হোস্টিং ইউজ করার সময় আমাদের বেশ কিছু কমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেগুলো সমাধান করা অনেক জরুরি। সাধারণত সমস্যা গুলো বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ইরর গুলো আমাদের কারণে সৃষ্টি হোক অথবা হোস্টিং এর কারণেই হয়ে থাকুক সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান না করলে তা আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য অনেক ক্ষতিকর। নিচে হোস্টিং ব্যবহারের সময় যে যে সমস্যায় পড়তে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Table of Contents
ডাউনটাইম

ওয়েবসাইট ডাউনটাইম আপনার ওয়েবসাইট যতখন ভিজিট করা যায় না। সহজ কথায় বলতে গেলে আপনার ওয়েবসাইট যদি কোন কারণে বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে তাকে ওয়েব সাইট ডাউন বলা হয়। এবং যতক্ষণ সময় ধরে ওয়েবসাইট ভিজিট করা যায় না সে সময় কে ডাউন টাইম বলা হয়। যে যে কারণে সার্ভার ডাউন থাকতে পারে তা হচ্ছে-
- সার্ভার মেইন্টেনেন্স
- ডোমেইন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মুভ করার সময় DNS প্রপাগেশন
- ওয়েবসাইট অথবা সার্ভার মাইগ্রেশন
- সাইবার অ্যাটাক (DDoS, Bruite-Force)
- ওয়েবসাইট ইরর
- PHP ভার্শন কনফ্লিক্ট
ইত্যাদি কারণে সার্ভার ডাউন হয়ে থাকতে পারে। তবে প্রায়ক্ষেত্রে দেখা যায় সার্ভার ডাউন থাকার জন্য ইউজারের থেকে হোস্টিং প্রভাইডার বেশি রেস্পন্সিবল হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য আপনাকে প্রথমে দেখতে হপবে কি কারণে সার্ভার ডাউন হচ্ছে।
যদি হোস্টিং প্রভাইডার থেকে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তাদের থেকে সমাধান করে নিতে হবে। যদি তারা সমস্যা সমাধান করতে না পারে তাহলে অন্য হোস্টিং এ ওয়েবসাইট মুভ করা বেটার অপশন। তবে বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি অনেক অ্যাডভানস হওয়ার কারণে সার্ভার ডাউনটাইম সমস্যা অনেক কমে গেছে।
কোন কারণে ডাউন হয়ে গেলেও তা অনেক দ্রুত সময়ের মধ্যে আপ করে দেওয়া হয়। তবে এই ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের জন্য সার্ভার বা হোস্টিং নেওয়ার আগে প্রভাইডারের রেপুটেশন ও কনফিগারেশন ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে। না হলে পরবর্তীতে সার্ভার ডাউনটাইম সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
ইন্টারনাল সার্ভার ইরর
সাধারণত আমরা যখন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করি তখন ব্রাউজার সার্ভারে HTTP রিকোয়েস্ট পাঠায়। সার্ভার এই রিকোয়েস্ট পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ফাইল পুনরায় ব্রাউজারে পাঠায়। কোন কারণে যদি এই রিকোয়েস্ট সার্ভারে না যেতে পারে তাহলে ৫০৫ নামে একটি HTTP Error Status Code শো করে।
মূলত ইন্টারনাল সার্ভার ইরর হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে এদের মধ্যে সব থেকে বেশি যে সমস্যাগুলো হয়ে থাকে তা হচ্ছে-
- প্লাগিন বা থিম একে অন্যের সাথে কনফ্লিক্ট করে।
- .htaccess ফাইলে কোন সমস্যা থাকলে।
- সার্ভার রিসোর্স বেশি ইউজ হওয়ার কারণে HTTP রিকোয়েস্ট প্রসেস না হওয়ার কারণে।
- DDoS অ্যাটাক হওয়ার কারণে।
- ফাইল পারমিশনে সমস্যা থাকলে
- PHP Memory Limit কম থাকলে
এগুলো কারণে প্রায় সময় ৫০৫ ইরর দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য প্রথমে কি কারণে সমস্যাটি হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। যদি প্লাগিন বা থিম এই সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলে আপনাকে ম্যানুয়ালি থিম এবং প্লাগিন একের পর এক ডিআক্টিভ করে সমস্যা যুক্ত থিম বা প্লাগিন রিমুভ করে দিতে হবে।
যদি সার্ভার রিলেটেড সমস্যা হয় তাহলে হোস্টিং সাপোর্টে যোগাযোগ করে সমস্যা বলে সমাধান করে নিতে হবে। তবে আপনার যদি কন্ট্রোল প্যানেল সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে ফাইল ম্যানেজার ইউজ করে ফাইল পারমিশন, PHP মেমোরি লিমিট, .htaccess ফাইলের সমস্যা এগুলো নিজেই ঠিক করে নিতে পারবেন। অন্যদিকে সিকিউরিটির জন্য ওয়েবসাইটে ফায়ারওয়াল ইম্পিলেমট করার পাশাপাশি সার্ভারের WAF ইনেবল করে নিতে হবে।
ই-মেইল কাজ না করা
হোস্টিং ব্যবহার করার সময় পড়া সমস্যাগুলোর মধ্যে ই-মেইল ঠিক মতো কাজ না করা অন্যতম। তবে এখানে প্রায় সময় ডাটা মিসম্যাচ হওয়ার কারণে ই-মেইল কাজ করে না। এটি সমাধান করার জন্য অবশ্যই প্রফেশনাল হেল্পের প্রয়োজন পরে। এই ক্ষেত্রে ই-মেইল সার্ভার সেটআপে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে হোস্টিং প্রভাইডার থেকে হেল্প নিতে হবে।
প্রায়ক্ষেত্রে দেখা যায় MX রেকর্ড ভুল থাকার কারণে ই-মেইল কাজ করে না। এটি সমাধান করতে হলে ডোমেইনের DNS সেটিং থেকে MX রেকর্ড নিয়ে সার্ভারে আপডেট করে দিতে হবে। পাশাপাশি SPF, DKIM ও DMRAC ইউজ করে ই-মেইল অথেন্টিকেশন ইউজ করতে হবে। এতে মেইল স্প্যামে যাওয়া প্রবণতা কমে যাবে। অন্যদিকে SMTP সঠিক পোর্টে সেটআপ করতে হবে এবং SSL দিয়ে সিকিউরিটি এনশিওর করে নিতে হবে।
ওয়েবসাইট স্লো কাজ করা
ওয়েবসাইট স্লো কাজ করার পেছনে হোস্টিং অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। যদিও প্রায় সময় ওয়েবসাইট স্লো হওয়ার পেছনে ইউজার নিজে দায়ী থাকে তবে সার্ভার স্লো হলে তার দ্বায় হোস্টিং এর উপরে বর্তায়। হোস্টিং এ যে যে সমস্যা থাকলে ওয়েবসাইট স্লো হয় তা হচ্ছে-
- হোস্টিং স্পেস কম থাকা
- আউটডেটেড হার্ডওয়্যার
- ওল্ড সফটওয়্যার
- অদক্ষ সার্ভার অ্যাডমিন
- CDN না থাকা
- সার্ভার ক্যাশিং না থাকা
- শেয়ারড হোস্টিং ইউজ করা
ইত্যাদি ছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। অন্যদিকে এই সমস্যা সমাধান করার জন্য সার্ভার আপগ্রেড করে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আপনার ওয়েবসাইট যদি ই-কমার্স বা বড় ডাটাবেজ যুক্ত ওয়েবসাইট হয়ে থাকে তাহলে তা স্বভাবত অনেক বেশি লোড টাইম নিয়ে থাকে। এই ধরনের সাইট দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেডিকেটেড অথবা VPS সার্ভারে মুভ করে নিতে হবে।
ডাটাবেজ কানেকশন ইরর
ওয়েবসাইট যদি ডাটাবেসের সাথে ঠিক মতো কানেক্ট না হয় তাহলে ওয়েবসাইট ভিজিট করা যায় না। কারণ ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট দেখানোর কাজ করে থাকে ডাটাবেজ। কোন কারণে যদি ডাটাবেজ থেকে ওয়েবসাইট ডাটা ফেচ করতে না পারে তাহলে ফ্রন্ট এন্ডে কিছু শো করতে পারে না। যে কারণে ওয়েবসাইটে ইরর শো করে থাকে।
এটি অনেক কারণেই হতে পারে যেমন ডাটাবেজ সার্ভার ডাউন থাকতে পারে, ডাটাবেজ ইউজার ও পাসওয়ার্ড ভুল থাকতে পারে ইত্যাদি। ডাটাবেজ কানেকশন ইরর সমাধান করার জন্য সবার প্রথমে wp-config.php চেক করে ডাটাবেসের নাম, ইউজার, পাসওয়ার্ড সঠিক আছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে। পাশাপাশি সার্ভার রিসোর্স বৃদ্ধি করে নিতে হবে।
SSL সার্টিফিকেট সমস্যা
SSL ইরর হওয়ার কারণ হচ্ছে তা সথক ভাবে ইন্সটল ও কনফিগার না থাকা। অর্থাৎ SSL সার্টিফিকেট যদি ঠিকমতো কনফিগার করা না থাকে তাহলে ওয়েবসাইটে এটি কাজ করবে না। আবার এই সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এটি কাজ করবে না। এতে দেখা যাবে ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় ওয়ার্নিং দিচ্ছে যা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স জন্য অনেক খারাপ। SSL সমস্যা সমাধান করার জন্য Cloudeflare অথবা Let’s Encrypt ইউজ করতে হবে। এই সার্ভিস গুলো অন্যান্য অনেক সুবিধার পাশাপাশি ফ্রি SSL সার্ভিস প্রদান করে থাকে।

ম্যালওয়্যার অ্যাটাক
সাম্প্রতিক তথ্য মতে, প্রতি দিন প্রায় ৪,৫০,০০০ এর থেকেও বেশি পরিমাণ ম্যালওয়্যার অ্যাটাক হয়ে থাকে। ২০২৪ সালে ম্যালওয়্যার অ্যাটাক গত বছরের তুলনায় ৩০% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধরনের সাইবার হামলা ওয়েবসাইটের জন্য অনেক ক্ষতিকর। ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে হলে আমাদের এই বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে ওয়েবসাইট ডাউন থাকার পাশাপাশি বিজনেস রেপুটেশন নষ্ট হয়ে যাবে।
সাধারণত ম্যালওয়্যার অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য হোস্টিং কোম্পানিগুলো অনেক ধরনের ফায়ারওয়াল ও সিকিউরিটি অ্যাপ্লিকেশান দিয়ে থাকে। যেমন ITNutHosting এ WAF ফায়ারওয়াল দেওয়ার পাশাপাশি cPGuard এন্টিভাইরাস দিয়ে থাকে। এগুলো ওয়েবসাইটে সম্ভাব্য অ্যাটাক প্রতিরোধ করে এবং সুরক্ষা দিয়ে থাকে। হোস্টিং নেওয়ার সময় আপনি এই সুবিধাগুলো পাচ্ছেন কিনা তা অবশ্যই চেক করে নিতে হবে।
হোস্টিং স্টোরেজ ওভারফ্লো হওয়া
সার্ভারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া স্টোরেজ যখন ফুল হয়ে যায় তখন এই সমস্যা দেখা দেয়। এই সময় উক্ত সার্ভারে থাকা কোন সার্ভিস ইউজ করা যায় না। কারণ সার্ভার সেই সময় নতুন করে রিকোয়েস্ট হ্যান্ডেল করতে পারে না। যা সার্ভিস আনঅ্যাভেইলেবল করে দেয়।
এই ক্ষেত্রে আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে আপনার হোস্টিং এর সাথে যোগাযোগ করে সার্ভার আপগ্রেড করে নিতে হবে। এতে সার্ভারের রিকোয়েস্ট হ্যান্ডেলিং বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সার্ভারে থাকা ব্যাকআপ ফাইল রিমুভ করে দিতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ফাইলের পাশাপাশি কমপ্রেস করা ইমেজ ইউজ করতে হবে।
শেষকথা
হোস্টিং ইউজ করার সময় উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হওয়া স্বাভাবিক। তবে এই সমস্যা গুলো দ্রুত সমাধান করে নেওয়াই হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কি কারণে হোস্টিং ব্যবহার বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং সেগুলো সমাধানের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।