You are currently viewing ডোমেইন হোস্টিং কি? কীভাবে কাজ করে?

বিংশ শতাব্দীতে ওয়েবসাইট আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। ইন্টারনেটের প্রসারের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনের সবকিছু ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে গেছে। আজ ই-কমার্স এর কারণে আমাদের আর মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ঘুরে বাজার করতে হয় না। জামা-কাপড়, ইলেকট্রনিক পণ্য, খাবার সহ প্রায় সব আজকাল ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। অর্ডার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে এসব পণ্য। ওয়েবসাইটের বদৌলতে আমরা আমাদের বিজনেস বা প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি পরিচিত ও সহজলভ্য করতে পারছি। এতে আমাদের ব্যবসায়িক প্রসার ঘটছে এবং মুনাফা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাইহোক, একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে সবার আগে প্রয়োজন পরে ডোমেইন এবং হোস্টিং এর। চলুন ডোমেইন হোস্টিং কি এবং কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করি।

ডোমেইন হোস্টিং কি?

ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য সর্ব প্রথম প্রয়োজন পরে প্ল্যান এবং ইনভেস্টমেন্টের। তারপর শুরু হয় ডোমেইন এবং হোস্টিং এর পালা। চলুন ডোমেইন এবং হোস্টিং কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করি।

ডোমেইন কি?

ডোমেইন অর্থ হলো ওয়েবসাইটের নাম। আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় যে ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করি সে সব ওয়েবসাইটকে আমরা ডোমেইন নেম হিসেবেই চিনি যেমন YouTube, Facebook, Gmail ইত্যাদি। এখন ইউটিউব ওয়েবসাইটে ঢুকতে গেলে আমাদের ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে youtube.com লিখতে হবে facebook.com লিখলে কিন্তু ইউটিউবে যাইতে পারবো না। 

আপাত অর্থে ডোমেইন শব্দের অর্থ হলো ঠিকানা বা জায়গা। ইন্টারনেটের পারিভাষিক অর্থে ডোমেইনকে বলা হয় ওয়েবসাইটের ঠিকানা যা এর হোম পেজ বা অন্যান্য পেজকে নির্দেশ করে। ইন্টারনেটের এর বিশাল দুনিয়া থেকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইট খুঁজে পেতে ডোমেইন নেম সহায়তা করে।

হোস্টিং কি?

হোস্টিং হলো এমন একটি জায়গা যেখানে ওয়েবসাইটের সকল ফাইল জমা থাকে। হোস্টিং যে সার্ভার ভেতরে থাকে সেখানে উন্নত স্টোরেজ সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যা ২৪/৭ ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকে। উক্ত সার্ভারগুলোতে ওয়েবসাইট এর ডাটা গুলো জমা থাকে।

সার্ভার গুলো ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকার কারণে ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই আমরা ফাইল গুলো দেখতে এবং ডাউনলোড করতে পারি। মোটকথা, অনেকগুলো সার্ভার নিয়ে হোস্টিং তৈরি করা হয় যেখানে ওয়েবসাইটের যাবতীয় ফাইল সংরক্ষণ করা থাকে। হোস্টিং গুলো এমন ভাবে কনফিগার করা থাকে যাতে ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ডোমেইন নেম ইউজ করে ফাইল গুলো ভিজিট করা যায়। 

সর্বোপরি, একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য এবং তা ইন্টারনেটে উন্মুক্ত করার জন্য সবার প্রথম প্রয়োজন পরে ডোমেইন এবং হোস্টিং এর। এগুলো ছাড়া কোন ওয়েবসাইট ইন্টারনেটে সবার জন্য লাইভ করা সম্ভব নয়।

ডোমেইন হোস্টিং কেন প্রয়োজন?

ডোমেইন এবং হোস্টিং ওয়ার্ড ওয়াইড ওয়েবের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমরা ইন্টারনেটে কোন তথ্য খুঁজতে বা কোন পরিষেবা পেতে যে মাধ্যম ব্যবহার করি তা প্রধানত ডোমেইন এবং হোস্টিং এর মাধ্যমে আমাদের সামনে পৌঁছায়। 

অর্থাৎ একটি ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনা করার জন্য আমাদের ডোমেইন এবং হোস্টিং এর প্রয়োজন পরে। কারণ ওয়েবসাইট তৈরি হয় প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে তৈরি করা কোড, ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি নিয়ে। এই সমস্ত ফাইল পার্সোনাল কম্পিউটারে না রেখে ইন্টারনেটে রাখতে হয় যাতে সবাই ব্যবহার বা দেখতে পারে।

তো ইন্টারনেটে হাজার হাজার ফাইলের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ফাইল অথবা ওয়েবসাইট খুঁজে বের করতে হলে আমাদের উক্ত ওয়েবসাইটের ঠিকানা জানতে হবে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা নির্দেশ করার জন্য ডোমেইন নেম রেজিস্টার করতে হয়। এই ডোমেইন নেম দ্বারা ইন্টারনেটে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়। 

অন্যদিকে, ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা লাখ লাখ সার্ভারের সমষ্টি। এই সার্ভার গুলোয় আমাদের ওয়েবসাইটের সকল ফাইল রাখতে হয়। কারণ ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য হলো যে কেউ যেন যে কোন সময় উক্ত ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারে। হোস্টিং সার্ভার গুলো এমন ভাবে তৈরি করা থাকে যেন পৃথিবীর যে কোন জায়গা থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভারের ফাইল গুলো দেখা যায়। 

মোটকথা, ডোমেইন এবং হোস্টিং এর কাজ হলো ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনা করার জন্য সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।

ডোমেইন হোস্টিং কিভাবে কাজ করে?

ডোমেইন এবং হোস্টিং কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে কাজ করে। চলুন পর্যায়ক্রমে ডোমেইন এবং হোস্টিং কীভাবে কাজ করে তা জেনে নাই।

ডোমেইন কীভাবে কাজ করে? 

ধরুন আপনাকে একটি পার্সেল দিয়ে ঢাকা পাঠানো হলো এবং বলা হলো বনানি রফিক সাহেবের বাসায় পৌঁছে দিতে। এখন আপনি যদি রফিক সাহেবের বাসা না চিনেন তাহলে পার্সেল কীভাবে পৌঁছাবেন? সঠিক ভাবে ডেলিভারির জন্য আপনার প্রয়োজন পরবে রফিক সাহেবের বাড়ির ঠিকানা। ওয়েবসাইট ঠিক এমন একটি বিষয়। 

ইন্টারনেটে হাজার হাজার ওয়েবসাইট আছে এবং প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে। এসব ওয়েবসাইটকে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার জন্য ডোমেইন নেমের প্রয়োজন পরে। সাধারণত একের অধিক মানুষের নাম একই হলেও ডোমেইন নেম সব সময় ইউনিক হবে। একই নামে কখনই দুইটি ডোমেইন তৈরি করা যাবে না।

ডোমেইনের সাথে এক্সটেনশন মিলে একটু পুরোপুরি ডোমেইন তৈরি হয় যেমন google.com। এখানে google এর সাথে .com এক্সটেনশন মিলে একটি ডোমেইন নেম তৈরি করেছে। যখন ওয়েবসাইট ধারণার জন্ম হয় তখন সাধারণত ওয়েবসাইট চিহ্নিত করার জন্য IP Address ব্যবহার করা হত। অর্থাৎ তখন এখন কার মত google.com বা facebook.com ছিল না। এগুলোর বদলে ছিল 160.245.1.70 এ ধরনের নাম।

এতে কোন ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস মনে রাখা অনেক কঠিন ছিল। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পরবর্তীতে DNS বা ডোমেইন নেম সিস্টেম প্রযুক্তি তৈরি করা হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেসকে একটি রিডেবল ফর্মে রূপান্তর করা হয়। এই DNS রেকর্ডগুলো একটি ডাটাবেজ সার্ভারে ওয়েবসাইটের অন্যান্য ডাটা সহ জমা থাকে। 

আমরা যখন কোন ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস ব্রাউজারে প্রবেশ করি তখন তা আইপি তে কনভার্ট হয়। তারপর উক্ত আইপি দিয়ে DNS সার্ভারে ডাটার জন্য সার্চ করা হয়। DNS ডাটার উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইটটি কোন হোস্টিং সার্ভারে জমা আছে তা খুঁজে বের করা হয়। যখন সব ডাটা ব্রাউজার সফটওয়্যারের কাছে চলে আসে তখন ব্রাউজার উক্ত সার্ভারে http/https রিকোয়েস্ট পাঠায়। সেই রিকোয়েস্টে বলা থাকে আমি অমুক ওয়েবসাইটের তমুক ডাটা চাচ্ছি। সার্ভার তখন রিকোয়েস্ট অনুযায়ী ডাটা ব্রাউজারে পাঠায়। ব্রাউজার সেই ডাটা রেন্ডার করে প্রদর্শন করে।

হোস্টিং কীভাবে কাজ করে?

আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি হোস্টিং এর প্রধান কাজ ওয়েবসাইটের ডাটা এবং কনফিগারেশন সার্ভারে জমা রাখা। একটি সার্ভারকে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত রাখা এবং সিকিউর ভাবে ডাটা আদান-প্রদান ও মডিফাই করার প্রসেস মেইন্টেইন করা।

একটি ওয়েবসাইট আমাদের সামনে প্রদর্শিত হওয়ার জন্য আমাদের চোখের আড়ালে অনেক গুলো কাজ করতে হয়। যে কাজ গুলো করে থাকে প্রথমে ডোমেইন এবং তারপর হোস্টিং। ডোমেইনের থেকে হোস্টিং এর কাজ এবং দায়িত্ব অনেক বেশি। কারণ ডোমেইন এর মাধ্যমে হোস্টিং এর কাছে যে ডাটা চাওয়া হয় তা খুঁজে বের করা থেকে প্রসেস করা পর্যন্ত সব কাজ হোস্টিং এর করতে হয়। 

আপনি দেখবেন হোস্টিং কোম্পানি গুলো আপনাকে বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করে। এই সকল প্যাকেজের মধ্যে অনেক বিষয় উল্লেখ করা থাকে যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যান্ডউইথ, স্পেস, এফটিপি, ডাটাবেজ, ডোমেইন এবং সাব-ডোমেইন ইত্যাদি। এসব বিষয়ের আলাদা আলাদা গুরুত্ব আছে যা আমাদের ওয়েবসাইট তৈরি করার আগে এবং পরে কাজে লাগবে।

তো, একটি ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য ব্রাউজারে যখন একটি ওয়েব অ্যাড্রেস প্রবেশ করানো হয় তখন নীচের বিষয়গুলো ঘটেঃ-

  • ডোমেইন নেম আইপি তে কনভার্ট হয়।
  • সেই আইপির উপর নির্ভর করে DNS সার্ভারে হোস্টিং সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 
  • সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে সার্ভার লোকেশন বের করা হয়। 
  • সার্ভার লোকেশন পাওয়া গেলে উক্ত লোকেশনে ওয়েবসাইটের ফাইল চেয়ে রিকোয়েস্ট করা হয়। 
  • রিকোয়েস্ট পরিচালিত হয় http/https সিকিউরিটি প্রোটকল ব্যবহার করে। 
  • তখন উক্ত হোস্টিং ম্যাকানিজম পরিচালিত করে তার অন্তর্ভুক্ত সার্ভার গুলোয় রিকোয়েস্ট অনুযায়ী ওয়েবসাইটের ফাইল খুঁজে বের করে। 
  • পরে সেই ফাইল ব্রাউজারে পাঠায়। 
  • ব্রাউজার সেই ফাইল DOM এর মাধ্যমে রেন্ডার করে এবং ওয়েবসাইট যে স্টাইলে তৈরি সেই অনুযায়ী প্রদর্শিত করে। 

একটি ওয়েবসাইট হতে পারে আমাদের ক্যারিয়ারের মূল টার্নিং পয়েন্ট। কারণ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিজনেস করে বা সার্ভিস বিক্রি করে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি উন্নতি করতে পারি। সাথে সাথে বিজনেসের প্রসার ঘটিয়ে মুনাফা বৃদ্ধি করতে পারি। আশা করি, এই লেখা পরে আপনি ডোমেইন হোস্টিং এর পাশাপাশি ওয়েবসাইট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেছেন।

Leave a Reply