প্রযুক্তি আমাদের জীবন আগের থেকে অনেক সহজ ও গতিশীল করে তুলেছে। এর ধারাবাহিকতায় শপিফাই ইকমার্স দুনিয়ায় একটি রেভুলেশন এনে দিয়েছে। অর্থাৎ শপিফাই ইউজ করে যেমন সহজেই একটি ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় তেমনি কোন প্রকারের প্রোগ্রামিং নলেজ ছাড়াই এটি পরিচালনা করা যায়। পাশাপাশি আপনি আপনার স্টোরের সেল থেকে শুরু করে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সবকিছুই ঝামেলামুক্তভাবে করতে পারবেন। আমাদের আজকের লেখায় আমরা শপিফাই কি এবং এই সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
Table of Contents
শপিফাই কি
শপিফাই হচ্ছে একটি কানাডিয়ান মাল্টিন্যাশনাল ইকমার্স কোম্পানি। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই কোম্পানিকে ইকমার্সের একটি কমপ্লিট সল্যুশন বলা হয়। যদিও ওয়ার্ডপ্রেসের জনপ্রিয়তার কারণে উকমার্স অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে সময়ের সাথে সাথে শপিফাই তার স্বতন্ত্র সুবিধার কারণে অনেক এগিয়ে গিয়েছে।
এর পেছনে কারণ হচ্ছে এই প্লাটফর্ম অনেক সাজানো গোছানো থাকে। অন্যদিকে এই সিস্টেম কাজ করে পয়েন্ট অফ সেল (POS) পদ্ধতি ব্যবহার করে। এখানে আপনি আপনার মনমতো ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার পাশাপাশি সহজেই প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট করতে পারবেন। শপিফাইতে প্রিমিয়াম থিম রয়েছে তবে ফ্রীতে অনলাইন ষ্টোর তৈরি করার জন্য অনেক ফ্রী থিম পাবেন।
থিম ইন্সটল করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অ্যাপ ইন্সটল করা অনেক সহজ। এখানে আপনি এক ক্লিকেই থিম ও অ্যাডঅন ইন্সটল করে কাজ শুরু করতে পারবেন। এই প্লাটফ্রম সম্পূর্ণটা তৈরি হয়েছে হেডলেস কমার্স কনসেপ্টের উপর নির্ভর করে। যে কারণে এখানে অনেক বেশি ফ্লেক্সিবিলিটি রয়েছে। আপনি চাইলে নিজস্ব ডেভেলপার দিয়ে ষ্টোরফ্রন্ট তৈরি করে নিতে পারেন অথবা তাদের অ্যাপ স্টোর থেকে থিম ও প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইন্সটল করে ফুল ফাংশনাল শপিফাই স্টোর তৈরি করতে পারবেন।

শপিফাই শিখতে কতদিন লাগে
এটা নির্ভর করবে আপনি শপিফাই সম্পর্কে কত টুকু শিখতে চাচ্ছেন তার উপরে। আপনি যদি এই প্লাটফর্ম ইউজ করে অনলাইন স্টোর সেটআপ করতে চান তাহলে এক ধরনের সময় লাগবে। অন্যদিকে আপনি যদি শপিফাই এর জন্য অ্যাপস বা থিম তৈরি করতে চান তাহলে এক ধরনের সময় লাগবে। নিচে শপিফাই শেখা বলতে আমরা আসলে কি কি বুঝি সে সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হলো।
- স্টোর সেটাপ
- থিম কাস্টমাইজেশন
- পেইজ বিল্ডার
- পেমেন্ট গেটওয়ে সেটাপ
- থিম ডেভেলপমেন্ট
- অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
- শিপিং অ্যান্ড ট্যাক্সেস
- ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট
- অ্যাপ্লিকেশান ইন্টিগ্রেশন
- আনালিটিক্স
- কাস্টমার সার্ভিস
এখানে কিছু ব্যাসিক বিষয় আছে যা শিখতে আপনার বড়জোর ১ মাসের মতো সময় লাগবে। সেখার সময় আপনাকে শপিফাইের ড্যাশবোর্ড এর উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি একটি ফুল রানিং অনলাইন স্টোর এই ড্যাশবোর্ড থেকে মেইন্টেইন করতে পারবেন। অতএব সময় নিয়ে আপনাকে শপিফাই এর ব্যাসিক গুলো ভালো করে শিখে নিতে হবে।
আপনার যদি কোন ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ বা ছোট ওয়েবসাইট ম্যানেজ করার অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে শপিফাই ড্যাশবোর্ড শিখতে বেশি সময় লাগবে না। অন্যদিকে অ্যাপ বা থিম ডেভেলপমেন্ট শিখতে হলে আপনাকে বেশি সময় দিতে হবে। সাধারণত শপিফাই থিম ডেভেলপমেন্টে শেখার জন্য আপনাকে ডেডিকেটেড ভাবে কমপক্ষে ৬ মাস সময় দিতে হবে।
পাশাপাশি আপনার প্রোডাক্ট অ্যাড করার পর টা প্রোমোশন ও সেল করা পর্যন্ত আপনাকে অনেক স্ট্রাটেজি অনুসরণ করতে হবে। না হলে অনলাইন স্টোর তৈরি করার প্রধান উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এই কারণে একজন শপিফাই এক্সপার্ট হওয়ার জন্য আপনাকে নিয়মিত শেখার উপরেই থাকতে হবে।
কিভাবে শপিফাই ডোমেইন কানেক্ট করব?
শপিফাই ইউজ করার জন্য সুবিধা বা অসুবিধা জেটাই বলেন এখানে আপনি আলাদা হোস্টিং ইউজ করতে পারবেন না। অর্থাৎ শপিফাই ইউজ করে অনলাইন ষ্টোর তৈরি করার জন্য আপনাকে তাদের দেওয়া হোস্টিং ইউজ করতে হবে। তবে আপনি চাইলে কাস্টম ডোমেইন অ্যাড করতে পারবেন। নিচে কীভাবে শপিফাই ডোমেইন অ্যাড করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেওয়া হলো।
প্রথমে আপনার শপের জন্য পছন্দমতো একটি কাস্টম ডোমেইন কিনুন। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া রিজনেবল প্রাইসে ডোমেইন কেনার জন্য আপনি আইটিনাট থেকে নিতে পারেন। এখানে রিজনেবল দামে ২৪/৭ কাস্টমার সাপোর্ট সহ সকল ধরনের ডোমেইন কিনতে পারবেন।
ডোমেইন নেওয়া হয়ে গেলে আপনাকে উক্ত ডোমেইন শপিফাইের সাথে কানেক্ট করতে হবে। এখানে আপনি DNS এর মাধ্যমে অথবা ম্যানুয়ালি A রেকর্ড ইউজ করে ডোমেইন কানেক্ট করতে পারবেন। তবে এই ক্ষেত্রে আপনার যে যে টেকনিক্যাল ডাটা ইউজ করতে হবে টা নিচে দেওয়া হলো।
- শপিফাই IPv4 অ্যাড্রেস “23.227.38.65”
- শপিফাই IPv6 অ্যাড্রেস “2620:0127:f00f:0005:0000:0000:0000:0000”
- “www” CNAME রেকর্ড “shops.myshopify.com.”
ডোমেইন অ্যাড করার সময় আপনাকে ডাটা গুলো ডোমেইন ম্যানেজমেন্টে অ্যাড করে নিতে হবে। নাহলে ডোমেইন কানেক্ট হবে না এবং সাইট কাজ করবে না। উপরিউক্ত পদ্ধতি ইউজ করে সহজেই আপনার শপিফাই ওয়েবসাইটে আপনার কাঙ্ক্ষিত ডোমেইন অ্যাড করতে পারবেন।

শপিফাই ড্রপশিপিং কি
ড্রপশিপিং হচ্ছে একটি আধুনিক ব্যবসায়িক পদ্ধতি। এখানে আপনি কোন প্রকারের ফিজিক্যাল স্টোরের মালিক না হয়েও অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন। অর্থাৎ এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে কতিপয় ড্রপশিপিং প্রতিষ্ঠান আপনাকে তাদের প্রোডাক্ট অনলাইনে প্রোমোট করে বিক্রি করার উপরে কমিশন দিবে।
যদিও একে অনেকটাই অ্যাফিলিয়েট সিস্টেমের সাথে তুলনা করা যায়। তবে গঠনগত দিক দিয়ে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যাইহোক, ২০১৮ সালের পর থেকে ড্রপশিপিং সিস্টেম বিশ্বব্যাপি অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানে স্বল্পপুঁজিতে ঘরে বসেই মনমত ব্যবসা করা যায়। যে কারণে অল্প সময়ে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
অনলাইন বিজনেসকে এগিয়ে নিতে সেরা ই-কমার্স ট্রেন্ডস
এর বাইরে শপিফাই ড্রপশিপিং ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনা করার জন্য অনেক সহজ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। যে কারণে ড্রপশিপিং করার জন্য সবাই সবার প্রথম শপিফাই কে নির্বাচন করে। কারণ এটি ইউজ করা অনেক সহজ। এখানে ড্রপশিপ করার জন্য যত ধরনের ফিচার প্রয়োজন তার সব আপনি এখানে পাবেন।
অন্যদিকে শপিফাই স্টোর সেটআপ থেকে শুরু করে মেইনটেইন করা অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সকল কাজ আপনি ড্যাশবোর্ড থেকে করতে পারবেন। যে কারণে আপনাকে নতুন কোন লোক প্রয়োজন পড়বে না। অর্থাৎ আপনার ইনভেস্টমেন্ট কম হলেও কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।
শপিফাই থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায়?
শপিফাই ইউজ করে আপনি কয়েকভাবে ইনকাম করতে পারবেন। অ্যাফিলিয়েট থেকে শুরু করে ড্রপশিপিং, অনলাইন স্টোর, প্রোডাক্ট প্রোমোশন ইত্যাদির মাধ্যমে ইনকাম করা যায়। তবে সব থেকে বেশি ইনকাম করার জন্য হয় আপনাকে অনলাইন স্টোর তৈরি করতে হবে অথবা নিজেকে শপিফাই এক্সপার্ট হতে হবে। শপিফাই এক্সপার্ট বলতে অ্যাপ ডেভেলপার এবং থিম ডেভেলপার বোঝানো হয়।
আপনি শপিফাই স্টোরের জন্য প্রিমিয়াম থিম তৈরি করে সরাসরি কাস্টমারের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। অন্যদিকে ফ্রীল্যান্স ডেভেলপার হিসেবে বিশ্বব্যাপি জাদের শপিফাই স্টোর আছে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে চাকরি করার মাধ্যমে নিত্য নতুন ডিজাইনের থিম ডেভেলপ করতে পারবেন।
যাইহোক, ইউরোপের দেশগুলো বর্তমানে ওয়ান প্রোডাক্ট (One Product) বিজনেস আইডিয়ায় মত্ত। অর্থাৎ তারা নির্দিষ্ট একটি প্রোডাক্ট দিয়ে ওয়েবসাইট বানাতে বেশি আগ্রহী। যাকে ইকমার্স এর দুনিয়ায় সেলস ফানেল বা ল্যান্ডিং পেজ বলা হয়। এই ধরনের ওয়েবপেজ বানাতে শপিফাই একটি আদর্শ জায়গা। কারণ এখানে আপনি সহজে পছন্দনিয় থিম ইন্সটল করে কাস্টমাইজেশন করার মাধ্যমে সুন্দর ও কার্যকরী ল্যান্ডিং পেজ তৈরি করতে পারবেন। অনেক ফ্রীল্যান্সার এবং এজেন্সি এই পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিমানে অর্থ উপার্জন করছে।
উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা শপিফাই কি, শপিফাই শিখতে কতদিন লাগে, কিভাবে শপিফাই ডোমেইন কানেক্ট করব, শপিফাই ড্রপশিপিং কি এবং শপিফাই থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা লাভ করেছি।