You are currently viewing সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব ও ক্যারিয়ার হিসেবে সাইবার সিকিউরিটি 
সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব

প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে আমাদের দৈনন্দিন কাজে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ছে। সাইবার সিকিউরিটি বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন এবং দ্রুত বিকাশমান ক্যারিয়ার ক্ষেত্র। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, ই-কমার্সের বিকাশ, এবং ক্রমবর্ধমান সাইবার অ্যাটাক মোকাবেলার জন্য সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টের প্রয়োজনীয়তা দ্রুত বাড়ছে। আমাদের আজকের লেখায় সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব ও সাইবার সিকিউরিটি ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব

নিচে সাইবার সিকিউরিটি গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

পার্সোনাল ডাটা সিকিউরিটি

পার্সোনাল ডাটা সিকিউরিটি

সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য সব থেকে বড় ফ্যাক্টর হচ্ছে পার্সোনাল ডাটা সুরক্ষা। ইন্টারনেট আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। পার্সোনাল জীবনের সাথে ইন্টারনেট কানেক্ট থাকায় উক্ত ডাটা উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে। হ্যাকার সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই সকল গোপন ডাটা চুরি করে পাবলিক করে দেয়। আবার এই সকল ডাটা পুঁজি করে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। অন্যদিকে হ্যাকারদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড ডাটা চুরি করার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। চিন্তা করে দেখুন আপনার ক্রেডিট কার্ড ইউজ করে অন্য কেউ কেনা কাটা করলে আপনাকে কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। 

পার্সোনাল ডাটা সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদের সাইবার সিকিউরিটি ও হ্যাকিং কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। না হলে অসতর্কতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পার্সোনাল ডাটা অনলাইনে লিক হয়ে যাবে। পার্সোনাল ডাটা লিক হয়ে যাওয়ার অনেকগুলো খারাপ দিক রয়েছে। আমরা কেউ চাইনা আমাদের পার্সোনাল জীবন সবার কাছে পাবলিক হয়ে থাকুক। অর্থাৎ মানুষ সভাবগতভাবেই গোপনীয়তা রক্ষা করে চলতে পছন্দ করে। কিন্তু কোন কারণে যদি পার্সোনাল লাইফের গোপনীয়তা বা স্পর্শকাতর তথ্য সবার সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায় তবে সবার কাছে দাম কমে যায়। 

সর্বোপরি পার্সোনাল ডাটা সুরক্ষার গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। বর্তমান সময়ে আমরা অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার কারণে আমাদের পার্সোনাল লাইফ সবসময় সিকিউরিটি রিস্কের মধ্যে থাকে। তবে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে পারলে আমরা সহজেই টেকনোলজি ইউজ করে আমাদের পার্সোনাল ডাটা সুরক্ষিত রাখতে পারবো। 

বিজনেস ডাটা সুরক্ষা

সাইবার সিকিউরিটিতে বিজনেস ডাটা বলতে আপনার ওয়েবসাইটে থাকা কাস্টমার ও ক্লায়েন্টের ডাটাকে বোঝায়। ডিজিটালাইজেশনের কারণে বর্তমান সময়ে সকল ধরনের বিজনেস অনলাইনে আসা শুরু হয়েছে। যারা অনেক লম্বা সময় ধরে অফলাইনে বিজনেস পরিচালনা করছিলো তারা ধীরে ধীরে অনলাইনে আসছে। যে কারণে তাদের বিজনেসের সকল ডাটা ইন্টারনেটের মধ্যে প্রবেশ করছে। কোন কারণে উক্ত বিজনেস ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে গেলে সেই ডাটা ইউজ করে কম্পিটিটর আপনার বিজনেসকে বিট করে সামনে এগিয়ে যাবে। এই সমস্যা থেকে সুরক্ষা দিতে আমাদের আইটিনাটের সকল সার্ভারে অ্যাডভান্স ফায়ারওয়াল ও ম্যালওয়্যার প্রোটেকশন দেওয়া হয়। 

তাছাড়া সাইবার অ্যাটাকের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য একদম কমে গেছে। অনেক বিজনেস এই কারণে বড় ধরনের লসের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে বিজনেসে আর্থিক বিষয় সরাসরি অন্তর্ভুক্ত থাকায় এই প্রতিষ্ঠান গুলো হ্যাকারদের প্রধান টার্গেট হয়ে থাকে। যাইহোক, প্রতিষ্ঠানে সাইবার সিকিউরিটি ইমপ্লিমেন্ট করে আপনার নেটওয়ার্ক কে যেমন সুরক্ষা দিতে পারবেন তেমনি বিজনেসের সাথে সম্পর্কিত ডাটা সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। 

ন্যাশনাল সিকিউরিটি

এইতো কিছুদিন আগে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হ্যাক করে হ্যাকার ৮১ মিলিয়ন লুট করে নিয়ে যায়। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও কম ধারণা থাকার কারণে দেশের সর্বোচ্চ ব্যাংক হ্যাকিং এর শিকার হয়েছে। তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সহ সকল সরকারি ডকুমেন্ট সাইবার হামলার কারণে পাবলিক হয়ে গেলে পুরো শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে। তাছাড়া একটি সরকার পরিচালনা করার জন্য সরকারকে অনেক গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়। 

যা পাবলিক জেনে গেলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক চাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাইবার অ্যাটাকের কারণে এই ডাটা পাবলিকের কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায় যা ঠেকানোর কোন উপায় থাকে না। মোট কথা যে কোন মূল্যে আমাদের সরকারি নথি সহ অন্যান্য জরুরি তথ্যগুলো সাইবার হামলা থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। 

টেকনোলজি সিকিউরিটি

টেকনোলজি সিকিউরিটি হচ্ছে সকল ধরনের ডিভাইস যা ইন্টেরনেটের সাথে সংযুক্ত তাদের সুরক্ষিত রাখা। টেকনোলজি সিকিউর রাখতে যে যে কাজ করা জরুরি তা নিচে দেওয়া হলো-

  • উন্নত হার্ডওয়্যার ইউজ করা
  • সফটওয়্যার আপডেট রাখা
  • নেটওয়ার্ক সিকিউরিটির জন্য ফায়ারওয়াল ইউজ করা
  • এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইউজ করা
  • এনক্রিপশন ইউজ করা
  • ক্রস সাইট স্ক্রিপ্টিং, ফিশিং, এসকিউএল ইনজেকশন ইত্যাদি হ্যাকিং অ্যাটাক সম্পর্কে সচেতন থাকা।

মোটকথা টেকনোলজি ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে ডিভাইস গুলোতে লেটেস্ট সফটওয়্যার আপডেট দিতে হবে। পাশাপাশি সিকিউরিটি বৃদ্ধি করার জন্য যত পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো অ্যাপ্লাই করতে হবে।  

আর্থিক ক্ষতি এড়ানো 

সাইবার হামলার কারণে যে সব সময় আর্থিক ক্ষতি হবে এমন তা নয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় হ্যাকার আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হওয়ার জন্য হ্যাক করে থাকে। বর্তমানে আর্থিক লেনদেনের অনেক বড় একটি অংশ অনলাইনে শিফট হয়ে গেছে। ক্যাশলেস সোসাইটি প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কারণে আর্থিক লেনদেন করার জন্য অনলাইন নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে এই সেক্টরে সাইবার হামলার কারণে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

সাধারণত মানুষের মাঝে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়েছে যখন থেকে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি হওয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হ্যাকিং মেথড ইউজ করে হ্যাকার সিস্টেমে প্রবেশ করার ট্রাই করে। যাদের মধ্যে ম্যালওয়্যার ও ফিশিং অন্যতম। আর্থিক লেনদেন বা এই ধরনের বিষয় জড়িত এই সকল ক্ষেত্রে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং সহ ফিশিং ও অন্যান্য হ্যাকিং মেথড ইউজ করা হয়ে থাকে। 

বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান তাদের ইনফরমেশন ও ফাইনান্সিয়াল ক্ষতি এড়ানোর জন্য সাইবার সিকিউরিটি নীতিমালা গ্রহণ করছে। কারণ বিশ্বে প্রতিদিন ব্যাপক পরিমাণ সাইবার হামলা সংঘটিত হয়ে থাকে। অনেক কম্পিটিটর অন্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করার জন্য হ্যাকার হায়ার করে সাইবার অ্যাটাক পরিচালনা করে থাকে। এই সকল ঝামেলা থেকে পরিত্রাণ পেতে অবশ্যই সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। 

সাইবার সিকিউরিটি ক্যারিয়ার

সাইবার সিকিউরিটি ক্যারিয়ার

বর্তমান সময়ে সাইবার সিকিউরিটি একটি এভারগ্রিন ক্যারিয়ার চয়েজ। কারণ দিন যত যাচ্ছে প্রযুক্তি তত উন্নত হচ্ছে। পাশাপাশি উক্ত ডিভাইস গুলোকে হ্যাকারের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন হচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি সেক্টরে প্রতিযোগিতা কম থাকার কারণে এখানে ক্যারিয়ার গড়া অন্য সেক্টর থেকে সহজ। একজন সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট হিসেবে আপনি কোন কোন সেক্টরে যেতে পারবেন তা নিচে উল্লেখ করা হলো-

  • পেনেট্রেশন টেস্টার
  • সিকিউরিটি অ্যানালিস্ট
  • সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার
  • ক্রিপ্টোগ্রাফার 
  • ইনফরমেশন সিকিউরিটি ম্যানেজার

এগুলো বাদেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে বাগ বাউন্টি প্রোগ্রামের মাধ্যমে হিউজ পরিমাণে অর্থ আয় করতে পারবেন। তাছাড়া সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টের দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাজের চ্যালেঞ্জ ও অনাগ্রহের কারণে এই ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী লোকবল পাওয়া যায় না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার জন্য একটি সিকিউর ভবিষ্যৎ গড়ে নিতে পারবেন। 

সার্টিফিকেট 

আমরা জানি দক্ষতার প্রমাণ দিতে এবং পেশাদারিত্ব বোঝাতে সার্টিফিকেট প্রয়োজন পরে থাকে। একজন সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে যেমন-

  • Certified Information Systems Security Professional (CISSP)
  • Certified Ethical Hacker (CEH)
  • CompTIA Security+
  • Certified Information Security Manager (CISM)

এগুলো একজন সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টের অবশ্যই থাকতে হবে। এই সার্টিফিকেট গুলো নিশ্চিত করে যে আপনি একজন ইথিকাল হ্যাকার হিসেবে কতটুকু দক্ষ। এবং এই ডকুমেন্ট এর উপর নির্ভর করে বড় বড় সিকিউরিটি ফার্ম আপনাকে শর্টলিস্ট করবে।

সাইবার সিকিউরিটি ভবিষ্যৎ

আমরা যখন নতুন কোন পেশায় যেতে চাই তখন উক্ত পেশার ভবিষ্যৎ কি হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হয়। অনেকের মধ্যে দেখা যায় সাইবার সিকিউরিটি পেশা হিসেবে নিয়ে ভবিষ্যৎ সিকিউর করা যাবে না। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় সাইবার সিকিউরিটি পেশার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল।

বর্তমানে সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সাথে এই খাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আসার পর সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

শেষকথা

দিন যত যাবে সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টের চাহিদা তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে যেমন নিয়মিত চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হয় তেমনি নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের আজকের লেখায় সাইবার সিকিউরিটির গুরুত্ব ও সাইবার সিকিউরিটি ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

Leave a Reply