ডিজিটাল মার্কেটিং অনলাইন দুনিয়ার একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। আমাদের জীবনে ডিজিটালাইজেশন যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আমরা যে সেক্টরেই কাজ করি না কেন ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অতি জরুরি।
অন্যদিকে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য এটি একটি এভারগ্রিন নিস। অর্থাৎ অন্য সকল সেক্টর এআই দখল করে নিলেও মার্কেটিং এর মতো ক্রিয়েটিভ সেক্টর কখনো দখল করে নিতে পারবে না। নিচে নতুন হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার উপায় এবং কীভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার উপায়
ডিজিটাল মার্কেটিং একটি জার্নি। এখানে নির্দিষ্ট বা একই পদ্ধতি বারবার ও দীর্ঘদিন কাজ করে না। অর্থাৎ আপনি আজকে যা শিখলেন তা যে ৬ মাস পর কাজ করবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার সময় কন্টিনিউয়াস প্র্যাকটিস ও মার্কেট ট্রেন্ডের সাথে সংযুক্ত থাকতে হয়। নিচে কীভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ডিজিটাল মার্কেটিং বেসিক জানতে হবে

ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার আগে এর বেসিক সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিতে হবে। অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং এটি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সাধারণত ডিজিটাল মার্কেটিং গতানুগতিক মার্কেটিং থেকে অনেকটা আলাদা। ডিজিটাল মার্কেটিং বেসিক বলতে যে যে বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয় তা নিচে দেওয়া হলো।
- ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
- ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভেতরে কি কি পরে?
- ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার?
- ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ কি?
- ডিজিটাল মার্কেটিং টুল গুলো কি কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার পূর্বে আমাদের উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো পূর্ণাঙ্গভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা না থাকলে এই সেক্টরে কাজ করা সম্ভব না। যাইহোক, মার্কেটিং ব্যাসিকের মধ্যে অনেক কিছুই থাকে। আপনি বেসিক সম্পর্কে যত ভালো ধারণা রাখবেন আপনার মার্কেটিং ক্যারিয়ার তত গোছানো হবে।
বেশিরভাগ সময় মার্কেটিং শিখতে গিয়ে আমরা সব থেকে বেশি যে সমস্যায় পরি তা হচ্ছে মার্কেটিং এর কোন চ্যানেল শিখবো। আসলে একজন মার্কেটারের একই সাথে কয়েকটি বিষয়ে ভালো এবং পরিষ্কার ধারণা রাখতে হয়। কারণ আপনি যদি এক্সপার্ট না হন তাহলে আপনার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট অন্য জনের কাছে সেল দিবেন কীভাবে?
মার্কেটিং ট্রেড সম্পর্কে সচেতন হতে হবে
ডিজিটাল দুনিয়ায় মার্কেটিং ট্রেন্ড সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। গত বছর যে যে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি কাজ করেছে তা আগামী বছর কাজ করতেও পারে অথবা নাও করতে পারে। তাছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রে মার্কেটিং ধারা পরিবর্তন হতেই থাকে। এই গতানুগতিক ধারার সাথে নিজেকে আপ টু ডেট না রাখলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যায় না। যাইহোক, মার্কেটিং ট্রেন্ড সম্পর্কে জানতে নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে।
- মার্কেটিং সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্লগ
- সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম
- ফোরাম প্লাটফর্ম
- টপ মার্কেটারদের ইউটিউব চ্যানেল এবং পার্সোনাল ব্লগ
- অনলাইন কোর্স
- ওয়েবিনার বা মার্কেটিং কনফারেন্স ও মিটআপ
একজন মার্কেটারের সবসময় মার্কেটিং দুনিয়ায় কি কি হচ্ছে সে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। পাশাপাশি নতুন কোন প্রযুক্তি মার্কেটিং ধারায় কীভাবে প্রভাব ফেলছে সে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। যাইহোক, একজন মার্কেটার হিসেবে এই সকল বিষয় জানার কোন বিকল্প নেই। কারণ যখন আপনি নিজের জন্য বা ক্লায়েন্টের জন্য স্ট্রাটেজি তৈরি করবেন তখন তা সফল হবে কিনা বা টার্গেট পুরন হবে কি না তা আপনার অভিজ্ঞতা ও মুক্ত চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়।
আপনি আপনার মুক্ত চিন্তা ও অভিজ্ঞতা তখনি বৃদ্ধি করতে পারবেন যখন মার্কেটে কি ট্রেন্ড প্রচলিত রয়েছে সে সম্পর্কে জানবেন। অন্যদিকে কম্পিটিটরকে পেছনে ফেলতে চাইলেও আপনাকে সাম্প্রতিক ট্রেন্ড অনুসরণ করে স্ট্রাটেজি তৈরি করতে হবে। মার্কেটিং ট্রেন্ড কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে তার সবথেকে বড় উদাহরণ হচ্ছে PBN ও ব্যাকলিংক। বর্তমানে যত্রতত্র ব্যাকলিংক ও PBN কে স্প্যামিং হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা চ্যাটজিপিটি আসার পর মার্কেটিং ধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। কপিরাইটিং থেকে শুরু করে সকল ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করার কাজে এআই ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে সার্চ ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ওয়েব টেকনোলজি সবকিছুই অনেক স্মার্ট হয়ে উঠেছে। যা মার্কেটিং দুনিয়ায় অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য একজন মার্কেটারের সাম্প্রকিত মার্কেটিং ট্রেন্ড সম্পর্কে সব সময় আপডেটেড থাকতে হবে।
মার্কেটিং চ্যানেল নির্বাচন করতে হবে
অনলাইনে মার্কেটিং করার জন্য বিভিন্ন রকমের চ্যানেল রয়েছে। চ্যানেল গুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে-
- সোশ্যাল মিডিয়া
- B2B মার্কেটিং
- ইমেইল মার্কেটিং
- এসইও (SEO)
- ভিডিও মার্কেটিং
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- ইনফ্লুএন্সার মার্কেটিং
মার্কেটিং শুরু করার পূর্বে আপনি কোন চ্যানেলের উপরে নির্ভর করে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করবেন তা নির্ধারণ করে নিতে হবে। কারণ প্রতিটি চ্যানেলের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি এবং ধারা আলাদা। যদিও এদের মধ্যে কিছু কমন টার্ম রয়েছে তবে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলাদা।
যাইহোক, মার্কেটিং চ্যানেল নির্বাচন করার পূর্বে সম্ভাব্য কাস্টমার বা অডিয়েন্স সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। কারণ আপনার কাস্টমার কোন প্লাটফর্মে বেশি সময় কাটায় তা না জানলে তাদের টার্গেট করে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা বোকামি।
ডিজিটাল মার্কেটিং টুল সম্পর্কে জানতে হবে

ডিজিটাল মার্কেটিং এর যেমন অনেক গুলো ভাগ রয়েছে তেমনি সেগুলো পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের টুলের প্রয়োজন হয়। একজন মার্কেটার হিসেবে এই সকল টুলের ব্যবহার জানা অনেক জরুরি।
ধরুন আপনি এসইও ক্লায়েন্টের জন্য একটি মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরি করবেন। এই জন্য আপনাকে অবশ্যই কিওয়ার্ড, কম্পিটিটর ও নিস রিসার্চ করে নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে আপনি যদি টুল ইউজ না করেন তাহলে ম্যানুয়ালি ডাটা খুঁজে বের করতে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন পরবে।
তবে আপনি এই একই কাজ যদি কোন এসইও টুল ইউজ করে করতে চান তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই করে ফেলতে পারবেন। মূলত এই সকল মার্কেটিং টুল আপনার কাজকে আরও গতিশীল করবে এবং সঠিক ভাবে রিসার্চ করতে সহায়তা করবে। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কিছু ডিজিটাল মার্কেটিং টুল নিচে দেওয়া হলো।
- Google Search Console
- Google Analytics
- Semrush
- Ahrefs
- MailChimp
- Hubspot
- Canva
- Google Ads
- Salesforce
- Buffer
- Moz
- Hootsuite
- BuzzSumo
- AWeber
- Google Tag Manager
- Hotjar
- Google Optimize
উপরে দেওয়া ডিজিটাল মার্কেটিং টুল বিভিন্ন প্রকারের মার্কেটিং চ্যানেলের জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। তবে মার্কেটিং করতে গেলে আপনাকে ডাটা কালেকশন, অপ্টিমাইজ ও রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আপনি ফ্রি এবং পেইড দুই ধরনের টুল ইউজ করতে পারবেন।
তবে কোন টুলের কি কাজ এবং রিয়েল লাইফ প্রোজেক্টে সেগুলোকে কীভাবে কাজে লাগাবেন তা আপনার পারদর্শিতার উপরে নির্ভর করে। তো ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার পূর্বে আপনাকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কোন ধরনের টুল ইউজ হয় এবং সেগুলোর ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জানতে হবে।
পার্সোনাল প্রোজেক্ট করে অভিজ্ঞতা নিতে হবে
ক্লাইন্ট সার্ভিস দেওয়ার পূর্বে অথবা নিজের কনফিডেন্স লেভেল পরীক্ষা করার পূর্বে পার্সোনাল প্রোজেক্ট করা অতি জরুরি। এখানে একাধারে আপনি আপনার শেখা টাকে কাজে লাগাতে পারছেন এবং ডিজিটাল মার্কেটিং বাস্তব জীবনে কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে ধারণা নিতে পারছেন। অন্যদিকে পার্সোনাল প্রোজেক্টের কারণে আপনার পোর্টফলিও আরও স্ট্রং ভাবে তৈরি হচ্ছে।
পার্সোনাল প্রোজেক্ট হিসেবে বেশিরভাগ মার্কেটার ব্লগ দিয়ে শুরু করে। তবে বর্তমান সময়ে ব্লগের পাশাপাশি আরও অনেক নিস রয়েছে যা দিয়ে শুরু করা যায়। বিভিন্ন এক্সপার্ট মার্কেটারদের মতে যে সকল নিস নতুন ভাবে শুরু করার জন্য বেস্ট তা নিচে দেওয়া হলো।
- লোকাল বিজনেস মার্কেটিং
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- ইনফ্লুএন্সার মার্কেটিং
- কন্টেন্ট ক্রিয়েশন (ব্লগ, ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া)
- ই-কমার্স মার্কেটিং
- নন-প্রফিট কমিউনিটি মার্কেটিং
শুরুর দিকে নিজের পোর্টফলিও তৈরি করার জন্য এবং প্র্যাকটিস করার জন্য উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো উপযুক্ত। এতে আপনার যেমন অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে তেমনি আপনি বুজতে পারবেন কোন নিস কীভাবে কাজ করে। এর ফলে যখন ক্লায়েন্টের কাজ করবেন তখন কোন ভিতি কাজ করবে না।
পাশাপাশি আপনার মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরি করা আরও সহজ হবে। বিশেষকরে কোম্পানিগুলো নতুন মার্কেটার হায়ারিং করাকালীন তার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা ও কাজের পরিধি সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্বদিয়ে থাকে। আপনি আপনার পোর্টফলিও যত স্ট্রং করবেন কম্পিটিশনে তত বেশি এগিয়ে থাকবেন।
শেষ কথা
উপরিউক্ত আলোচনায় ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে। মূলত গতানুগতিক মার্কেটিং চিন্তা-ধারা থেকে বের হয়ে বর্তমান যুগের সাথে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিজের বিজনেসকে আরও বড় ও প্রফিটেবল করার কার্যকরী মাধ্যম হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং।