You are currently viewing ক্লাউডফ্লেয়ার কি? ক্লাউডফ্লেয়ার কিভাবে কাজ করে?

ওয়েবসাইট ওনার হিসেবে আমাদের সাইটের স্পীড এবং সিকিউরিটি নিয়ে সচেতন থাকতে হয়। একটি ওয়েবসাইটে যেমন অপ্রয়োজনীয় ভিজিটর আসতে পারে তেমনি অনেক ক্ষতিকর ভাইরাস অ্যাটাক ও হতে পারে। আমরা জানি যে ইনভ্যালিড ক্লিকের কারণে যেমন অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হয় তেমনি ওয়েবসাইট গুগল থেকে র‍্যাঙ্ক হারায়। এসব সমস্যা থেকে ম্যানুয়ালি সেফ থাকা একটু কঠিন এবং এতে অনেক সময় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর থেকে পরিত্রানের জন্য আমরা সিডিএন ইউজ করি যা ওয়েবসাইটের জন্য বাড়তি সিকিউরিটি লেয়ার। বর্তমানে অনেক সিডিএন সার্ভিস প্রচলিত থাকলেও ক্লাউডফ্লেয়ার এদের মধ্যে জনপ্রিয়। আমাদের আজকের লেখায় আমরা ক্লাউডফ্লেয়ার কি এবং কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক।

ক্লাউডফ্লেয়ার কি?

সিডিএন হিসেবে বর্তমানে যতগুলো সার্ভিস প্রচলিত আছে ক্লাউডফ্লেয়ার তাদের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয়। একটি সিডিএন এ যে সকল ফিচার থাকা দরকার ক্লাউডফ্লেয়ারে তার থেকেও অনেক কিছু বেশি আছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে তাদের মোট ২০০ শহরে ক্লাউডফ্লেয়ার ক্যাশ সার্ভা র রয়েছে। ক্লাউডফ্লেয়ার সার্ভিস ইউজ করে এমন ইন্টারনেট প্রোপার্টির সংখ্যা বর্তমানে ২৫ মিলিয়নের বেশি। প্রতি সেকেন্ডে তারা ২১ মিলিয়ন এইচটিটিপি রিকোয়েস্ট হ্যান্ডেল করে। যার কারণে তারা অনেক বড় বড় ডিডস অ্যাটাক ম্যানেজ করতে পারে।

ক্লাউডফ্লেয়ার তাদের সার্ভিস দেওয়ার জন্য রিভার্স প্রক্সি সিস্টেম ইউজ করে। ক্লাউডফ্লেয়ার এর ডিএনএস স্পীড গুগলের ডিএনএসের থেকেও অনেক বেশি। তাদের ডিফল্ট ডিএনএস 1.1.1.1 এবং এটি সম্পূর্ণ ফ্রী। এই ডিএনএস ইউজ করার জন্য আপনার ডোমেইন কন্ট্রোল প্যানেলে ক্লাউডফ্লেয়ারের নেম সার্ভার অ্যাড করতে হবে ।

তারা সিডিএন সার্ভিস দেওয়া বাদেও ডিডস অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য সিকিউরিটি দিয়ে থাকে। বর্তমানে তাদের সিডিএন সার্ভিস ছাড়াও চারটি আলাদা আলাদা সার্ভিস আছে। যেগুলো যথাক্রমে ডিডস প্রোটেকশন, টিমস, ওয়ার্কারস, পেজেস। এখানে ডিডস ওয়েবসাইট প্রোটেকশন দিয়ে থাকে, টিমস একটি ডেডিকেটেড ক্লাউডফ্লেয়ার সিকিউরিটি অথেনটিকেশন সার্ভিস, ওয়ার্কারস একটি সার্ভারলেস কম্পিউটিং সিস্টেম এবং পেজেস একটি ফ্রন্টএন্ড এনভায়রমেন্ট সিস্টেম যা পরিচালিত হয় ক্লাউডফ্লেয়ারের ডাটা সেন্টার থেকে।

ক্লাউডফ্লেয়ার কিভাবে কাজ করে?

আমরা যখন ওয়েব ব্রাউজারে কোন ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস এন্টার করি তখন তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভারে পেজ রিকোয়েস্ট করে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এই রিকোয়েস্ট সরাসরি সার্ভারে চলে যায় এবং সেখান থেকে সরাসরি ক্লাইন্ট সার্ভারে রিটার্ন আসে। কিন্তু ক্লাউডফ্লেয়ার ইউজ করলে সেই রিকোয়েস্ট ক্লাউডফ্লেয়ারের ক্যাশিং সার্ভারে উক্ত পেজের ক্যাশ করা ভার্সন থেকে রেজাল্ট শো করে।

এতে একসাথে অনেক গুলো রিকোয়েস্ট একটি সেম পেজে করলেও তা সরাসরি মেইন সার্ভারে কোন রিকোয়েস্ট পাঠায় না। এতে সার্ভার ক্রাশ করার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায় এবং সার্ভারের অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ খরচ হয়না। এখানে কনটেন্ট যেহেতু ক্যাশ সার্ভার থেকে লোড করা হয় এবং লোকাল ক্যাশ সার্ভার থেকে ক্লাইন্ট ডিভাইসে শো করে সেহেতু প্রতিটি পেজ অতি দ্রুত লোড হয়। ক্লাউডফ্লেয়ার সরাসরি ওরিজিন সার্ভারের মাধ্যমে কাজ না করে এজ সার্ভারের মাধ্যমে কাজ করে। এতে ওরিজিন সার্ভারের উপর চাপ কমে এবং ওয়েবসাইটের স্পীড, সিকিউরিটি এবং ব্যান্ডউইথ সঠিক ভাবে মেইন্টেইন করা সম্ভব হয়।

ক্লাউডফ্লেয়ার জন্ম কিভাবে?

ক্লাউডফ্লেয়ার তার যাত্রা শুরু করে ২০০৯ সালে। এটি একটি ওয়েবসাইট অবকাঠামো এবং ইন্টারনেট সিকিউরিটি কোম্পানি। ক্লাউডফ্লেয়ার একটি পাবলিক কোম্পানি যারা সিডিএন, ইন্টারনেট সিকিউরিটি সার্ভিস প্রদান করে। এর হেডকোয়ার্টার সান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। ২০২০ সাল নাগাদ এর মোট রেভিনিউ ৪৩১ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে মোট ১০৬৯ জন কর্মী ক্লাউডফ্লেয়ারে কাজ করছে।

ম্যাথু প্রিন্স, লি হলোয়ে, মিশেল জ্যাটলিন মিলে ক্লাউডফ্লেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সকল ওয়েবসাইট কে একটি বাড়তি সিকিউরিটি প্রদান করা যাতে সাইট গুলো সব সময় অ্যাক্টিভ এবং নিরাপদে থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত তাদের সার্ভিস অন্যান্য সিডিএন সার্ভিসের থেকে অনেক উন্নত এবং ফাস্ট। বিশ্বের সকল বড় বড় শহরে সার্ভার সেটআপ করে তারা ওয়েবসাইট দ্রুত লোড হওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

ক্লাউডফ্লেয়ার ওয়েবসাইটে ব্যবহারের সুবিধা কি?

ক্লাউডফ্লেয়ার ওয়েবসাইটে ব্যবহারের সুবিধা কি?

ক্লাউডফ্লেয়ার ইউজ করার জন্য আপনার কোন কোডিং নলেজ এর প্রয়োজন পরবেনা। এছাড়া আপনি তাদের ফ্রী প্যাকেজ ইউজ করেই একটি ওয়েবসাইটের মোটামুটি সকল কাজ করে ফেলতে পারবেন। ক্লাউডফ্লেয়ারের বড় সুবিধা হলো আপনি একে যে কোন প্লাটফর্মে ইউজ করতে পারবেন। যেমন ব্লগার, মেজেন্টো, ওয়ার্ডপ্রেস সহ যে কোন স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটে এটি ইউজ করা যায়।

ক্লাউডফ্লেয়ার ড্যাশবোর্ড অনেক উন্নত এবং সহজ ন্যাভিগেশন সিস্টেমে অপারেট করা যায়। ড্যাশবোর্ডে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের সকল ধরনের অ্যানালিটিক্স দেখতে পারবেন। যেমন কতো গুলো ভিজিটর সাইট ব্রাউজ করছে, কতো গুলো রিকোয়েস্ট সাইটে হিট করছে ইত্যাদি ডাটা দেখা যায়।

সাইটে এসএসএল অ্যাড করা যায় যা প্রতিটি রিকোয়েস্ট এনক্রিপ্ট করে ডাটা আদান প্রদান করে। আপনি চাইলে ফায়ারওয়াল ইউজ করে সাইটের সিকিউরিটি মেইন্টেইন করতে পারবেন। কোন নির্দিষ্ট আইপি বা আইপি গ্রুপ ব্ল্যাকলিস্ট করে রাখা যায়।

ওয়েবসাইটের স্পীড অপ্টিমাইজ করা যায় যা প্রতিটি পেজ স্পীড দ্রুত করা বাদেও ওভারঅল সাইটের স্পীড বৃদ্ধি করে। স্পীড বৃদ্ধি করার জন্য সাইটের ইমেজ, সিএসএস, যেএস, এইচটিএমএল মিনিফাই করা যায়। এতে সাইটের ফাইল সাইজ কমে যায় এবং সাইট অনেক দ্রুত লোড হতে পারে।

আপনি এই ড্যাশবোর্ড থেকে নেটওয়ার্ক রুল ম্যানেজ করতে পারবেন। এই সব গুলো সার্ভিস আপনি ওয়েবসাইট বাদেও অ্যাপের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন।

ক্লাউডফ্লেয়ারের দুইটি স্পেশাল প্রোজেক্ট আছে যা বিশেষ কিছু কাস্টমারের জন্য তৈরি করা। প্রোজেক্ট দুইটির নাম প্রোজেক্ট গ্যালিলিও এবং অ্যাথেনিয়ান প্রোজেক্ট। চলুন প্রজেক্ট দুইটি সম্পর্কে একটু জেনে নেই।

অ্যাথেনিয়ান প্রোজেক্ট: এই প্রোজেক্ট তৈরি করার পিছনে মূল লক্ষ স্থানীয় সরকারকে সর্বোচ্চ মানের ইন্টারনেট সুরক্ষা দেওয়া। অর্থাৎ স্থানীয় পর্যায়ে যে সকল নির্বাচন এবং নির্বাচন সম্পর্কিত ভোটার রেজিস্ট্রেশন করা হয় সে সকল তথ্য গোপন ও নিরাপদ রাখতে এই প্রোজেক্ট কাজ করে।

প্রোজেক্ট গ্যালিলিও: এই প্রোজেক্ট দ্বারা সাংবাদিকতা, হিউম্যান রাইটস, গণতন্ত্র ইত্যাদি সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বা ওয়েবসাইট কে সুরক্ষা প্রদান করা হয়। তারা এধরনের সার্ভিস একদম ফ্রীতে দিয়ে থাকে। বর্তমানে অনেক ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ তাদের এই প্রোজেক্ট দুইটি ইউজ করে।

ক্লাউডফ্লেয়ার সমালোচনা

নিঃসন্দেহে ক্লাউডফ্লেয়ার সবথেকে বিশ্বস্ত একটি কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক সার্ভিস। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তাদের নিয়ে অনেক ধরনের সমালোচনার সৃষ্টি হয়। যেমন অনেক সমালোচক বলেন যে তারা তাদের পলিসির বাইরে সার্ভিস প্রদান করে। যেমন টেক্সাস এবং নিউজিলান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে বন্দুক হামলার সাথে জড়িত 8chan নামক একটি ফোরাম কে তারা সার্ভিস প্রদান করে। পরে অবশ্য ক্লাউডফ্লেয়ারের সিইও 8chan কে সাপোর্ট দেওয়া বন্ধ করে দেন।

এছাড়া ২০১৬-১৭ সালে “CloudBleed HTTPS traffic leak” নামক অ্যাটাকের শিকার হয়ে ৭ মিলিয়ন ইউজার ডাটা অনলাইনে লিক হয়ে যায়। এরপর ক্লাউডফ্লেয়ার নিয়ে সমালোচনা আরও তীব্র হতে থাকে। কিন্তু তারা তাদের টেকনোলজি আরও উন্নত ও শক্তিশালী করে দিন দিন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। 

সিডিএন এতো এতো সুবিধা থাকার কারণে বর্তমানে অনেক ছোট এবং বড় ওয়েবসাইট এই সার্ভিস ইউজ করা শুরু করে দিয়েছে। সিডিএন একই সাথে যেমন সাইট স্পীড দ্রুত করে তেমনি সাইটের সিকিউরিটি রক্ষা করে। এই আর্টিকেলে বেস্ট সিডিএন ক্লাউডফ্লেয়ার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এর সাথে সাথে ক্লাউডফ্লেয়ার কীভাবে অন্য সকল সিডিএন সার্ভিস থেকে ভালো তা তুলে ধরা হয়েছে। আশাকরি লেখাটি পড়ে ক্লাউডফ্লেয়ার নিয়ে সকল প্রকার কনফিউশন দূর হয়ে গেছে। সিডিএন বা ক্লাউডফ্লেয়ার নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন ধন্যবাদ। 

Leave a Reply