বর্তমান সময়ে ইকমার্স শুধু একটি পণ্য বেচা কেনার প্লাটফর্ম নয়। এটি কাস্টমার ও ব্যবসায়ীগনের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইকমার্স আমাদের লোকাল মার্কেটের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ব্যবসা করার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে। বিক্রি বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি সমস্যার উদ্ভব ঘটিয়েছে।
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য শক্তিশালী সিকিউরিটির ব্যবস্থা করতে না পারেন তাহলে কাস্টমার হারানোর পাশাপাশি আপনার বিজনেস বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা ই কমার্স সিকিউরিটি কি এবং এর সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
Table of Contents
ই কমার্স সিকিউরিটি কি?
সিকিউরিটি শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। ইন্টারনেটের যুগে সিকিউরিটি একটি আতঙ্কের নাম। কারণ অনলাইন দুনিয়ায় কেউ সুরক্ষিত না। এখানে পদে পদে বিপদ অপেক্ষা করে। অনলাইনে বিজনেস করার জন্য আমাদের সিকিউরিটির বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হয়।
কারণ ইকমার্স বিজনেসে কাস্টমারের অনেক সেনসিটিভ ডাটা থাকে। এগুলো কোন কারণে পাবলিক হয়ে গেলে অথবা মিস ইউজ হলে আপনার স্টোরের নাম খারাপ হবে। যে ওয়েবসাইট যত বেশি সিকিউরিটি দিবে সে ওয়েবসাইটের প্রতি কাস্টমার ততবেশি ভরসা করবে।.

যাইহোক, ইকমার্স বিজনেস শুরু করার পূর্বে আপনাকে সাইটের সিকিউরিটি বৃদ্ধি করার জন্য কিছু কাজ করে নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে সবার প্রথমে আপনাকে একটি ভালো হোস্টিং কেনার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ওয়েবসাইট সিকিউরিটির ক্ষেত্রে ভালোমানের প্রিমিয়াম হোস্টিং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার সাইটের ফাইল এবং কাস্টমার ডাটা যেখানে থাকবে সেখানে যদি হ্যাকার প্রবেশ করে তাহলে আপনার অজান্তেই আপনার গোপন ফাইল চুরি হয়ে যাবে।
এই সমস্যা থেকে বাচার জন্য আপনি আইটিনাট থেকে প্রিমিয়াম হোস্টিং নিতে পারেন। এই সার্ভিসে আপনি ইকমার্স ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি সম্বলিত সকল প্রয়োজনীয় ফিচার পাবেন। যাইহোক, ইকমার্স তথা যে কোন ওয়েবসাইট তৈরি করার পূর্বে আপনাকে স্পিড এবং সিকিউরিটি আরও জোরদার করে নিতে হবে।
অনলাইন বিজনেসকে এগিয়ে নিতে সেরা ই-কমার্স ট্রেন্ডস
ই-কমার্স হুমকি বলতে কি বুঝায়?
ইকমার্স হুমকি যাকে সাইবার অ্যাটাক বলা হয় সে সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। বর্তমানে মূলত ই-কমার্স ওয়েবসাইটে ৭ ধরনের সাইবার অ্যাটাক প্রচলিত রয়েছে। নিচে পর্যায়ক্রমে সাইবার অ্যাটাক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ম্যালওয়্যার
এটি মূলত একটি ভাইরাস। যা অণুজীবের মত সিস্টেমে প্রবেশ করে তারপর ক্ষতি সাধন করে। মূলত বিভিন্ন মাধ্যমে সার্ভারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে। শেয়ারড সার্ভারের পাশাপাশি ডেডিকেটেড সার্ভারে ম্যালওয়্যার ইনফেক্টেড ফাইল যেমন থিম, প্লাগিন বা মিডিয়া ফাইলের মাধ্যমে এর বিস্তার ঘটতে পারে। এই কারণে যে কোন ওয়েবসাইট তৈরি করার সময় আমাদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
এখানে টার্গেটের স্পর্শকাতর তথ্য ব্যবহার করে ফাঁদে ফেলার মাধ্যমে হ্যাকিং করা হয়। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করার জন্য আপনার সাথে কথা বলার মাধ্যমে হ্যাকার ভুলিয়ে ভালিয়ে অথবা আপনার পরিচিত কোন মানুষের আইডেন্টিটি চুরি করে আপনার থেকে তথ্য হাতিয়ে নিবে। ইকমার্স বিজনেসের জন্য এটি অনেক বড় সমস্যা। কারন আপনার কাস্টমারকে ফিশিং সাইটের মাধ্যমে অন্য পেজে নিয়ে গিয়ে তার সকল তথ্য সহ ক্রেডিট কার্ড নাম্বার চুরি করার মাধ্যমে সহজেই আপনাকে বিপদে ফেলা যাবে।
ক্রস সাইট স্ক্রিপ্টিং (XSS)
এই পদ্ধতির মাধ্যমে পুরো ওয়েবসাইট হ্যাক করা না হলেও বিশেষ কিছু পেজকে টার্গেট করা হয়। বিশেষ করে ইকমার্স ওয়েবসাইটের ইউজার লগইন এবং পাসওয়ার্ড যে পেজে থাকে সেই পেজে এই অ্যাটাক বেশি হয়। কারণ এখানে কাস্টমারের সকল সেনসিটিভ ডাটা থাকে। ওয়েবসাইট নিরাপত্তার জন্য এই বিষয়ে সুরক্ষিত থাকা অনেক জরুরি একটি বিষয়।

ব্রুট ফোর্স অ্যাটাক
এই পদ্ধতিতে হ্যাকার আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পাসওয়ার্ড ও ইউজার নেম দিয়ে বারবার লগইন করার চেষ্টা করে। এই কাজ করতে এমন ধরনের সফটওয়্যার বা টুল ইউজ করা হয় যা মিলিয়ন মিলিয়ন ইউজার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অটোমেটিক লগইন করার চেষ্টা করে। আপনি যদি দুর্বল পাসওয়ার্ড ইউজ করেন তাহলে এই পদ্ধতিতে সহজেই লগিন করা যাবে যা সিকিউরিটির জন্য হুমকি। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে সাইটে লগইন অ্যাটাম নির্দিষ্ট করে দিন এবং ক্যাপচা অ্যাড করুন। পাসাপাসি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং ইউজারদের উৎসাহিত করুন।
ডিডস অ্যাটাক
কোন ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তার সার্ভার ক্র্যাশ অথবা ওয়েবসাইট আনঅ্যাভেইলেবল করে দেওয়ার জন্য এই পদ্ধতি ইউজ করা হয়। ধরুন আপনার একটি রানিং ইকমার্স ওয়েবসাইট আছে। সেখানে নিয়মিত ১ হাজার ভিজিটর আসে। এখন কোন কারণে যদি আপনার ওয়েবসাইট ১ দিন ভিজিট করা না যায় তাহলে কিন্তু আপনি অনেক বড় লসের মধ্যে পরে যাবেন। মূলত এই ধরনের ক্ষতি করার জন্য বিভিন্ন লোকেশন থেকে আপনার ওয়েবসাইটে একই সময়ে কোটি কোটি সার্ভার রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়। সার্ভার এই রিকোয়েস্ট হ্যান্ডেল করতে বিজি থাকে এবং উক্ত সময় ভিজিটর সাইটে আসতে পারে না।
বট
অনেকগুলো সাইবার অ্যাটাক পরিচালনা করার মাধ্যম হচ্ছে এই বট। এটি এমন এক ধরনের টুল যাকে একই ধরনের কাজ বারবার করার জন্য প্রোগ্রাম করা হয়। অর্থাৎ আপনি প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই ধরনের বটকে পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে আরও অনেক ধরনের কাজ করাতে পারবেন। বর্তমান সময়ে এই ধরনের বটকে অনেক ভয়ংকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য আপনি সাইটে ক্যাপচা ইউজ করতে পারেন।
এসকিউএল ইনজেকশন
আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইটের ডাটাবেস যদি সুরক্ষিত না থাকে তাহলে এই অ্যাটাকের ঝুঁকি বেরে যায়। কারণ হ্যাকার এসকিউএল ইনজেকশন পদ্ধতি ইউজ করে আপনার সাইটের ডাটাবেসে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ ডাটা হাতিয়ে নেয়। এই অ্যাটাকের আরও বড় সমস্যা হচ্ছে হ্যাকার আপনার ডাটাবেস দেখার পাসাপাসি সেখানে পরিবর্তন করতে পারবে। যা আপনার ওয়েবসাইট চিরতরে ধ্বংস করে দিবে এবং আপনার সকল ডাটা হাতছাড়া হয়ে যাবে।
এপিআই অ্যাটাক
ইকমার্স ওয়েবসাইট পরিচালনা করার জন্য সব থেকে বেশি ব্যবহার হয় API, যা সাইটে বিভিন্ন ডাটা শো করে। অনেক বেশি পরিমাণে এপিআই ব্যবহার হওয়ার কারণে এপিআই অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। কারণ ইনফেক্টেড এপিআই ইউজ করার মাধ্যমে সাইটের সিকিউরিটি দুর্বল হয় এবং ব্যাকডোর তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে হ্যাকারের প্রবেশ পথ হিসেবে কাজ করে।

ই-কমার্সে সাইবার সিকিউরিটির ভূমিকা?
বর্তমান টেকনোলজির যুগে সাইবার সিকিউরিটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে ডাটা লিক হয়ে যাচ্ছে। এতে পার্সোনাল ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে ইকমার্স ওয়েবসাইট সব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট এ সেল বৃদ্ধির ১৫ টি সাধারণ কিন্তু অপ্রতিরোধ্য উপায়
প্রথমে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে একটি ভালো ও উন্নতমানের হোস্টিং সেবা। ইকমার্স ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য বিশেষজ্ঞরা ক্লাউড হোস্টিং ইউজ করার পরামর্শ দেয়। কারণ এই ধরনের হোস্টিং এ সাইটে অতিরিক্ত ভিজিটর আসলে চাপ নেওয়ার সক্ষমতা থাকে। পাশাপাশি সাইটের জন্য সর্বোত্তম সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়।
ইকমার্স ওয়েবসাইটে সিকিউরিটি ব্যবস্থা ভালো থাকলে যে যে বিষয়ে নিশ্চিত থাকা যায় তা নিচে দেওয়া হলো।
- কাস্টমারের বিশ্বাস অর্জন করা যায়।
- কাস্টমারের ডাটা সুরক্ষিত থাকে।
- রিটার্নিং ভিজিটর বেশি পাওয়া যায়।
- ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকে।
- ওয়েবসাইটের ডাউনটাইম কমে আসে।
- বিভিন্ন সিকিউরিটি রেগুলেশনের সাথে সম্মতি রক্ষা করে।
- কোন লিগ্যাল ইস্যুর সম্মুখীন হতে হয়না।
- কাস্টমারের ডাটা সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি আপনার ডাটা সুরক্ষিত রাখে।
- ২৪/৭ ওয়েবসাইট অনলাইন থাকে।
উপরিউক্ত আলোচনায় ইকমার্স ওয়েবসাইটে সাইবার সিকিউরিটি কেন প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি ই কমার্স সিকিউরিটি কি এবং কি কি কারণে সিকিউরিটি নষ্ট হয় ও সাইবার সিকিউরিটির উপকারিতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হয়েছে।