সিডিএন কি?
কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক এর সংক্ষিপ্ত রূপ হলো CDN. সংক্ষেপে বর্ণনা করতে গেলে সিডিএন হলো একটি সিস্টেম যা ইউজারকে কনটেন্ট ডেলিভারি করে। সিডিএন হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা অনেকটা ওয়েব সার্ভারের মতোই কিন্তু এতে সাধারণ সার্ভারের মতো ফাইল নিজে থেকে স্টোর করা যায় না।
ভিজিটর যে ফাইলগুলো ভিজিট করবে শুধুমাত্র সেগুলোই টেম্পোরারি স্টোর হয়। অর্থাৎ সিডিএন যুক্ত কোন ওয়েবসাইট যদি আপনি ভিজিট করেন, ওই ওয়েবসাইটের একটি কপি দেখতে পারবেন যা মেইন সার্ভার থেকে ক্যাশ করা।
সিডিএন কিভাবে কাজ করে?

ওয়েবসাইটের সকল ডাটা কোন না কোন হোস্টিং সার্ভারে স্টোর থাকে, সেই হোস্টিং সার্ভারের লোকেশন বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে উদাহরণস্বরূপ ধরে নিলাম সার্ভার লোকেশন USA তে যেটা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩,২১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এখন বাংলাদেশ থেকে কোন ইউজার যদি ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে যায় তাহলে ইউজার রিকোয়েস্ট বাংলাদেশ থেকে রাউটিং হয়ে USA সার্ভারে যাবে এবং রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে একই প্রসেস এ ফেরত আসবে এরপর ইউজারের ব্রাউজারে ওয়েবসাইটের ডাটা শো করবে। বাংলাদেশ থেকে USA এর দূরত্ব বেশি হবার কারণে এখানে খুব স্বাভাবিকভাবেই রেসপন্স টাইম বেশি হবে যার ফলে ইউজারের কাছে ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড স্লো হবে।
এবার দেখা যাক, ইউজার যে ওয়েবসাইটি ভিজিট করছে সেই ওয়েবসাইট যদি কোন CDN এর আওতায় থাকে তাহলে ইউজার রিকোয়েস্ট প্রথমবার CDN এর মাধ্যমে সার্ভারে যাবে এরপর থেকে যত রিকোয়েস্ট আসবে তা সরাসরি হোস্টিং সার্ভারে না গিয়ে ইউজারের লোকেশন অনুযায়ী CDN এর কাছের কোন সার্ভার যাবে এবং সেখান থেকে ওয়েবসাইট লোড হবে।
যেমন বাংলাদেশের ঢাকা, চট্রগ্রাম এবং যশোরে ক্লাউডফ্লেয়ার এর সার্ভার রয়েছে, তাই ওই ওয়েবসাইটে যদি Cloudflare CDN থাকে তাহলে ইউজার রিকোয়েস্ট প্রথমবার USA তে গেলেও পরবর্তীতে সেখানে না গিয়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম বা যশোর ইউজারের নিকটবর্তী কোন সার্ভারে যাবে এবং সেখান থেকে ওয়েবসাইটের ডাটা লোড হবে। এর ফলে ইউজারের কাছে ওয়েব সাইট লোডিং স্পিড অনেক ফাস্ট হবে।
CDN এর সুবিধা
- ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড ফাস্ট হয়।
- ব্যান্ডউইথ খরচ কম হয়।
- ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি উন্নত হয়।
- সার্ভার লোড কমায়।
- ওয়েবসাইট ২৪/৭ অনলাইনে রাখে।
- ওয়েবসাইটের এনালাইটিক্স ডাটা পাওয়া যায়।
- ফাইল মিনিফাই করার ফলে সার্ভারের স্টোরেজ সেভ হয়।

জনপ্রিয় কয়েকটি CDN
- Cloudflare
- KeyCDN
- Sucuri
- Akamai
- CacheFly
- Rackspace
- StackPath
- BunnyCDN
- Google Cloud CDN
- Microsoft Azure CDN

ক্লাউডফ্লেয়ার
ক্লাউড ফ্লেয়ার একটি কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (CDN)। বর্তমানে মার্কেটে যে কয়টি জনপ্রিয় CDN রয়েছে তার মধ্যে ক্লাউডফ্লেয়ার অন্যতম। ২০০৯ সালে ম্যাথু প্রিন্স, লি-হোলোওয়ে এবং মিচেল জাটলিন তিনজন মিলে (Project Honey Pot) নামে একটি ওপেন সোর্স প্রজেক্টে কাজ করছিলো তখন তাঁরা ক্লাউডফ্লেয়ার তৈরি করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের (TechCrunch Disrupt) কনফারেন্সে ক্লাউডফ্লেয়ার লঞ্চ করা হয় এবং ২০১১ সালে মিডিয়ার এটেনশন পেয়ে মোটামুটি জনপ্রিয়তা পায়।
ক্লাউডফ্লেয়ার বর্তমানে কতটা জনপ্রিয় চলুন একটা ডাটা দেখা যাক:
- ৭.৫৯ মিলিয়ন ওয়েবসাইট ক্লাউডফ্লেয়ার ব্যবহার করে।
- ৪.১ মিলিয়ন রিয়েল ক্লাউডফ্লেয়ার ইউজার রয়েছে।
- ১১৯,২০৬ জন পেইড ক্লাউডফ্লেয়ার ইউজার রয়েছে।
- USA এর ১,৪৫৯,২৬২ টি ওয়েবসাইট ক্লাউডফ্লেয়ার ব্যবহার করে।
- ক্লাউডফ্লেয়ারের রেভেনিউ এর ৪৯.৩৮% আসে USA থেকে।
- ক্লাউডফ্লেয়ারের বর্তমান ১,৯৩১ জন ফুল টাইম ইমপ্লয়ি আছে।
- ক্লাউডফ্লেয়ারের ১৭% ইউজার ফরচুন ৫০০ কোম্পানী।
- ২০২০ সালে ক্লাউডফ্লেয়ার এর রেভেনিউ ছিলো ৪৩১.০৬ মিলিয়ন ডলার।
- ২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ এ ক্লাউডফ্লেয়ারের রেভেনিউ গ্রোথ ছিলো ৫০.১৮%
- সর্বশেষ ডাটা অনুযায়ী ২০২১ এর Q1 এ ক্লাউডফ্লেয়ার ১৩৮.১ মিলিয়ন রেভেনিউ জেনারেট করেছে।
- যে একাউন্টগুলো বছরে মিনিমাম ১০০,০০০ ডলার পে করে, ক্লাউডফ্লেয়ারের রুলস অনুযায়ী তাঁরা বড় কাস্টমার বর্তমানে ক্লাউডফ্লেয়ারে এমন ৯৪৫ টি বড় কাস্টমার রয়েছে।
ক্লাউডফ্লেয়ার এর কাজ কি?
- ফ্রি SSL সার্টিফিকেট প্রভাইড করে।
- ফায়ারওয়াল এবং ডিডস প্রোটেকশন করে।
- ওয়েবসাইটের অনান্য সিকিউরিটি নিশ্চিত করে।
- ইমেজ অপটিমাইজেশন করে।
- ওয়েবসাইটের হাই পারফরমেন্স নিশ্চিত করে।
- ডাউনটাইমে ওয়েবসাইট অনলাইনে রাখে।
- সার্ভার ব্যান্ডউইথ সেভ করে।
- ডিএনএস ম্যানেজমেন্ট সুবিধা।
- JavaScript, CSS, HTML মিনিফাই করে ওয়েবসাইট অপটিমাইজড করে।
- রিসেন্টলি ক্লাউডফ্লেয়ার লোড ব্যালেন্সিং সুবিধা দেয়া শুরু করেছে।
ক্যাশ কি?
টেম্পোরারি স্টোরেজ ফোল্ডারকে ইন্টারনেটের ভাষায় ক্যাশ বলে। আমরা যখন প্রথমবার কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করি তখন আমাদের কম্পিউটারে ব্রাউজার ইন্সটালেশন ফোল্ডারে একটি টেম্পোরারি ফোল্ডার তৈরি হয়, যেখানে ভিজিট করা ওই ওয়েবসাইটের সকল ডাটা ডাউনলোড হয়ে থাকে। এতে করে পরবর্তীতে ওই ওয়েবসাইট ভিজিট করলে সেই টেম্পোরারি ফোল্ডার থেকে রিসোর্স নিয়ে এসে দ্রুত ব্রাউজারে শো করানো হয়।
ইন্টারনেটের ভাষায় ক্যাশ বলতে কোন ওয়েবসাইটের ফুল কপি মিনিফাই বা অপ্টিমাইজড করে রাখা কে বুঝায়। ক্যাশ করে রাখার সুবিধা হলো এতে ওয়েবসাইট রিসোর্স বার বার সার্ভার থেকে ডাউনলোডের প্রয়োজন হয়না, এতে ওয়েবসাইটের রিসোর্স অতি দ্রুত লোড হয়।