You are currently viewing কিভাবে বাংলাদেশে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করবেন

অনলাইনে ষ্টোর তৈরি করে তা থেকে আয় করা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনেক পপুলারিটি পেয়েছে। সময়ের সাথে সাথে ছোট খাটো ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে মাল্টিভেন্ডর ই-কমার্স কোম্পানি তৈরি হয়েছে। এতে একাধারে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তেমনি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের আজকের লেখায় ই-কমার্স ওয়েবসাইটের পরিচিতি, তৈরির পদ্ধতি ও কিভাবে বাংলাদেশে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

কোনটি ই কমার্স ওয়েবসাইট?

একটি ওয়েবসাইটের মধ্যে থাকা কোন প্রোডাক্ট যখন কোন কাস্টমার কিনবে তখন তাকে ই-কমার্স বলে। অর্থাৎ আমরা যখন কোন পণ্য বা সেবা বিক্রি করার জন্য ওয়েবসাইটের সাহায্য নিব তখন তাকে ই-কমার্স হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। তো ইন্টারনেটে থাকা সকল ওয়েবসাইট কি ইকমারস্ত ওয়েবসাইট? না, ই-কমার্স ওয়েবসাইট হওয়ার কিছু নিয়ম আছে। যেমন- 

  • পণ্য থাকতে হবে
  • কাস্টমার প্রোডাক্টের ডিজিটাল ভার্সন দেখতে পাবে
  • পণ্যের ছবি দেখে সরাসরি “Buy Now” এ ক্লিক করে কার্টে অ্যাড করতে পারবে 
  • ফিজিক্যাল ষ্টোরের মত অনলাইন ষ্টোর হবে
  • পেমেন্ট করার সুবিধা থাকবে
  • পণ্য কেনা-বেচার সাথে সম্প্রকিত সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে 

আপনি যখন কোন ওয়েবসাইট আ এই ধরনের ফিচার বা অপশন দেখবেন তখন সহজেই ধারনা করতে পারবেন যে এটি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট। অন্যদিকে কোন ডিজিটাল মারকেটপ্লেস, নিলাম পরিচালনা করার ওয়েবসাইট অথবা যে কোন অনলাইন ষ্টোরকে ইকম্মারস বলা হয়। 

কোনটি ই কমার্স ওয়েবসাইট?

এই ধরনের ওয়েবসাইটকে আলাদা করার জন্য আপনি ওয়েবসাইটের প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারনা নিতে পারেন। যেমন ব্লগ ওয়েবসাইটে সুধু ব্লগ পোস্ট পাওয়া যায়, ভিডিও ওয়েবসাইটে আপনি ভিডিও পাবেন, সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটে কমিউনিটি জাতীয় বিষয় পাবেন। মোটকথা একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট হতে গেলে সরবপ্রথম সরত হচ্ছে সেখানে বিক্রি করার জন্য প্রোডাক্ট থাকবে এবং সেগুল ডেলিভারি করা পর্যন্ত সকল ধরনের ফাংশন থাকবে।  

বর্তমান সময়ে এটি একটি ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে যার সূত্রপাত অ্যামাজন দিয়ে শুরু হয়েছিল। যাইহোক, সময়ের সাথে সাথে মানুষের হাতে যত স্মার্টফোন বৃদ্ধি পাচ্ছে তত অনলাইন ষ্টোরের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলছে। 

ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে কি কি লাগে?

একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে কিছু অতি-প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রয়োজন পরে। নিচে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে কি কি লাগে তা নিচে দেওয়া হলো। 

ডোমেইন

ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে ডোমেইন একটি। কারণ ইন্টারনেটে আপনাকে খুঁজে পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ডোমেইন। ডোমেইন নেমের মাধ্যমে ইন্টারনেটে আইডেন্টিটি নির্ধারণ করা হয়, যেমন ধরুন আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন এবং সেই ওয়েবসাইটে মানুষ এসে আপনার লেখা পড়বে বা ভিডিও দেখবে। এখন অনলাইনে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিটর খুঁজে পাবে কীভাবে? 

বিষয়টি কাজ করে অনেকটা আপনার বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার মত করে। লোকেশন জানলে যেমন আপনার বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে ঠিক তেমনি ডোমেইন নেম থাকলে আপনার ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যাবে। তো ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার প্রথম ধাপ হিসেবে আপনাকে ডোমেইন কিনতে হবে। আপনি ইন্টারন্যাশনাল প্রভাইডার থেকেও নিতে পারবেন অথবা আমাদের দেশে অনেক নামি-দামী প্রভাইডার আছে যারা অনেক ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে। তাদের থেকেও নিতে পারবেন। যদি দেশে ই-কমার্স বিজনেস পরিচালনা করার জন্য ডোমেইন নিতে চান তাহলে দেশি প্রভাইডার থেকে নেওয়া বেশি ভালো হবে।  

হোস্টিং

সহজ ভাষায় বলতে গেলে হোস্টিং হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম যেখানে ওয়েবসাইটের সকল ধরনের ফাইল এবং ইনফরমেশন জমা থাকে। অর্থাৎ যখন কোন ভিজিটর ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য ডোমেইন নেম এন্ট্রি করবে তখন হোস্টিং থেকে ডাটা সেই ভিজিটরের কম্পিউটার বা মোবাইলে শো করবে। হোস্টিং এর কোয়ালিটি ও পারফর্মেন্স নির্ভর করে সার্ভার স্পেসের উপরে। অন্যদিকে আপনি যখন ই-কমার্স ওয়েবসাইট হোস্ট করার চিন্তা করবেন তখন স্পেসিফিকেশন দেখতে হবে। 

অর্থাৎ কত জিবি স্পেস আছে, কি প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, কত টুকু র‍্যাম আছে ইত্যাদি সহ আরও অনেক বিষয় রয়েছে। একটি ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করার সময় যদিও এত ডিটেইলস জানা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না তবে ইকমারসের মত ডাটা সমৃদ্ধ সাইট তৈরিতে সার্ভার ডিটেইলস আপনাকে জানতেই হবে। কারণ এই ধরনের ওয়েবসাইটে ভিজিটর অনেক বেশি পরিমানে আসে। 

তাছাড়া প্রোডাক্টের ইমেজ দিতে হয় অনেক হাইকোয়ালিটির। না হলে ভিজিটর প্রোডাক্ট দেখে ধারনা করতে পারে না বা কিনবে কি কিনবে না সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না। সর্বোপরি একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট ভালো কোয়ালিটির হোস্টিং এ হোস্ট করতে হয়। 

হোস্টিং

সিএমএস 

সিএমএস বা কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হচ্ছে একটি অতি জরুরী বিষয়। এই সিস্টেম মূলত তৈরি করা হয়েছে কোন প্রকারের অ্যাডভানস বা কোডিং দক্ষতা ছাড়া যেন একজন ইউজার সহজেই ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এই সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি অতি সহজেই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে পরিচালনা করতে পারবেন। 

বর্তমান সময়ে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হওয়া ও বহুল পরিচিত সিএমএস হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস। যদিও জুমলা, ড্রুপাল ইত্যাদি সিএমএস রয়েছে তবে সহজবধ্যতা ও বিশাল বড় কমিউনিটি সাপোর্ট থাকার কারণে ওয়ার্ডপ্রেস অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। 

যাইহোক, আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে উকমার্স প্লাগিন ইন্সটল করে একটি পরিপূর্ণ অপারেশনাল ই-কমার্স বিজনেস পরিচালনা করতে পারবেন। উকমার্সের পাশাপাশি বর্তমানে সপিফাই অনেক পপুলারিটি পেয়েছে। বিশেষ করে ড্রপশিপিং বা ফুল কন্ট্রোলড ই-কমার্স তৈরি করার জন্য সপিফাই অনেক কার্যকর। তো আপনি যখন একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাইবেন তখন অবশ্যই কি সিএমএস এবং ব্যাকএন্ডে কি ব্যবহার করবেন তা নিশ্চিত হয়ে নেবেন।

পেমেন্ট গেটওয়ে 

একটি অনলাইন বিজনেস বা ই-কমার্স পরিচালনা করার জন্য সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পেমেন্ট গেটওয়ে। আপনি প্রোডাক্ট বিক্রি করে যদি পেমেন্ট নিতে না পারেন তাহলে কিন্তু কোন লাভ নেই। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে যদিও পেপাল বা এই ধরনের হাই কোয়ালিটির পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে তবে বাংলাদেশে এই রকম নেই। এখানে ক্যাশ অন ডেলিভারি নেওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা যেমন বিকাশ এবং নগদ রয়েছে। 

তো এই সার্ভিস গুলো ব্যবহার না করলে আপনি কাস্টমার থেকে প্রোডাক্টের দাম নিতে পারবেন না। যাইহোক, বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক ধরনের অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে আপনি সরাসরি অনলাইন থেকে পেমেন্ট নিতে পারবেন। 

কাস্টমার সার্ভিস 

যে কোন বিজনেসের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে প্রোডাক্ট বিক্রি করে। এখন কাস্টমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় না রেখে কিন্তু কখনোই আশানুরূপ প্রোডাক্ট বিক্রি করা সম্ভব নয়। ধরুন আপনি একজন কাস্টমারের কাছে জোর করে একটি কাপড় বিক্রি করলেন অথবা তাকে একটি লো কোয়ালিটির কাপড় দিলেন। 

সে কিন্তু আপনার কাছে পরবর্তীতে কোন কিছু কিনতে আসবে না। অন্যদিকে অনলাইনে অপশন অনেক বেশি পাওয়া যায়। যে কারণে আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আপনার কাছে যাওয়া ছাড়া তার আর কোন উপায় নাই তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। মোটকথা আপনাকে কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করতে হবে এবং তাদের যে কোন সমস্যায় সমাধান দিতে হবে। 

মাল্টিভেন্ডর ই-কমার্স

কিভাবে বাংলাদেশে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করবেন

বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও এর জনসংখ্যা অনেক বেশি। প্রযুক্তিতে আমরা অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশের থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছি। যে কারণে আমাদের দেশে ইকমারসের মত ডিজিটাল বিজনেসের এত প্রসার ঘটেছে। 

এই দেশে একটি পরিকল্পিত ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম ভালো এবং বিশ্বস্ত হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে নির্বাচন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে যারা অনেক বেশি রিসোর্স এবং সার্ভার কনফিগারেশন সহ হোস্টিং দেয় যেমন আইটিনাট হোস্টিং, এক্সন হোস্ট ইত্যাদি থেকে নিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই সার্ভার আপ্টাইম, সার্ভার লোকেশন, স্টোরেজ স্পেস এবং লেটেস্ট টেকনোলজি সাপোর্ট করে এইরকম হোস্টিং নিতে হবে। 

তারপর আপনি ডেভেলপার হায়ার করে অথবা নিজে নিজে আপনার পছন্দের ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। অন্যদিকে আপনি কাস্টম ভাবেও কোন উচ্চমানের ডেভেলাপার থেকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। 

উপরিউক্ত আলোচনায় ই-কমার্স ওয়েবসাইট কাকে বলে, এটি তৈরিতে কি কি লাগে এবং বাংলাদেশে কীভাবে একটি অনলাইন ষ্টোর তৈরি করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি লেখাটি পড়ে ই-কমার্স সম্পর্কে আপনার ধারনা আরও পরিষ্কার হয়েছে। 

Leave a Reply