আমরা যখন কোন ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাই তখন আমাদের প্রথম কাজ থাকে হোস্টিং নির্বাচন করা। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা বিভিন্ন ধরনের ওয়েব হোস্টিং অফার দেখতে পাই। ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে কমপ্লিট ধারণা না থাকলে সহজেই স্ক্যামের শিকার হয়ে সস্তাপঁচা হোস্টিং সার্ভিস কিনে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। ভুল হোস্টিং কেনার কারণে আপনার শুধু টাকা খরচ হবে এমন নয় এতে আপনার অনেক সময় নষ্ট হবে। আপনি আপনার সার্ভিস অনলাইনে পাবলিশ করার পূর্বে এ রকম বিরক্তিকর সমস্যা মোকাবেলা করতে না চাইলে এই লেখা আপনাকে ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা নিতে সহায়তা করবে।
Table of Contents
ওয়েব হোস্টিং কি?
এই ইন্টারনেটের যুগে ওয়েবসাইট থাকা একটি কমন বিষয়। বর্তমানে সব ধরনের সরকারি এবং বেসরকারি সার্ভিস অনলাইন ভিত্তিক হচ্ছে। এই সার্ভিস গুলো গ্রাহক বা কাস্টমার পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন হয় ওয়েবসাইটের।
প্রতিটি ওয়েবসাইটের ভেতরে অনেকগুলো ডাটা যেমন ইমেজ, টেক্সট, ভিডিও ইত্যাদি জমা থাকে। এখন এ সকল তথ্য বা ফাইল জমা থাকার জন্য প্রয়োজন পরে স্টোরেজের। আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারে থাকা মেমোরি কার্ড বা হার্ড ড্রাইভের প্রধান কাজ হলো ফাইল জমা রাখা। যেখান থেকে আমরা প্রয়োজন মত ফাইল ব্যবহার করতে পারি বা অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করে দিতে পারি। কম্পিউটার বা মোবাইলের স্টোরেজে যেমন ফাইল জমা থাকে। ঠিক তেমনি একটি ওয়েবসাইটের ফাইল জমা রাখার জন্য স্টোরেজের প্রয়োজন পরে। আর এই স্টোরেজ সুবিধা প্রদান করে ওয়েব হোস্টিং বা সার্ভার। অর্থাৎ ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ সম্পর্কিত ফাইল জমা রাখার জন্য যে স্টোরেজ সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাকে ওয়েব হোস্টিং বলে।
সহজ করে বলতে গেলে হোস্টিং হলো অনেকগুলো হার্ডডিস্ক সম্বলিত একটি কম্পিউটার। যেখানে মাদারবোর্ড, প্রসেসর, র্যাম, স্টোরেজ ইত্যাদি থাকে এবং পুরো কম্পিউটার ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড থাকে। উক্ত কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে আমাদের ওয়েবসাইটের ইনফরমেশন এবং ডাটা জমা থাকে।
আমরা যখন ওয়েব সাইটে প্রবেশ করি তখন আমাদের পার্সোনাল কম্পিউটার ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্ভার কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হয়। এতে আমরা আমাদের সার্ভারে থাকা ইমেজ, অডিও, ভিডিও, টেক্সট ইত্যাদি ফাইল ব্রাউজ করতে পারি।
মোটকথা হোস্টিং হলো এমন একটি সিস্টেম যেখানে ওয়েবসাইটের ডাটা রাখার জন্য সার্ভার স্পেস ভাড়া করা হয়। একটি ওয়েবসাইটের যাবতীয় ফাইল এবং ডাটাবেজ যেখানে জমা থাকে এবং ইন্টারনেট ইউজ করে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে সেই ওয়েবসাইট ভিজিট করা যায়।
ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার কি কি?
বর্তমান সময়ে বিশ্বে প্রচলিত কিছু কমন হোস্টিং সিস্টেম রয়েছে। নিচে ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার কত প্রকার ও কি কি তা আলোচনা করা হলো।
শেয়ার্ড হোস্টিংঃ শেয়ার্ড ওয়েব হোস্টিং হলো অনেকটা এক রুম বিশিষ্ট ব্যাচেলর বাসার মত। একটি ব্যাচেলর বাসায় যেমন একই সাথে অনেক ভাড়াটিয়া থাকে তেমনি একটি শেয়ার্ড ওয়েব হোস্টিং সার্ভিসে অনেক গুলো ইউজার থাকে। বর্তমান সময়ে পার্সোনাল অথবা ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং অনেক জনপ্রিয়।
শেয়ার্ড ওয়েব হোস্টিং তৈরি করার মূল কারণ হলো কম দামে সার্ভিস প্রদান করা। কারণ একটি ব্যাচেলর বাসায় যেমন একটি কমন রুম, বাথরুম, রান্নাঘর সবার শেয়ার করে ব্যবহার করতে হয়। তেমনি শেয়ার্ড হোস্টিং এ একটি নির্দিষ্ট সার্ভার কয়েকজন কাস্টমার শেয়ার করে ইউজ করে।
এতে সার্ভার রিসোর্স যেমন প্রোসেসিং পাওয়ার, র্যাম ও স্টোরেজ প্রতিটি ইউজারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া থাকে। হোস্টিং সার্ভিস থেকে আপনাকে যে প্যানেল দেওয়া হবে সেখানে আপনি আপনার জন্য বরাদ্দ রিসোর্স দেখতে পারবেন কিন্তু চাইলেই বাড়াতে বা কমাতে পারবেন না। কারণ শেয়ার্ড হোস্টিং গুলোতে হোস্টিং প্রভাইডার নিজে সব ম্যানেজ করে।
এই সার্ভিস ইউজ করার জন্য আপনার সিকিউরিটি বা হোস্টিং ম্যানেজ করার বিষয়ে তেমন ধারণা না থাকলেও চলবে। সাধারণত একদম বেসিক পর্যায়ের ইউজারদের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভিস ব্যবহার করা অনেক সুবিধাজনক।
ডেডিকেটেড হোস্টিংঃ একসময় বিটিভিতে একটি চিপস এর বিজ্ঞাপন দেখাতো যেখানে অভিনেতা চিপস এর প্যাকেট নিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে বলে যে “একা একা খেতে চাও, দরজা বন্ধ করে খাও”। বিজ্ঞাপনটিতে অভিনেতা তার চিপসের ভাগ যাতে কাউকে না দিতে হয় তাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।
ডেডিকেটেড হোস্টিং ঠিক তেমনই একটি বিষয়। অর্থাৎ ডেডিকেটেড হোস্টিং শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে একদম আলাদা। শেয়ার্ড হোস্টিং এ একটি নির্দিষ্ট সার্ভার সকল ইউজারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। যে কারণে এই সার্ভারে কিছু সমস্যা থাকে। ছোট ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং ব্যবহার করা গেলেও বড় বা বেশি ট্রাফিকের ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য ডেডিকেটেড হোস্টিং প্রয়োজন পরে।
শেয়ার্ড হোস্টিং এ একটি সার্ভার সবার মাঝে ভাগ করা থাকলেও ডেডিকেটেড সার্ভারে একটি পুরো সার্ভার রিসোর্স একটি ইউজারের জন্য বরাদ্দ থাকে। অর্থাৎ ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভিসে আপনার চাহিদামতো রিসোর্স এবং স্টোরেজ আপনাকে দেওয়া হবে। আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে আপনি সার্ভার রিসোর্স বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারবেন।
ধরুন আপনার একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট আছে যেখানে প্রতি মাসে ১ লক্ষ ভিজিটর আসে। এখন এই রকম একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করার জন্য আপনার কমপক্ষে ৩০ জিবি স্পেস ও আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ লাগবে। এর থেকে কম হলে দেখা যাবে ওয়েবসাইটে বেশি হিট পরলে সার্ভার ধীরে রেসপন্স করবে এতে ভিজিটর বিরক্ত হবে।
ডেডিকেটেড সার্ভার সাধারণত একটু অ্যাডভানস ইউজারের জন্য বেশি প্রযোজ্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো ইউজারের কথা চিন্তা করে দুই ধরনের ডেডিকেটেড সার্ভার অফার করে।
- ম্যানেজডঃ এই হোস্টিং এ প্রভাইডার পুরো সার্ভার সেটআপ করে দেয়। বিশেষ করে নেটওয়ার্ক, স্পেস, সিকিউরিটি ইত্যাদি সহ প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইন্সটল করা থেকে কনফিগার করে দেয়। এতে সার্ভার সেটআপ করার বা সেটআপ করতে গিয়ে যে ঝামেলায় পরতে হয় তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এগুলো কনফিগার করে দেওয়ার জন্য হোস্টিং কোম্পানি তাদের সার্ভিসে এক্সট্রা চার্জ যোগ করে দেয়।
- আন-ম্যানেজড সার্ভারঃ আন-ম্যানেজড সার্ভার হলো অভিজ্ঞ লোকের জন্য। অর্থাৎ আপনি যদি নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সহ হোস্টিং ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে অভিজ্ঞ হন তাহলে আন-ম্যানেজড সার্ভার নিতে পারবেন। কারণ অন্যের পছন্দ মত সাজানো রুমের থেকে আমরা নিজের পছন্দ মত সাজানো রুমে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। ঠিক তেমনি আপনি আন-ম্যানেজড ডেডিকেটেড সার্ভার নিজের মত করে কনফিগার করে নিতে পারবেন। এতে যেহেতু আপনাকে সার্ভার কনফিগার করার জন্য এক্সট্রা খরচ করতে হচ্ছে না সেহেতু মোট সার্ভার খরচ কিছুটা সাশ্রয় হবে।
ভিপিএস হোস্টিংঃ VPS (Virtual Private Server) শেয়ার্ড হোস্টিং এর উন্নত রূপ। ভিপিএস সার্ভারকে একটি বিল্ডিং এর ভেতরে থাকা রুমের সাথে তুলনা করা যায়। ধরুন একজন বিল্ডারের থেকে আপনি উক্ত বিল্ডিং এর ভেতরের একটি ফ্ল্যাট কিনে নিয়েছেন। যেখানে আপনার জন্য আলাদা বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাসের সংযোগের বরাদ্দ আছে।
এখন উক্ত ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী অন্যান্য ফ্ল্যাটের সদস্যদের সাথে আপনার জন্য বরাদ্দ সুবিধা থেকে কিছুই শেয়ার করতে হচ্ছে না। আপনার ফ্ল্যাটের প্রতিটা রুম আপনার নিজের কন্ট্রোলে এবং আপনি আপনার ইচ্ছা মত রুমগুলো সাজাতে পারছেন বা মডিফাই করতে পারছেন এতে আপনার প্রতিবেশীরা কোন হস্তক্ষেপ করতে পারছে না।
ভিপিএস হোস্টিং হলো এমন একটি বিষয়। এখানে আপনি একটি পার্সোনাল হোস্টিং স্পেস পাচ্ছেন যা শুধু আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে। এখানে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো সব কিছু করতে পারছেন। অর্থাৎ এখানে আপনি একটি ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারবেন অথবা একের অধিক সার্ভিস হোস্ট করতে পারবেন। এতে আপনার রিসোর্স অন্য কোন ইউজারের সাথে ভাগ করে নিতে হবে না।
অর্থাৎ ভিপিএস সার্ভার একটি শেয়ার্ড সার্ভারের মধ্যে ডেডিকেটেড সার্ভারের মত কাজ করে। ডেডিকেটেড সার্ভারের থেকে দামে কম হলেও কার্যকারিতা ডেডিকেটেড সার্ভারের মতই। তাছাড়া VPS হোস্টিং এ আপনাকে রুট অ্যাক্সেস দেওয়া হয় এতে আপনি চাইলে প্রয়োজন মত সফটওয়্যার ইন্সটল বা রিমুভ করতে পারবেন।
অন্যদিকে ভিপিএস সার্ভার পরিচালিত হয় ভার্চুয়াল অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা। যা ভার্চুয়ালাইজেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোস্টের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভারকে একটি ফিজিক্যাল সার্ভার মনে হলেও এটা আসলে ফিজিক্যাল সার্ভার না। ভার্চুয়াল অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করে সফটওয়্যার দ্বারা হার্ডওয়্যারের সাথে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা হয় যাতে ইউজারের কাছে মনে হয় তারা সরাসরি ডাটা সেন্টারে থাকা সার্ভার ব্যবহার করছে।
ক্লাউড হোস্টিংঃ লোড ব্যালেন্সিং এবং আপটাইম একটি ওয়েব হোস্টিং এর ভালো মন্দ বিচার করে। একটি সার্ভার কত টুকু কার্যকরী এবং ইউজার বান্ধব তা নির্ধারণ করা হয় আপটাইম ও লোড হ্যান্ডেল করার যোগ্যতার উপর নির্ভর করে।
আর এই জায়গায় ক্লাউড হোস্টিং এর কোন বিকল্প নেই। কারণ ক্লাউড হোস্টিং গতানুগতিক হোস্টিং সার্ভার গুলোর মত নয়। এখানে হোস্টিং সার্ভিস তৈরি করার জন্য সিঙ্গেল সার্ভার ব্যবহার করার পরিবর্তে মাল্টিপল সার্ভার ইউজ করা হয়।
অন্যান্য সার্ভারে ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য নির্দিষ্ট সার্ভার স্পেস গেটওয়ে ব্যবহার করা হয়। এতে ইউজার শুধু উক্ত সার্ভারের জন্য বরাদ্দ রিসোর্স ইউজ করতে পারে। কিন্তু ক্লাউড হোস্টিং সিস্টেমে centralized resource pool সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এতে ওয়েব সাইট একটি নির্দিষ্ট সার্ভারের বদলে কয়েকটি ইন্টারকানেক্টেড সার্ভার থেকে রিসোর্স শেয়ার করে।
এতে কোন সার্ভার ক্রাশ করলেও অন্য সার্ভার থেকে ওয়েবসাইট কোনো সমস্যা ছাড়াই লোড হয়। ক্লাউড সার্ভার গুলো বর্তমান সময়ে পুরো হোস্টিং মার্কেট দখল করে নিচ্ছে এর সিকিউরিটি, আনলিমিটেড স্পেস, বিরতিহীন রিসোর্স শেয়ার সিস্টেম সহ অন্যান্য কারণে।
ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংঃ ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং ওয়েব হোস্টিং এর একটি সাব-ক্যাটাগরি। এই হোস্টিং আসলে অন্যান্য হোস্টিং এর মতই তবে এর কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং মূলত ওয়ার্ডপ্রেস এর উপর নির্মিত ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়।
এতে এমন সব ফিচার রাখা হয় যা শুধু ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট রান করার জন্য প্রয়োজন পরে। অর্থাৎ হোস্টিং প্রোভাইডার শুধু ওয়ার্ডপ্রেস ইউজারদের টার্গেট করে এমন হোস্টিং সার্ভিস প্রদান করে। ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং শুধু মাত্র ওয়ার্ডপ্রেস নির্ভর ওয়েবসাইট চলবে এমন ভাবে কনফিগার করা থাকে। আপনি চাইলেই শপিফাই, জুমলা, এইচটিএমএল ওয়েবসাইট রান করাতে পারবেন না।
ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং কনফিগারেশনের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে বিভক্ত যেমন শেয়ারড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং এবং ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং।
- শেয়ারড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংঃ এই সার্ভার কনফিগারেশনে সাধারণ শেয়ারড হোস্টিং এর মতই সব কিছু। এখানে প্রোভাইডার আগে থেকেই ওয়ান ক্লিক ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টলেশন ফিচার অ্যাড করে দেয় যাতে যে কেউ এক ক্লিকে ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল দিতে পারে।
যদিও বর্তমানে সব সি-প্যানেল হোস্টিং এ এই টুল আগে থেকেই দেওয়া থাকে। মোটকথা শেয়ার্ড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং তার রিসোর্স অন্য সকল ওয়েবসাইট এর সাথে শেয়ার করলেও তা ওয়ার্ডপ্রেসের ইকো-সিস্টেমের সাথে যাতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে তেমন করে কনফিগার করা হয়।
- ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংঃ ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস সার্ভার অনেকটা শেয়ার্ড ওয়ার্ডপ্রেস সার্ভারের মতই ওয়ার্ডপ্রেস নির্ভর হোস্টিং। তবে ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস সার্ভারে আরও প্রয়োজনীয় ফিচার অ্যাড করা থাকে।
একটি শেয়ারড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং যা যা অফার করে তা সহ ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং ভালো পারফর্মেন্স, সাইট স্পিড, সিকিউরিটি, সার্ভার-সাইড ক্যাশিং ইত্যাদি ফিচার প্রোভাইড করে। অনেক সময় প্রোভাইডার আগেই ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করে কনফিগার করে রাখে এবং CMS অটো আপডেট অ্যাক্টিভ করে রাখে। এতে আপনাকে আপডেট জনিত সিকিউরিটি সমস্যা ফেস করতে হয় না।
Managed WordPress Hosting এ সার্ভার মেইন্টেনেন্স সহ কাস্টমাইজেশন ইউজারের হাতে থাকে যা শেয়ারড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং এ প্রোভাইডারের কাছে থাকে। মোটকথা, ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং একটু দামি হলেও ফিচারের তুলনা করতে গেলে এ রকম ইনভেস্ট করে নিশ্চিন্তে থাকাই ভালো।
রিসেলার হোস্টিংঃ রিসেলার হোস্টিং প্রধানত একটি বিজনেস মডেল। নিজেদের সার্ভিসের বিকাশ ও বিজনেস প্রোফিট বাড়ানোর জন্য হোস্টিং কোম্পানিগুলো হোস্টিং রিসেল দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। উক্ত হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং কিনে সরাসরি কাস্টমারের কাছে বিক্রি করার হচ্ছে রিসেলার হোস্টিং।
সাধারণত হোস্টিং প্রোভাইডার তাদের মূল সার্ভার স্পেস থেকে কিছু স্পেস আলাদা করে রিসেল দেওয়ার জন্য কনফিগার করে নির্দিষ্ট কন্ট্রোল প্যানেলের ভিত্তিতে রিসেলারের কাছে ভাড়া দেয়। এ কারণে যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রিসেলার নিবে তাদের সার্ভার তৈরি, পরিচালনা, সাপোর্ট বা অন্যান্য কোন কিছুই ম্যানেজ করতে হবে না। এগুলো সব করবে মূল কোম্পানি মাঝে থেকে রিসেলার কিছু কমিশন পাবে।
সর্বোপরি, অ্যাফিলিয়েশন পদ্ধতি ব্যবহার করে হোস্টিং প্রোভাইডারদের হোস্টিং সার্ভিস রিসেল করে দেওয়া হলো রিসেলার হোস্টিং।
কো-লোকেশন হোস্টিংঃ কো-লোকেশন হোস্টিং মূলত হলো সার্ভার হাউজিং। এই হোস্টিং সিস্টেমে থার্ড পার্টি ডাটা সেন্টার কোম্পানি তাদের বিল্ডিং এর ভেতর অবস্থিত ফিজিক্যাল সার্ভার অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেয়। অর্থাৎ ধরুন আপনার একটি ওয়েবসাইট আছে যেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডাটা আছে যা আপনি চান না অন্য কোন ব্যক্তি অ্যাক্সেস করুক। আপনি চাচ্ছেন আপনার নিজস্ব সার্ভারে সে ডাটা থাকুক এবং আপনার নিয়োগ করা অপারেটর সে সার্ভার ম্যানেজ করুক।
এখন এরকম একটি সার্ভার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে অনেক বেশি খরচ পরবে। এখন আপনি যদি এই সেইম কাজ কোন প্রতিষ্ঠিত ডাটা সেন্টারের ভেতরে তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সিকিউরিটি ইউজ করে করতে পারেন তাহলে সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
বর্তমান সময়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ডাটা সুরক্ষিত রাখার জন্য কো-লোকেশন সার্ভিস ইউজ করা শুরু করে দিয়েছে। কো-লোকেশন হোস্টিং ব্যবহার করার জন্য যেখানে আপনার সার্ভার রাখা হবে সেখানে আপনার নিজস্ব অপারেটর থাকতে হবে। যন্ত্রপাতি মুভমেন্ট সহ অন্যান্য বিষয় মিলে আপনার একটি ওয়ান টাইম খরচ প্রয়োজন পরবে। এছাড়া কো-লোকেশন হোস্টিং পরিচালনা করা অনেক ব্যয়-সাপেক্ষ ব্যাপার।
ওয়েব হোস্টিং কিভাবে কাজ করে?
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য সর্ব প্রথম প্রয়োজন পরে ডোমেইন নেম এর। অর্থাৎ ওয়েবসাইটকে আমরা কি নাম ধরে ডাকবো তা ডোমেইন নেম দ্বারা নির্ধারণ হয়। তারপর ওয়েবসাইটটি রাখার জন্য আমাদের প্রয়োজন পরবে হোস্টিং এর।
আমরা আগেই জেনেছি যে হোস্টিং হলো এমন একটি মাধ্যম যেখানে ওয়েবসাইটের সকল ফাইল জমা করে রাখা যায়। ওয়েব ব্রাউজারে ডোমেইন নেম প্রবেশ করলে তখন সেই ওয়েবসাইট হোস্টিং থেকে ডাটা নিয়ে আমাদের সামনে প্রদর্শিত করে।
তো ওয়েব হোস্টিং কাজ করে মূলত বিভিন্ন প্যাকেজ এর উপর নির্ভর করে। আপনি কোন হোস্টিং কিনতে গেলে দেখতে পাবেন সেখানে প্রোসেসিং পাওয়ার, মেমোরি পাওয়ার ও স্টোরেজ কাপাসিটির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন প্যাকেজ তৈরি করা থাকে।
মূলত Web Hosting র্যাম, প্রসেসর কোর, স্টোরেজ ও ব্যান্ডউইথ এর উপর নির্ভর করে কাজ করে। এই বিষয় গুলো মেইনটেইন করা হয় হোস্টিং ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার দ্বারা যা সার্ভারকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করতে সাহায্য করে।
ওয়েব হোস্টিং এর সুবিধা অসুবিধা
অনলাইন ভিত্তিক প্রতিটি সার্ভিসের জন্য ওয়েব হোস্টিং একটি দারুণ বিষয়। বর্তমান এই প্রযুক্তির সময়ে ওয়েব হোস্টিং এর কোনো বিকল্প নেই। এর অনেক সুবিধা থাকার পরেও এর কিছু অসুবিধা নিচে দেওয়া হলো।
সুবিধাঃ
- এক্সেসিবিলিটিঃ ওয়েব হোস্টিং থাকার কারণে আমরা আমাদের ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপলিকেশন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে অ্যাক্সেস করতে পারি। যা আমাদের নিজেদের সাথে বিশ্ববাসীদের যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করে।
- সাশ্রয়ীঃ ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস বর্তমানে অনেক সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ার কারণে বড় বড় কোম্পানির সাথে সাথে ছোট কোম্পানি বা সাধারণ মানুষ হোস্টিং কিনে তাদের সার্ভিস বা ওয়েবসাইট অনলাইনে পাবলিশ করতে পারছে।
- স্কেলেবিলিটিঃ আমরা প্রয়োজন মত স্পেস বাড়িয়ে বা কমিয়ে আমাদের বাজেটের মধ্যে ওয়েব হোস্টিং ব্যবহার করতে পারি। এতে অতিরিক্ত ব্যয় না করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়।
- টেকনিক্যাল সাপোর্টঃ একটি ওয়েবসাইট ম্যানেজ করার জন্য অনেক টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান করতে হয়। রিলেটেড সেক্টরে অভিজ্ঞতা না থাকলে অনেক বড় ধরনের লসে পরতে হবে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটি ওয়েব হোস্টিং প্রোভাইডার টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
- ফুল সার্ভিস কন্ট্রোলঃ ওয়েব হোস্টিং সার্ভিসগুলোতে ওয়েবসাইট ডিজাইন, ডেভেলপমেন্টসহ ফাংশনালিটির ফুল কন্ট্রোল ইউজারের হাতে থাকবে।
অসুবিধাঃ
- ডাউনটাইমঃ ওয়েব সার্ভিস ব্যবহার করার সময় সার্ভার জটিলতার কারণে ডাউনটাইম সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। এই জন্য হোস্টিং সার্ভিস নেওয়ার সময় ৯৯% আপটাইম দেখে নিতে হয়।
- সিকিউরিটিঃ বর্তমান সময়ে প্রায় সব হোস্টিং প্রোভাইডার উচ্চ মানের সিকিউরিটি সিস্টেম ইউজ করে। তবে স্বল্প দামে হোস্টিং কেনার জন্য আমরা সস্তা প্রোভাইডারের কাছে যাই যেখানে কোন ভালো মানের সিকিউরিটি সাপোর্ট থাকে না। এতে আমাদের ওয়েবসাইট ম্যালওয়্যার অ্যাটাক সহ ভাইরাস আক্রমণের শিকার হয়।
- রিসোর্স সল্পতাঃ কিছু কিছু ওয়েব সার্ভার প্ল্যান আছে যেখানে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যান্ডউইথ, স্টোরেজ ও প্রোসেসিং পাওয়ার দেওয়া হয়। এ সকল ওয়েব হোস্টিং সার্ভিসে আপনার জন্য বরাদ্দ দেওয়া রিসোর্স ব্যতীত কিছু ইউজ করতে পারবেন না। অতএব আপনার সাইটে যদি বেশি রিসোর্স প্রয়োজন পরে তাহলে সাইট ক্রাশ করবে বা কিছু সময়ের জন্য ডাউন হয়ে থাকবে।
- নির্ভরশীলতাঃ আপনার ওয়েবসাইট বা সার্ভিস কেমন পারফর্ম করবে তা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে হোস্টিং কোম্পানির উপর। তাদের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার সাপোর্ট যদি দুর্বল হয় তাহলে আপনি আপনার জায়গা থেকে তা আপগ্রেড করতে পারবেন না। এ সকল কাজের জন্য আপনাকে প্রোভাইডারের উপর নির্ভর করতে হবে।
- স্বল্প কাস্টমাইজেশন অ্যাক্সেসঃ একটি ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি কখনই আপনাকে তাদের সার্ভিসের ফুল অ্যাক্সেস দিবে না। তারা আপনাকে তাদের দিক থেকে প্রয়োজনীয় কাস্টমাইজেশন করে তারপর আপনাকে দিবে। অর্থাৎ সব হোস্টিং প্রোভাইডার আপনার সার্ভারে সব ধরনের স্ক্রিপ্ট বা সফটওয়্যার ইন্সটল করতে দেবে না।
ওয়েব হোস্টিং একটি আধুনিক এবং গতিশীল প্রযুক্তি যা ইন্টারনেটকে এত সুন্দর এবং তথ্যবহুল করেছে। উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা ওয়েব হোস্টিং কি কত প্রকার এবং এর সুবিধা অসুবিধাসহ প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করলাম।