয়ার জন্য ভুল কম হয় এবং পরিচালনার দক্ষতা প্রকাশ পায়। 

ই কমার্স মার্কেটিং এর গুরুত্ব

খরচ কমানো

যখন একটি বিজনেসে খরচ কমানোর পাশাপাশি আয় বৃদ্ধি করা যায় তখন তা একটি সফল বিজনেসে রূপান্তরিত হয়। B2B মডেলের কারণে প্রথমত বিজনেসের পরিচালনা ব্যায় কমানো যায়। দ্বিতীয়ত কম সংখ্যক কর্মী দিয়ে অনলাইনে বিজনেস পরিচালনা করা যায়। ঝামেলাহিন সাপ্লাই চেইন এনসিওর করা যায় জন্য খরচ কমে আসে। অনলাইন ভিত্তিক বিজনেস হওয়ার কারণে তেমন বড় অফিস স্পেস লাগে না, কর্মী লাগে না ও সর্বোপরি খরচ কমানো যায়। 

উচ্চমানের ক্রেতা সন্তুষ্টি

ইকমার্স বিজনেস সফল হওয়ার জন্য সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কাস্টমারের সাথে কমিউনিকেশন। অর্থাৎ আপনি কাস্টমারের সাথে যত ভালো করে কমিউনিকেশন করতে পারবেন আপনার সেল বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। ইকমার্স B2B বিজনেসে এই বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিটুবি বিজনেসে যখন শক্তিসালি রিলেশনশিপ তৈরি হয় তখন ক্রেতার মধ্যে বোঝাপড়া হয়। 

ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা

ই কমার্সে b2b ব্যাবসায়িক বুদ্ধিমত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। কারণ এই মডেলে আপনি রিয়েল টাইম ডাটা পাবেন যা আপনাকে কি পরিমানে সেল হচ্ছে, কোন দেশে সেল হচ্ছে, কে কিনছে এই জাতিয় সকল তথ্য পাবেন। অর্থাৎ কাস্টমারের সম্পর্কে অনেক বিষদ জ্ঞান লাভ করবেন। এতে কাস্টমার কোন ধরনের প্রোডাক্ট বেশি পছন্দ করে বা তাদের মাইন্ড রিড করতে পারবেন। 

ই কমার্স মার্কেটিং এর গুরুত্ব?

আমরা মার্কেটিং শব্দটির সাথে সবাই পরিচিত। এটি এমন একটি বিষয় যা অনলাইন দুনিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটি বিজনেসকে সফল করার জন্য সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর মার্কেটিং। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠান বা বিজনেসের মার্কেটিং না করে থাকেন তাহলে কোন কাস্টমার পাবেন না। কারণ মার্কেটিং ছাড়া আপনার কাস্তমার আপনার বিজনেস সম্পর্কে জানতে পারবেন না। 

বিশেষ করে ইকমার্সের মতো অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মার্কেটিং করতে হবে। কারণ আপনি যদি সঠিকভাবে মার্কেটিং না করেন তাহলে মানুষ আপনার অনলাইন স্টোর সম্পর্কে জানতে পারবে না। এমনকি আপনার যে একটি অনলাইন স্টোর আছে তা তাদের কাছে সহজে পৌঁছাবে না। মার্কেটিং এর অনেক ধারা এবং ভাগ রয়েছে। বিজনেস সফল করার জন্য এই সকল ধারার দিকে আপনাকে গুরুত্বদিতে হবে। অন্যদিকে ইকমার্স বিজনেসের জন্য মার্কেটিং এর গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। 

উপরিউক্ত আলোচনায় ই কমার্সে b2b মডেল কি, কীভাবে কাজ করে, প্রকারভেদ, উপকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বর্তমান সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্ট্রাটেজি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেওয়া হয়েছে। 

Leave a Reply