একটি সফল ই-কমার্স ওয়েবসাইটে কি কি ফিচার থাকবে তা নির্ভর করে বিজনেস ক্যাটাগরির উপরে। তবে প্রতিটি ই-কমার্স বিজনেসে কিছু কমন বিষয় থাকে। এই ফিচারগুলো ইউজ করেই বিজনেস ওনার তার কাস্টমারকে টার্গেট করে থাকে। তাছাড়া ইউনিক কনসেপ্টের ফিচার ব্যবহার করে কাস্টমারের বায়িং ইন্টেন্সনকে প্রভাবিত করা যায়। নিচে একটি সফল ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Table of Contents
ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য গুলো কি
একটি সফল ই-কমার্স ওয়েবসাইটে যে যে ফিচার গুলো থাকা প্রয়োজন সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কল টু অ্যাকশন

কল টু অ্যাকশন হচ্ছে এমন একটি ফিচার যা ভিজিটরের আকর্ষণকে প্রভাবিত করে। এই ফিচারের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে ভিজিটরকে কোন লিংকে ক্লিক করার জন্য অথবা কোন প্রোডাক্ট ভিউ করার জন্য প্রভাবিত করা। আপনি আপনার ওয়েবসাইটে এই ফিচার কীভাবে ইমপ্লিমেন্ট করেছেন তার উপরে কনভার্সন নির্ভর করে। বর্তমানে প্রায় ই-কমার্স ওয়েবসাইটে হিরো এরিয়ায় একটি স্লাইডার থাকে। ওয়েবসাইট ভেদে স্লাইডার ইমেজ আলাদা হলেও প্রায় ক্ষেত্রেই এটি সাইটের ডিজাইন উন্নত করার কাজে লাগে।
তবে এখানে যদি মিনিমাল স্লাইডার দিয়ে সেখানে আই ক্যাচিং CTA অ্যাড করে দেওয়া যায় তাহলে কাস্টমার কনভার্সন বেশি বৃদ্ধি পাবে। কারণ আপনার ওয়েবসাইট ওপেন করার পর প্রথমেই এই অংশ দেখা যায়। অন্যদিকে এই ফিচার ইউজ করে ভিজিটরকে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের বা প্রোডাক্টের সম্পর্কে জানাতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার পণ্য যদি মার্কেটে নতুন হয়ে থাকে তাহলে কল টু অ্যাকশন ইউজ করে ভিজিটরকে উক্ত পণ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে পারবেন।
হাই কোয়ালিটি ইমেজ
ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য ইমেজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রোডাক্টের ইমেজ যদি ভালো না হয় তাহলে তা কখনোই ভিজিটরের মনে আকর্ষণ তৈরি করবে না। নিজেকে দিয়ে চিন্তা করলেও আমরা বিষয়টা ক্লিয়ার হতে পারি। আমরা যখন কোন দোকানে কিছু কিনতে যাই তখন কিন্তু তা উলটে পাল্টে দেখে তারপর কিনি। আবার যখন জামা কাপড় কিনতে যাই তখন যে জামা বেশি সুন্দর ও ঝকঝকা দেখা যায় তার প্রতি আলাদা টান অনুভূত হয়।
অনলাইন স্টোরের জন্য হাই কোয়ালিটি ইমেজ প্রয়োজন হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে সুন্দর ভাবে প্রোডাক্ট উপস্থাপন। আপনি যত সুন্দর করে আপনার প্রোডাক্ট ইমেজ ডিসপ্লে করতে পারবেন আপনার সেল তত বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। একটি সফল ই-কমার্স বিজনেস পরিচালনা করার জন্য অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি হাই কোয়ালিটি প্রোডাক্ট ইমেজের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ফাস্ট লোডিং স্পিড
পরিসংখ্যান মতে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট লোড হতে যদি ৩ সেকেন্ডের বেশি সময় নেয় তাহলে ৫৩% ভিজিটর অন্য সাইটে চলে যায়। প্রতি এক সেকেন্ড ডিলে হওয়ার কারণে ৭% ভিজিটর কনভার্সন কমে যায়। অন্যদিকে ৭৯% সম্ভাব্য কাস্টমার ওয়েবসাইট স্লো লোড হলে উক্ত স্টোর থেকে পণ্য কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট সফল করতে হলে পেজ স্পিডের উপরে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। একটি অনলাইন স্টোরের লোডিং স্পিড উন্নত করতে চাইলে কিছু প্রয়োজনীয় স্টেপ ফলো করতে হবে, যেমন-
- কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক বা সিডিএন ইউজ করতে হবে
- ইমেজ অপ্টিমাইজ করে কমপ্রেস করতে হবে
- অবজেক্ট ও ব্রাউজার ক্যাশিং ব্যবহার করতে হবে
- ওয়েবসাইটের কোড মিনিফাই করতে হবে
- ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট হলে প্লাগিন ইউজ করা কমিয়ে ফেলতে হবে
- ডাটাবেজ অপ্টিমাইজ করতে হবে
এগুলো বাদেও নিয়মিত ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স তদারকি করতে হবে। কারণ ওয়েবসাইটের স্পিড কম থাকলে ভিজিটর কমে যাওয়ার পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনে অনেক সাইট র্যাঙ্ক হারাবে এবং কনভার্সন কমে যাবে। এতে বিজনেসে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। কোন বিজনেস ওনার যেন এই ধরনের খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন না হয় সে জন্য আমরা ITNutHosting থেকে প্রিমিয়াম হোস্টিং স্পেস দিয়ে থাকি। শক্তিশালী সিডিএন নেটওয়ার্কের পাশাপাশি সার্ভার গুলোকে এমন ভাবে অপ্টিমাইজ করা হয়েছে যাতে অনেক দ্রুত ওয়েবসাইট লোড হয়।
প্রোডাক্টের বাস্তবসম্মত ইমেজ
ই-কমার্স প্রচলিত হওয়ার শুরুতে প্রোডাক্ট ইমেজের জন্য আর্টিফিশিয়াল ছবি ইউজ করা হত। কিন্তু কাস্টমারের চাহিদা ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বর্তমানে রিয়েল প্রোডাক্ট ইমেজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও প্রোডাক্ট ভেদে ইমেজ তৈরি করার ধরণ আলাদা হয় তবে যত টুকু সম্ভব রিয়েল লাইফে উক্ত প্রোডাক্ট কেমন ভাবে ইমপ্লিমেন্ট হয় সেই ইমেজ বেশি বায়িং ইনটেনশন তৈরি করে।
রিয়েল লাইফ প্রোডাক্ট ইমেজ দেখানোর জন্য আপনি উক্ত প্রোডাক্ট একজন কাস্টমার কীভাবে তার দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগাবে সে বিষয়ে আইডিয়া দিতে পারবেন। এতে আপনার দুই দিক দিয়ে লাভ হবে, এক আপনার প্রোডাক্ট ডিসপ্লে ইউনিক হবে যা সেল কনভার্ট করবে। অন্যদিকে কাস্টমার আপনার ব্র্যান্ডকে অন্য কম্পিটিটর থেকে বেশি ট্রাস্ট করবে।
রিলেটেড প্রোডাক্ট
রিলেটেড প্রোডাক্ট একজন কাস্টমারের মনোযোগ ডাইভার্ট হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে। সাধারণত রিলেটেড প্রোডাক্ট সেকশনে উক্ত প্রোডাক্টের ক্যাটাগরির ভেতরে থাকা অন্যান্য প্রোডাক্ট শো করানো হয়। পাশাপাশি ওয়েবসাইটের সব থেকে বেশি ভিজিট হওয়া প্রোডাক্টকেও রিলেটেড প্রোডাক্ট হিসেবে রাখা যায়। এতে কাস্টমার মাল্টিপল পণ্যের মধ্যে থেকে যে কোন একটি নির্বাচন করার স্বাধীনতা পায়।
কাস্টমারের বায়িং ইনটেনশনকে প্রভাবিত করার জন্য আপনি এখানে একই গোত্রের আলাদা প্রোডাক্ট ডিসপ্লে করতে পারেন। অথবা উক্ত প্রোডাক্টের সাথে ইউজ করা যায় এমন সাপোর্টিভ প্রোডাক্ট রাখতে পারেন। যদিও বেশিরভাগ ই-কমার্স তাদের ওয়েবসাইটে এই ফিচার ইউজ করে তবে আপনি এখানে আপনার ক্রিয়েটিভিটি খাটিয়ে সেল বৃদ্ধি করতে পারবেন।
কাস্টমার রেটিং
কাস্টমার রেটিং ওয়েবসাইটে একটি পজিটিভ ভাইব নিয়ে আসে। অর্থাৎ কোন ওয়েবসাইটে যদি রিয়েল কাস্টমারের রিভিউ থাকে তাহলে নতুন কাস্টমার সেগুলো দেখে পণ্য কেনায় উৎসাহ বোধ করবে। আসলে মানুষের সাইকোলজি এরকম ভাবে কাজ করে থাকে। খেয়াল করে দেখবেন যে দোকানে মানুষ বেশি ভিড় করে সেখানে নতুন কাস্টমারের চাপও বৃদ্ধি পায়।
তাছাড়া আপনি কাস্টমার রিভিউ সেকশনের মাধ্যমে কাস্টমারকে অন্য প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানাতে পারবেন। এখানে নতুন পণ্য প্রোমোশন হওয়ার পাশাপাশি ভিজিটরের আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি ট্রাস্ট বৃদ্ধি পাবে। বড় বড় ই-কমার্স জায়ান্ট এই ফিচার ইউজ করে তাদের ভিজিটরকে কাস্টমারে পরিবর্তন করে ফেলে।

সহজ ও গোছানো ন্যাভিগেশন মেনু
ন্যাভিগেশন মেনু একটি ওয়েবসাইটের ম্যাপ হিসেবে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য সাজানো গোছানো নেভিগেশন মেনু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে অনেক ধরনের পণ্য থাকে। একজন ভিজিটর যখন ওয়েবসাইটে ঢুকে অগোছালো প্রোডাক্ট দেখে তখন তার মনে বিরক্তির উদ্রেক হয়ে থাকে। অন্যদিকে ভিজিটর যদি কোন পণ্য খুঁজে বের করতে চায় তাহলে তাকে ঝামেলায় পড়তে হয়।
আপনি ওয়েবসাইটের ন্যাভিগেশন মেনু যদি গোছালো ও ক্লিন ভাবে তৈরি করেন তাহলে ভিজিটর সহজেই আপনার ওয়েবসাইটে কি কি পণ্য পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ধারণা পাবে। ক্যাটাগরি আকারে পণ্য সাজানো থাকার কারণে কাস্টমারের প্রোডাক্ট খুঁজে বের করতে সুবিধা হবে। আপনার অনলাইন স্টোরে যদি অনেক বেশি পরিমাণে প্রোডাক্ট থাকে তাহলে ড্রপডাউন মেনু অথবা মেগা মেনু ইউজ করতে পারবেন। এতে কাস্টমার
কাস্টমাইজড চেকআউট পেজ
একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য চেকআউট পেজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, ইজি ন্যাভিগেশন এবং সাজানো চেকআউট পেজ অনলাইনে কেনাকাটার এক্সপেরিয়েন্স আনন্দ দায়ক করে তোলে। কোন কাস্টমার যদি এই বিষয় গুলোতে পজিটিভ এক্সপেরিয়েন্স পায় তাহলে সে রিটার্নিং কাস্টমারে পরিণত হয়ে থাকে।
কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য কাজের পাশাপাশি চেকআউট পেজ মিনিমাল এবং ইনফরমেটিভ হওয়া অনেক জরুরি। এখানে সবসময় এমন ডাটা রাখতে হবে যা প্রয়োজনীয় এবং কাস্টমার যেন সহজেই সব প্রসেস বুজতে পারে এমনভাবে সাজাতে হবে। মোটকথা চেকআউট পেজে যেন কাস্টমার বিরক্ত বোধ না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
শেষকথা
একটি ই-কমার্স বিজনেস সফল করার জন্য আমাদের অনেকগুলো প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে আমরা যদি বিজনেস বেশি সময় ধরে চালিয়ে যেতে চাই তাহলে অবশ্যই উপরে বর্ণিত বিষয় গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এখানে একটি সফল ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।