You are currently viewing ক্লাউডফ্লেয়ার CDN কিভাবে ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স বাড়ায়?
ক্লাউডফ্লেয়ার CDN

ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করার জন্য ক্লাউডফ্লেয়ার CDN অনেক ধরনের ফিচার প্রোভাইড করে থাকে। এদের মধ্যে তাদের CDN সার্ভিস বাদেও APO, HTTP/3, Argo Smart Routing, Polish, Rocket Loader, Edge Caching, Load Balancing অন্যতম। এগুলো কি এবং কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

ক্লাউডফ্লেয়ার কি? 

ক্লাউডফ্লেয়ার হচ্ছে একটি কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক। এর প্রধান কাজ হচ্ছে সিকিউর ভাবে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ এর কন্টেন্ট ভিজিটরের কাছে ডেলিভারি করা। এটি সিকিউরিটি প্রদান করার পাশাপাশি ওয়েবসাইটের স্পিড বৃদ্ধি করার কাজ করে থাকে। মূলত ক্লাউডফ্লেয়ার ওয়েবসাইট ইউজারের কাছে প্রদর্শন করার জন্য ক্যাশিং পদ্ধতি ইউজ করে থাকে। 

অর্থাৎ তারা তাদের বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সার্ভার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করে একটি গ্লোবাল ক্যাশিং সার্ভার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এই নেটওয়ার্ক অনেক ডাইনামিক্যালি কাজ করে থাকে। ধরুন আপনি বাংলাদেশে বসে একটি অ্যামেরিকান ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন। তো ওয়েবসাইট টি হোস্ট করা আছে আমেরিকার একটি সার্ভারে যা আমাদের থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে। 

যদিও ইন্টারনেটে ডাটা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যায় আলোর গতিতে তবুও আমেরিকা গিয়ে সেই ডাটা আবার আপনার ব্রাউজারে ফিরে আসতে অনেক লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করার পাশাপাশি বেশি সময় নেবে। একে নেটওয়ার্কের ভাষায় ল্যাটেন্সি বলা হয়। যাইহোক, আপনার ভিজিট করা ওই একই ওয়েবসাইট যদি বাংলাদেশে আপনার লোকেশনের সব থেকে কাছে থাকা কোন সার্ভার থেকে লোড হয় তাহলে কিন্তু অনেক কম সময় লাগবে। 

মূলত ক্লাউডফ্লেয়ার বিশ্বের ১২০+ দেশের ৩৩০ টি শহরে তাদের ক্যাশ সার্ভার তৈরি করে রেখেছে। আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইট এই নেটওয়ার্কের সাথে অ্যাড করবেন তখন তা এই সার্ভারগুলোতে স্টোর হয়ে থাকবে। সাধারণত ক্লাউডফ্লেয়ার পুরো ওয়েবসাইটের একটা ডাউনলোড ভার্শন তাদের সার্ভারে রাখে এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর তা নতুন করে ডাউনলোড করে পূর্বের ভার্শন আপডেট করে। 

ক্লাউডফ্লেয়ার কি

ক্লাউডফ্লেয়ার CDN যেভাবে ওয়েবসাইট স্পিড বৃদ্ধি করে

একটি ওয়েবসাইট স্পিড ফাস্ট করার জন্য অনেকগুলো পদ্ধতি কাজ করে থাকে। এদের মধ্যে মোস্ট কমন হচ্ছে CDN ইউজ করা। কারণ সিডিএন ইউজ করার মাধ্যমে সার্ভার রিসোর্স ইউজ যেমন কমানো যায় তেমনি অনেক অপ্রয়োজনীয় সার্ভার রিকোয়েস্ট কমিয়ে ফেলা যায়। যা ওয়েবসাইট দ্রুত সময়ের মধ্যে লোড হতে সহায়তা করে থাকে। ক্লাউডফ্লেয়ার যেভাবে ওয়েবসাইটের স্পিড বৃদ্ধি করে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো। 

গ্লোবাল ক্যাশিং নিশ্চিত করে

গ্লোবাল ক্যাশিং হচ্ছে বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন জায়গায় ক্যাশ সার্ভার প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে ওয়েবসাইট প্রদর্শিত করা। সাধারণত ওয়েবসাইট এবং সার্ভারের মধ্যকার ল্যাটেন্সি কমানোর জন্য এই পদ্ধতি অনেক ভালো কাজ করে থাকে। ক্লাউডফ্লেয়ার তাদের সার্ভিস আরও উন্নত করার জন্য তাদের ক্যাসিং সার্ভারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন সার্ভার প্রতিষ্ঠা করছে। 

এই সার্ভারগুলো নিজেদের মধ্যে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে এবং ওয়েবসাইট ভিজিটরদেরকে FTP ওয়েবসাইট ভিজিট করার মতো ফিল দেয়। সঠিকভাবে ক্লাউডফ্লেয়ার কনফিগার করা থাকলে ভিজিটর অ্যাপ ইউজ করার মতো ফিল পায়। যে কারণে এই টেকনোলজি অনেক কম সময়ের মধ্যে পপুলারিটি পেয়েছে। তাছাড়া তাদের Query String Short ফিচার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য অনেক হেল্পফুল কারণ এটি ডায়নামিক পেজ বারবার লোড হওয়ার জন্য ডাটাবেজের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনে।

ক্লাউডফ্লেয়ার তাদের ফ্রি অ্যাকাউন্টে অনেক প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী ফিচার দিয়ে থাকে। যা সকল ধরনের ওয়েবসাইটের জন্য প্রযোজ্য। তবে বড় বড় ওয়েবসাইটে ক্লাউডফ্লেয়ার ইউজ করার জন্য অবশ্যই তাদের প্রিমিয়াম সার্ভিস ইউজ করা জরুরি। কারণ ফ্রি ভার্শনে তারা ওয়েবসাইটের জন্য বেসিক সিকিউরিটি ও ক্যাশ সার্ভিস দিয়ে থাকে। কিন্তু বড় ওয়েবসাইটের জন্য বেসিক সার্ভিস দিয়ে প্রোটেকশন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। 

DDoS আক্রমণ প্রতিরোধ করে

ওয়েবসাইট হ্যাক করার জন্য অনেক ধরনের অ্যাটাক রয়েছে। DDoS তাদের মধ্যে অন্যতম। সাধারণত এই অ্যাটাকের দ্বারা ওয়েবসাইটকে অফলাইন করে দেওয়ার জন্য সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। এই অ্যাটাক পরিচালনা করা হয় সার্ভারে একই সময়ে অনেক বেশি পরিমাণে ইনভ্যালিড রিকোয়েস্ট সেন্ড করে। 

একই সময়ে অনেক বেশি পরিমাণ রিকোয়েস্ট আসার কারণে সার্ভার অন্যান্য সকল কাজ বাদ দিয়ে এই রিকোয়েস্ট গুলো হ্যান্ডেল করার জন্য বিজি হয়ে পরে। যে কারণে উক্ত সময়ে ভিজিটর ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারে না বা সার্ভার ইরর দেখতে পায়। যা একটি ওয়েবসাইটের জন্য অনেক ক্ষতিকর। পাশাপাশি সার্ভার ক্রাশ হয়ে গেলে ওয়েবসাইটের ডাটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। 

ক্লাউডফ্লেয়ার ইউজ করে এই ধরনের অ্যাটাক অনেক সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। কারণ তাদের সার্ভার ক্যাপাবিলিটি অনেক শক্তিশালী যা সার্ভার রিসোর্স স্কেলিং করার মাধ্যমে এই ধরনের অ্যাটাক গুলোর তীব্রতা কমিয়ে আনে। অন্যদিকে ক্লাউডফ্লেয়ার ব্রুট ফরস অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য অনেক উন্নতমানের ফায়ারওয়াল সার্ভিস প্রদান করে থাকে। 

এখানে আপনি ডিফল্ট ফায়ারওয়াল সেটিং ইউজ করার পাশাপাশি নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। তাদের সুরক্ষিত WAF ফায়ারওয়াল XSS, Brute-Force, Malware Bot ইত্যাদি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। অন্যদিকে এই ফায়ারওয়াল অ্যাক্টিভ থাকলে আন অথরাইজড লগইন বন্ধ করা যায়। 

ওয়েবসাইট লোডিং টাইম বৃদ্ধি করে

ওয়েবসাইটের স্পিড স্লো হওয়ার জন্য অনেক কারণ রয়েছে। তাদের মধ্যে নিচের বিষয়গুলো অন্যতম, যেমন-

  • রেন্ডার ব্লকিং রিসোর্স
  • থার্ড পার্টি স্ক্রিপ্ট
  • হিজিবিজি ও অপ্রয়োজনীয় কোড
  • বড় আকারের মিডিয়া ফাইল যেমন ইমেজ, ভিডিও
  • ভারী প্লাগিন ইউজ করা
  • DOM এলিমেন্ট
  • স্লো সার্ভার
  • অবজেক্ট ক্যাশ না থাকা
  • ব্রাউজার ক্যাশ না থাকা
  • সাইটে ম্যালওয়্যার থাকে

এগুলো একটি ওয়েবসাইট স্লো করে দেওয়ার পেছনে সব থেকে বেশি কাজ করে। তো ওয়েবসাইট স্পিড বৃদ্ধি করার জন্য সবার প্রথমে এই সমস্যা গুলো সমাধান করতে হবে। যাইহোক, আপনি ওয়েবসাইটে সিডিএন কনফিগার করে সহজেই স্পিড বৃদ্ধির ৬০% কাজ করে ফেলতে পারবেন। ক্লাউডফ্লেয়ারের HTTP/3 সাপোর্ট ফিচার আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাশিং করে এবং সার্ভারের সাথে ডিভাইসের কানেকশন সিকিউর করে। মোবাইলের জন্য এই প্রযুক্তি সব থেকে বেশি কার্যকরী। 

কারণ সিডিএন ইউজ করলে রেন্ডার ব্লকিং রিসোর্স অনেক কমিয়ে আনা যায়। পাশাপাশি ক্যাশ সার্ভার ওয়েবসাইটের সকল ফাইল ডাউনলোড করে রাখে এবং ভিজিটরকে কমপ্রেস করা ওয়েবপেজ শো করায়। যে কারণে ভিজিটরের ব্রাউজার ওয়েবসাইট রেন্ডার করার জন্য বারবার রিসোর্স ডাউনলোড করার প্রয়োজন পরে না। 

এতে ওয়েবসাইটের পেজ গুলো অনেক দ্রুত লোড হয়। অন্যদিকে ক্লাউডফ্লেয়ার তাদের সিডিএন সার্ভিসের সাথে অন্যান্য অপটিমাইজেশন প্রোভাইড করে। যা অপ্রয়োজনীয় সার্ভার রিকোয়েস্ট লিমিট করে ওয়েবসাইটের লোড স্পিড বৃদ্ধি করে থাকে। 

ওয়েবসাইট লোডিং টাইম বৃদ্ধি

পারফর্মেন্স স্কেলিং করে

পারফর্মেন্স স্কেলিং হচ্ছে সার্ভারে হঠাৎ করে অনেক চাপ সৃষ্টি হলে তা সামাল দেওয়া। বিশেষ করে ইকমার্স সাইট বা অনলাইন স্টোর গুলোতে এই ধরনের সমস্যা সব থেকে বেশি ঘটে থাকে। কারণ এই ধরনের ওয়েবসাইটে কোন ইভেন্ট বা ছাড়ের কারণে একই সময়ে অনেক বেশি ভিজিটর আসতে পারে।

যা অনেক সময় সার্ভারের মূল রিসোর্স থেকেও অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে। যা ওয়েবসাইট ক্রাশ করে ফেলে এবং ভিজিটরের কাছে ব্র্যান্ড সম্পর্কে একটি ব্যাড ইম্প্রেশন তৈরি হয়ে। এই কারণে পারফর্মেন্স স্কেলিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাউডফ্লেয়ার তাদের মাল্টিপল সার্ভার ক্যাপাসিটির কারণে অন্যান্য সিডিএন থেকে অনেক ভালোভাবে লোড ব্যালেন্সিং করে থাকে। যে কারণে বড় বড় ওয়েবসাইট তাদের সিডিএন সার্ভিস ইউজ করে থাকে। 

মিডিয়া ডেলিভারি অপটিমাইজেশন

ক্লাউডফ্লেয়ার Rocket Loader ফিচারের মাধ্যমে JavaScript ডেলিভারি অপ্টিমাইজ করে থাকে। এই ফিচার রেন্ডার ব্লকিং টাইম অনেক কমিয়ে আনে। পাশাপাশি তাদের Polish নামে একটি ইমেজ অপটিমাইজেশন ফিচার আছে যা ইমেজ কোয়ালিটি না কমিয়ে কমপ্রেস করে থাকে। ই-কমার্স থেকে শুরু করে যে সকল সাইটে অনেক বেশি ইমেজ ইউজ হয় তাদের জন্য এটি অনেক হেল্পফুল। 

APO বা Automatic Platform Optimization ফিচার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের জন্য অনেক কার্যকরী। মূলত এই ফিচারের মাধ্যমে ক্লাউডফ্লেয়ার সকল ধরনের স্ট্যাটিক ও ডায়নামিক কন্টেন্ট তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক থেকে সারভ করে থাকে। এতে TTFB স্কোর বৃদ্ধি পায় যা সার্ভার লোড কমিয়ে আনে এবং ওয়েবসাইট দ্রুত লোড হয়। 

শেষ কথা

ক্লাউডফ্লেয়ার CDN মার্কেটে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পাওয়া কারজন হচ্ছে তাদের ইনফ্রাস্টাকচার। তাদের সার্ভার সংখ্যা অনেক বেশি এবং প্রধান প্রধান জায়গায় হওয়ার কারণে সবাই এর সুবিধা নিতে পারছে। 

পাশাপাশি তাদের সার্ভিস টেকনোলজি অনেক উন্নত এবং তারা নিয়মিত নতুন নতুন ফিচার নিয়ে কাজ করছা যা ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি ও পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। আজকের লেখায় ক্লাউডফ্লেয়ার সিডিএন কীভাবে ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। 

Leave a Reply