ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় প্রতি বছর নতুন নতুন ট্রেন্ড যুক্ত হচ্ছে। একজন মার্কেটার হিসেবে এই সকল ট্রেন্ড সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ট্রেন্ডের সাথে সাথে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি পরিবর্তন হয়ে থাকে। নতুন কি ট্রেন্ড মার্কেটে প্রচলিত ও সেগুলো কীভাবে কাজ করে তা না জানা থাকলে মার্কেটিং এ সফলতা পাওয়া অনেক কঠিন। আমাদের আজকের লেখায় ১০ টি ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
Table of Contents
১০ টি ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেন্ড
নিচে সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেন্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
লাইভ কমার্স
লাইভ কমার্স মূলত শুরু হয়েছে চায়না তে। সেখানে সেলার গণ লাইভে তাদের প্রোডাক্ট দেখানোর মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। এখন পর্যন্ত এই ট্রেন্ড চায়নাতে প্রচলিত থাকলেও ২০২৫ সালের মধ্যে তা বিশ্বব্যাপি অনেক দেশে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লাইভ কমার্সের সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে কাস্টমার সরাসরি প্রোডাক্ট দেখে তারপর সেখান থেকেই অর্ডার করতে পারছে।
অন্যদিকে সেলার উক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করে দেখাচ্ছে যে কারণে কাস্টমারের মনে সন্দেহ কাজ করছে না। এতে সেল যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি লাইভ ভিডিও মনিটাইজ করেও সেখান থেকে সম্মানী পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ কম্পিটিটরকে পেছনে ফেলতে চাইলে এই ধরনের ইউনিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।
অটোমেশন মার্কেটিং

মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কিছু কাজ আছে যা আমাদের বারবার করতে হয়। যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা মেসেজের উত্তর দেওয়া ও লিড সংগ্রহ। এই কাজ করতে মানুষের যেমন অনেক সময় লাগে তেমনি অর্থ খরচ হয়। কিন্তু অটোমেশন এর মাধ্যমে এই কাজ অঙ্ক দ্রুত করা যায়। বর্তমানে যে যে সেক্টরে অটোমেশন ইমপ্লিমেন্ট করা যায় তা হলো-
- ই-মেইল মার্কেটিং অটোমেশন
- লিড ম্যানেজমেন্ট
- সোশ্যাল মিডিয়া অটোমেশন
সাধারণত আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন প্রোডাক্ট নেওয়ার জন্য বা তথ্য জানার জন্য কোন পেজে ম্যাসেজ করি তখন দ্রুত উত্তর আসা করি। কিন্তু তখন যদি উক্ত পেজের অ্যাডমিন অনলাইন না থাকে তাহলে রিপ্লে আসে না আর আমরা অন্য পেজে মুভ করি। অথচ একটি চ্যাটবট তৈরি করে যদি ইন্টিগ্রেট করা থাকে তাহলে কিন্তু সাথে সাথেই কোয়েরির রেসপন্স করা সম্ভব হয়।
মূলত অটোমেশনের এই সুবিধা থাকায় মার্কেটিং দুনিয়ায় ধীরে ধীরে এটি যায়গা করে নিচ্ছে। সামনের বছরে এই বিষয়ে আরও বেশি জোর দেওয়া হবে। কারণ বিজনেসে অটোমেশন করার মাধ্যমে কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স আরও বৃদ্ধি করা যায় এবং ROI বেড়ে যায়।
ভিডিও মার্কেটিং
সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমানে মানুষ যত সময় দেয় তার মধ্যে প্রায় ৫৫% ভিডিও দেখে কাটায়। অন্যদিকে ইউটিউবে প্রতিদিন প্রায় ১২২ মিলিয়ন মানুষ ভিডিও দেখে থাকে। এই ডাটা থেকে বোঝা যায় কি পরিমাণ মানুষ ভিডিও দেখতে আগ্রহী। ভিডিও মার্কেটিং করার মাধ্যমে এই বিশাল পরিমাণ মানুষকে প্রতি দিন টার্গেট করা যায়। যে কোন বিজনেসের জন্য এই পরিমাণ ট্র্যাফিক সেল বৃদ্ধি করার জন্য অনেক কার্যকরী। যাইহোক, ভিডিও মার্কেটিং এর মাধ্যমে যে যে লাভ হয়-
- ইউজার এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি পায়
- ভিডিও মার্কেটিং প্রায় ৮০% পর্যন্ত কনভার্সন এনে দিতে পারে
- সার্চ পেজে এগিয়ে যাওয়া যায়
- ব্রান্ড অ্যাওয়ারনেস বৃদ্ধি পায়
- ভিজিটরের সাথে কানেক্ট হওয়া যায়
বর্তমানে অনেক ধরনের কার্যকরী ভিডিও মার্কেটিং মেথড রয়েছে। তবে প্রোডাক্ট সেল করার জন্য প্রোডাক্ট ডেমো, ইউজ টিউটোরিয়াল ও লাইভ স্ট্রিমিং অনেক কার্যকরী। ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় নিজের ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্টকে কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিতে মার্কেটিং তথা ভিডিও মার্কেটিং একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
ইনফ্লুয়েন্সার বা সেলিব্রিটি মার্কেটিং এর সাথে আমরা সবাই পরিচিত। টেলিভিশন অ্যাড থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর পেছনে সেলিব্রিটিরা কাজ করে থাকে। খেয়াল করে দেখবেন সাবান থেকে শুরু করে যত ধরনের প্রোডাক্টের অ্যাড আমরা টিভিতে বা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে দেখি তা সাধারণত চলচ্চিত্র বা নাটকের সেলিব্রিটি দ্বারা তৈরি করে নেওয়া হয়। বর্তমানে প্রচলিত মার্কেটে সাধারণত চার ধরনের ইনফ্লুয়েন্সার ক্যাটাগরি প্রচলিত রয়েছে, যেমন-
- মেগা-ইনফ্লুয়েন্সার- যাদের মিলিয়ন মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে তারা এই ক্যাটাগরিতে পরে।
- ম্যাক্রো-ইনফ্লুয়েন্সার- ১ লাখ থেকে ১০ লাখের মধ্যে ফলোয়ার থাকলে তারা ম্যাক্রো-ইনফ্লুয়েন্সার।
- মাইক্রো-ইনফ্লুয়েন্সার- ১০ হাজার থেকে ১ লাখের মধ্যে ফলোয়ার থাকলে মাইক্রো-ইনফ্লুয়েন্সার।
- ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সার- ১০ হাজারের নিচে যাদের ফলোয়ার তারা এই ক্যাটাগরিতে পরে।
তবে বর্তমানে এই ট্রেন্ড অনেকটা সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা সেলিব্রিটি তাদের উপরে ঝুঁকে পরেছে। সময়ের সাথে সাথে এই ট্রেন্ড আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ তাদের পছন্দের মানুষের দেখিয়ে দেওয়া প্রোডাক্ট কিনতে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। ডিজিটাল মার্কেটিং এ সামনের দিকে আগাতে চাইলে সেলিব্রিটি মার্কেটিং সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স
AI আমাদের জীবন ধারার প্রায় সব সেক্টরেই প্রভাব ফেলছে। এর ধারাবাহিকতায় এই প্রযুক্তি ইউজ করে মার্কেটিং স্ট্রাটেজিতে ব্যাপক উন্নতি করা সম্ভব হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে এআই যত উন্নত হচ্ছে এর সম্ভাবনা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাইহোক, ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স যে যে সুবিধা যোগ করে-
- ডিপ রিসার্চ
- কাস্টমার বিহেবিওর এনালাইজ করার সুবধা দেয়
- মার্কেটের উপর নির্ভর করে কন্টেন্ট ধরণ ও ফরম্যাট তৈরি করে দেয়
- রিয়েল-টাইম কাস্টমার সাপোর্ট সিস্টেম সুবিধা দেয়
- চ্যাট বট সুবিধা দেয়
- অ্যাড ক্যাম্পেইন তৈরি করতে সহায়তা করে
- অটোমেশনে সহায়তা করে
- কন্টেন্ট তৈরিতে সহায়তা করে
এগুলো বাদেও মার্কেটিং দুনিয়ায় এআই এর অনেক ধরনের অবদান রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে অনেক ধরনের মার্কেটিং প্রসেস অটোমেটেড করা হবে।
ভয়েস সার্চ
গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনে ভয়েস সার্চ করার পর থেকে এটি লাইম-লাইটে আসে। পরিসংখ্যান মতে বর্তমানে প্রায় ৫০ % মানুষ ভয়েস সার্চ ইউজ করে থাকে। অদূর ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। যা ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ার জন্য সতর্কতা সংকেত। কারণ এখন মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরি করার সময় এই বিষয়ে অনেক বেশি জোর দিতে হবে।
কীভাবে ভয়েস সার্চে নিজেদের প্রোডাক্ট ও সার্ভিস র্যাঙ্ক করা যাবে সে বিষয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। না হলে কম্পিটিশনে অনেক পিছিয়ে পরতে হবে। ভয়েস সার্চে ভালো করতে হলে লং টেইল কিওয়ার্ডের দিকে বেশি জোর দিতে হবে। পাশাপাশি কন্টেন্ট এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে যে ভিজিটর পরবে বা দেখবে সে যেন মনে করে তার সাথে কনভারসেশন হচ্ছে।
সিমেন্টিক ও জিরো ক্লিক কন্টেন্ট এসইও
সার্চ ইঞ্জিন তাদের অ্যালগরিদম এত শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছে যে এখন আর স্প্যামিং কাজ করে না। যে কারণে ভালো ভালো কন্টেন্ট তৈরি করার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনে ভালো করতে হলে সাম্প্রতিক ট্রেন্ড সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। বিশেষ করে সিমেন্টিক এসইও ও জিরো ক্লিক সার্চ।
এই দুটি বিষয় ২০২৫ সালে ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কারণ গতানুগতিক এসইও ধারা বর্তমানে তেমন ইফেক্টিভ হচ্ছে না। যে কারণে নতুন ভাবে এসইও করার প্রয়োজন পরছে।
পিপিসি মার্কেটিং

পেইড মার্কেটিং পূর্বে যেমন ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করেছে ভবিষ্যতেও রাজ করবে। কারণ পেইড মার্কেটিং এ ROI বেশি পাওয়া যায়। পাশাপাশি আশানুরূপ সেল বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। পিপিসি মার্কেটিং থেকে যেহেতু সার্চ ইঞ্জিন সহ সোশ্যাল মিডিয়াগুলো লাভবান হচ্ছে সেহেতু তারা এই ধরনের মার্কেটিং এর উপরে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
২০২৫ সালে এই সেক্টর আরও শক্তিশালী হবে এবং বিশেষায়িত অ্যাড এক্সপেরিয়েন্স এর উপরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। পাশাপাশি এআই ও ডাটা অ্যানালাইসিস মেথড গুলো কার্যকরী ক্যাম্পেইন তৈরি করতে সহায়তা করবে।
সোশ্যাল কমার্স মার্কেটিং
ইন্সটাগ্রাম তাদের সাম্প্রতিক আপডেটে “Buy Now” বাটন অ্যাড করেছে। এখন থেকে আপনি ইন্সটাগ্রামে কোন প্রোডাক্ট দেখে সরাসরি অর্ডার করতে চাইলে এই বাটুনে ক্লিক করে ডেলিভারি পেতে পারবেন। অন্যদিকে ফেসবুক অনেক আগেই এই ফিচার ইমপ্লিমেন্ট করেছে যা মার্কেটপ্লেস ট্যাব নামে পরিচিত।
এর অর্থ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি কোন প্রোডাক্ট দেখে পছন্দ করলে ওয়েবসাইটে না গিয়ে এখান থেকেই সরাসরি কিনতে পারবেন। ২০২৫ সালে এই ট্রেন্ড আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে কন্টেন্ট। কন্টেন্ট যদি ভালো না হয় তাহলে মার্কেটিং এ হাজার হাজার টাকা খরচ করে তেমন একটা সুবিধা করা যাবে না। কারণ কন্টেন্টের উপর নির্ভর করেই মানুষ প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে আকর্ষিত হবে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক আপডেট গুলোতে সার্চ ইঞ্জিনগুলো কোয়ান্টিটির উপরে গুরুত্ব না দিয়ে কোয়ালিটির উপরে জোর দিচ্ছে।
এই বছরে ভিডিও কন্টেন্ট অনেক ভালো পারফর্ম করবে। পাশাপাশি টেক্সট কন্টেন্ট আগের থেকে বেশি কয়ালিটি সম্পন্ন হতে হবে। না হলে তেমন ভালো পারফর্ম করতে পারবে না। সার্চ ইঞ্জিন গুলো সব সময় এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে বলে যেখানে ভিজিটর নিজেদের কানেক্ট করতে পারে।
শেষ কথা
প্রতি বছর ডিজিটাল মার্কেটিং ধারা পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসার কারণে গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে ইউনিক ভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন হচ্ছে। এরি ধারাবাহিকতায় নতুন বছরে যে যে ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেন্ড আসতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকার কোন বিকল্প নেই।