You are currently viewing কপি রাইটিং কি? কন্টেন্ট রাইটিং,কপিরাইটিং পার্থক্য কি?

আমি যখন ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে অনলাইনে কিছু পড়াশুনা করা শুরু করেছি, তখন একটা শব্দ আমাকে বার বার কনফিউজড করে দিতো, শব্দটা হ’লো কপি রাইটিং। এই কপিরাইটিং কি তা আমি গুগল করার আগে পর্যন্ত ধরেই নিয়েছিলাম যে ‘কপি করে যে লিখা জমা দেওয়া হয় সেটি কপিরাইটিং’। আমি নিজেই যখন এই কপি রাইটিং নিয়ে আসল তথ্যটা জানলাম, অনেক্ষন অবাক হয়ে বসে ছিলাম। আর মনে মনে বললাম ‘হাউ ডাম্ব আই ওয়াজ’। মানে পুরো ৩৬০ ডিগ্রি উলটো বুঝে বসে ছিলাম এত দিন। সে যাই হোক আমার ধারণা তো আমি ক্লিয়ার করে নিয়েছি। এবার তা আপনাদের জানানোর পালা। আজকে আমি কপি রাইটিং নিয়ে কিছু তথ্য দিবো যা আপনাদের কপিরাইটিং কি তা বুঝতে সহায়তা করবে বলে আশা করছি। 

কপি রাইটিং কি? 

কপি রাইটিং এর কপি শব্দটা ব্যবহার করা হয় মূলত ওয়েব পেইজ, অ্যাডস, প্রমোশনাল মেটেরিয়ালস ইত্যাদিকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে। 

কপি রাইটিং হচ্ছে একটি লেখালেখির একটি পেশা। লেখাকে মার্কেটিং এবং অ্যাডভার্টাইজিং এর উদ্দেশ্যে লেখাকে বলা হয়ে থাকে কপি রাইটিং। মূলত মানুষকে কোন কিছু করিয়ে নেয়ার মত যে লেখা ব্রান্ড এর মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং মানুষকে ইনফ্লুয়েন্স করার লক্ষ্যে লেখা হয় তাকে বলা হয় কপি রাইটিং। 

কপিরাইটিং মার্কেটিং এ একটি গুরুত্বপূর্ন এবং জটিল বিষয়। কপি রাইটিং অনেক কিছুই হতে পারে। কপি রাইটিং বিষয়টি হচ্ছে মূলত কাউকে কোন কিছু বুঝিয়ে শুনিয়ে কোন জিনিস কিনিয়ে নেওয়ার মত ব্যাপার। অর্থাৎ বাস্তব জীবনে আমরা আমাদের চার পাশে এই ধরণের ঘটনা দেখতে পাই। যদি আরো স্বচ্ছ করে বলার চেষ্টা করি, তাহলে বলতে পারি- এটি অনেকটা আমাদের বন্ধুদের থেকে কোন জিনিসের ভালো সুনাম শুনে ঐ পন্য কিনে নেওয়ার মত বিষয়।

যেমন ধরুন আপনি আপনার নিকট কোন বন্ধু থেকে ভালো একটি হেডফোনের গল্প শুনলেন। সে এমন ভাবে বললো যা আপনার কাছে খুবই ভালো লাগলো এবং আপনি চিন্তা করছেন এবার এই হেডফোনটা কিনে ফেলা উচিত। এটি একটি মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। যদি এইটুকু বুঝে থাকেন তাহলে আপনি কপি রাইটিং কি তা’ও বুঝে গেছেন। 

কপি রাইটিং হচ্ছে- লেখাকে এমন ভাবে লেখা- যাতে করে যে পড়ছে সে সহজে আকৃষ্ট হয়ে যায়। অনেকটা আপনার বন্ধুর মত করে কথা বলার মত। যত সুন্দর করে আপনার বন্ধু আপনাকে বুঝিয়েছে বাস্তব জীবনে, লেখার মাধ্যমে এটি করা কিন্তু অত সহজ কিছু নয়। তাই’তো ডিজিটার মার্কেটিং এর প্রসারে ফলে দিন দিন কপি রাইটারদের কদর বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এটি একটি পেশা হয়ে পড়েছে, ভালো মানের স্যালারি হওয়ায় অনেকে ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ারে  কপি রাইটিং কে বেছে নিচ্ছে। 

মূলত লেখার শৈল্পিকতা দিয়ে মার্কেটিং করার উদ্দেশ্যে মানুষকে প্রলুব্দ, আকৃষ্ট, মুগ্ধ করাতে পারাটাই হচ্ছে কপি রাইটিং।আশা করি পাঠক কপি রাইটিং কি সে সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পেয়েছে। এবার আমরা কপি রাইটিং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবো। 

কারা কপিরাইটারদের ব্যবহার করে থাকে?

কারা কপিরাইটারদের ব্যবহার করে থাকে?

এখন আমি যদি কপিরাইটিং কে সব বিজনেস এর প্ল্যান বা মূল বলে থাকি কারো নিশ্চয়ই আপত্তি থাকার কথা না। কারণ আমরা সকলে এখন বুঝে গিয়েছি কপিরাইটিং কি এবং কোথায় ব্যবহার করে থাকে। 

কপি রাইটার ছাড়া কোন বিজনেস তাদের কোন মেসেজ (মার্কেটিং এর উদ্দেশ্যে পাঠানো মেসেজ কে বুঝানো হচ্ছে) পাঠাতে পারেনা তাদের কাস্টমারদের কাছে। কারন যেমন তেমন মেসেজ পাঠালে সম্ভাব্য ক্রেতারা আকৃষ্ট হবে না। তাই সকল বিজনেজ ইন্ডাস্ট্রির কপিরাইটারদের প্রয়োজন। অন্তত পক্ষে আকর্ষনীয় করে মেসেজ পাঠানোর জন্য হ’লেও কপিরাইটারদের প্রয়োজন।

কপিরাইটিং শুধু বিজনেসম্যানদের জন্য এমন কিন্তু নয়। এটি সকল ধরনের ওয়েবসাইটের, নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনের জন্য, যে কোন সার্ভিস প্রোভাইডার দের জন্য প্রয়োজন পড়ে। তাদের সকলের কপিরাইটার দের প্রয়োজন হয়। 

চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক কারা কারা ব্যবহার করে থাকে কপিরাইটাদের-

  • ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন এবং ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম
  • মেডিকেল সাপ্লাই এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি 
  • ফুড ম্যানুফ্যাকচারার 
  • নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন
  • লোকাল সার্ভিস প্রোভাইটার যেমন- কার মেকানিক্স, হেয়ার সেলুন 
  • ফিটনেস, পার্সোনাল ইমপ্রুভমেন্ট টাইপের কোচ
  • ডেন্টিস্ট, মেডিকেল ডক্টর, এবং অন্যান্য হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার
  • সেলফ অথর এবং স্পিকার
  • সাপ্লিমেন্ট এবং অন্যান্য কমপ্লিমেন্টারি হেলথ প্রোডাক্ট প্রোডিউসার

কোথায় কোথায় কপিরাইটিং দেখা যায়

আমরা সবসময় কপিরাইটিং এর মধ্যে বসবাস করছি। কিন্তু আমরা শুধু জানিনা যে কোনটিকে আসলে সবাই কপিরাইটিং বলছে। আশা করি আজকের কনটেন্ট আপনি যদি পুরো পড়ে থাকেন তাহলে কপি রাইটিং সম্পর্কে সম্পূর্ণ পরিষ্কার ধারণা নিতে পারবেন। আমরা কপিরাইটিং দেখে থাকি- বিলবোর্ডে, ব্রাউজারে, ক্যাটালগে,( টিভিতে অ্যাড এর সময় সে গান শুনি তার লিরিক্স ), ম্যাগাজিনে, খবরের কাগজে অ্যাডভার্টাইজমেন্টে, সেলস লেটারে, টেলিভিশনে এবং রেডিওতে কমার্সিয়াল অ্যাডের জন্য লেখাকে, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে। অনেক গুলো বলে ফেলেছি দেখেছেন? হ্যাঁ, এই সকল যায়গায় মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য নিয়ে যে লেখা লেখা হয় তাকে বলা হয় কপি রাইটিং।

কপিরাইটার হতে কি যোগ্যতা লাগে 

একজন কপি রাইটার হতে হলে অন্তত পক্ষে ইংরেজি, অ্যাডভার্টাইজিং , জার্নালিজম, অথবা মার্কেটিং বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী থাকা চাই। এটি হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব-নিকাশ। কিন্তু বর্তমান সময়ে ফ্রীল্যান্সার দের অনেক চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে তাদের এই সকল প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব অনেক ক্লায়েন্ট করেন না। ফ্রীল্যান্সারদের পূর্ব কাজের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক ক্লায়েন্ট ফ্রীল্যান্সার হায়ার করে থাকেন। 

২০১৯ সালে পে-স্কেল ডট কম ওয়েবসাইটের চালানো জরিপ থেকে জানা যায়- একজন কপি রাইটারের বাৎসরিক স্যালারি রেঞ্জ ৩৫,০০০ – ৭৩,০০০ ডলারের মত। 

বিখ্যাত কপিরাইটার 

জন ইমোরি পাওয়ারস (১৮৩৭-১৯১৯) নামে এক মার্কিনীকে বলা হয়ে থাকে ইতিহাসের সর্বপ্রথম একজন ফুল-টাইম কপি রাইটার। তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইনফ্লুয়েনশিয়াল কপি রাইটার। অর্থাৎ লেখনির মাধ্যমে খুব সহজে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারতেন। তার এই কাজ মার্কেটিং জগতে বিশাল এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সময় অনেক গড়িয়েছে। বেড়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সি। ফলে বর্তমানে প্রচুর পরিমানে কপিরাইটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে অনেক ক্রিয়েটিভ আর্টিস্টকে কপিরাইটার হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। 

কন্টেন্ট রাইটিং এবং কপিরাইটিং এর মধ্যে পার্থক্য কি? 

কন্টেন্ট রাইটিং এবং কপিরাইটিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?

আমরা অনেকে কপিরাইটিং এবং কন্টেন্ট রাইটিং এই দু’টি বিষয়কে একত্র করে ফেলি। হ্যাঁ, এই দুটোর মাঝে যোগ-সদৃশ্য নিশ্চয়ই আছে কিছুটা, তবে খুব একটা বেশি নয়। সেই যাই হোক, আমরা আপনাকে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছি-

কপি রাইটিং মূলত কোন কিছুর মার্কেটিং এবং প্রমোশনাল পন্যের জন্য। আর অপর দিকে, কন্টেন্ট রাইটিং হচ্ছে ইনফরমেশনাল / তথ্যমূলক রাইটিং, ওয়েবসাইটের ইডিটোরিয়াল পেইজ, ব্লগ পোস্ট, বা আর্টিকেল পেইজ ইত্যাদি। কিছু কিছু লেখা আছে যেগুলো শুধুমাত্র ইনফরমেশন বহন করে, কোন মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য থাকে না, তাকে কন্টেন্ট রাইটিং বলে থাকে। আর যে লেখা কোন মার্কেটিং এর উদ্দেশ্যে অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট পন্যের জন্য প্ররোচিত করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়ে থাকে সেটিকে বলা হয়ে থাকে কপি রাইটিং। 

অনেক বিশ্লেষক মনে করে থাকেন- কন্টেন্ট রাইটিং হচ্ছে কপি রাইটিং এর একটি সিম্পল ফর্ম। কারন এই দু’ ধরণের লেখার উদ্দেশ্য একই। কপি রাইটিং এবং কন্টেন্ট রাইটিং এই দু’টো একই লক্ষ্য যেমন রিডারকে আরো বেশি আকৃষ্ট করা এবং তাদের দিয়ে কোন একশন (এখানে একশন শব্দ দ্বারা কোন কিছু কিনিয়ে নেওয়াকে বোঝানো হচ্ছে) করিয়ে নেওয়া। 

কপিরাইটিং এর ক্ষেত্র কি প্রসারিত হচ্ছে? 

হ্যাঁ, বর্তমান সময়ে কপিরাইটিং মার্কেটিং জগতে বিশাল একটি জায়গা দখল করে আছে। 

“ভালো মানের কপিরাইটার ছাড়া আমাদের কোন বিজনেস চলতে পারে না”

                                                        -জুলিয়া গোথ, দ্যি অক্সফোর্ড ক্লাব 

কপিরাইটিং মার্কেটিংকে একটি স্ট্যান্ডার্ড মর্ডাণ মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে কপিরাইটারদের আরো বেশি পরিমানে প্রয়োজন। কারণ এই ডিজিটাল, মডার্ণ, এবং তথ্য প্রযুক্তির যুগে মানুষ প্রতিনিয়ত অনেক রকম মার্কেটিং রিলেটেড বিজ্ঞাপন তাদের ফোনে পাচ্ছে, ফলে এইখানেও বেশ ভালো রকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আর প্রতিযোগিতা বেড়ে চলেছে মানে হচ্ছে- আরো প্রলুব্দকর লেখা মার্কেটিং জগতে প্রয়োজন। যারা এই ধরনের বিমোহিতকর লেখা  লেখতে পারবে তাদের মার্কেটিং জগতে তাদের বেশি পরিমানে চাহিদা বাড়বে। তাই বলা যায় প্রতিযোগিতা যত বাড়ছে কপিরাইটারদেরও দিন দিন চাহিদা বাড়ছে।

এবার আমি আপনাদের কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিবো – কেন এটি আধুনিক বিজনেসের একটি অপরিহার্য অংশে পরিনত হয়েছে এই সম্পর্কে- 

  • প্রায় ৫৬% এর অধিক মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের সম্ভাব্য (পটেনশিয়াল)  কাস্টমারদের নিকট সাধারণ মেইল পাঠাতে কপিরাটারদের সহায়তা নিয়ে থাকেন। 
  • ৮১% এর অধিক কোম্পানি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাখেন যে- আগামী বছর থেকে তারা ডিরেক্ট মেসেজ পাঠানোর জন্য কপিরাইটারদের সাহায্য নেবে। 
  • ডিজিটাল জগতে ৯০% এর অধিক অর্গানাইজেশন অনলাইন কন্টেন্ট মার্কেটিং ব্যবহার করে থাকেন। এই কন্টেন্ট মার্কেটিং এর জন্য কপিরাইটারদের প্রয়োজন পড়ে। 
  • ৬৭% এর অধিক বিজনেজ ওনার তাদের অনলাইন কন্টেন্ট ক্রিয়েট করার জন্য কপিরাইটারদের হায়ার করে থাকে।

এই জরিপ থেকে ধারনা করে নেওয়া যায় কতটা গুরুত্বপূর্ন এই কপিরাইটিং। বলা যায় বর্তমান সময়ে কপিরাইটারদের প্রয়োজন অনেক বেশি এবং এটির চাহিদা সহজে কমবেও না যতদিন অবধি মার্কেটিং/বিজনেস থাকবে। 

যারা ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে ‘কপি রাইটিংকে’ নিতে চাচ্ছেন তাদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে আজকের লেখা এখানে শেষ করছি। ভালো থাকবেন পাঠক। কন্টেন্টটি যদি আপনাদের বিন্দুমাত্র সাহায্য করে থাকে তবে সেটিই আমাদের একমাত্র সার্থকতা। 

Leave a Reply