বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট তথা টেকনোলজি সম্পর্কিত অনেক প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আইটি সাপোর্টের প্রয়োজন হচ্ছে। এখানে বাস্তবধর্মী কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্যারিয়ার তৈরি করার সম্ভাবনার সৃষ্টি হচ্ছে। আজকের লেখায় আমরা আইটি সাপোর্ট কি এবং কীভাবে এখানে একটি স্মার্ট ক্যারিয়ার তৈরি করা যায় সে বিষয়ে ধারণা লাভ করবো।
Table of Contents
আইটি সাপোর্ট সার্ভিস কি?
আইটি সাপোর্ট এর অর্থ হলো টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদান করা। অর্থাৎ কোন বিজনেস বা অর্গানাইজের পুরো টেকনিক্যাল অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সমস্যা সমাধান করাকে আইটি সাপোর্ট বলে। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই ধরনের কাজ করে থাকে তাদের আইটি সাপোর্ট সার্ভিস বলে।
একজন আইটি টেকনিশিয়ান টেকনোলজির বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয়। কারণ তাকে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পুরো টেকনিক্যাল বিষয় গুলো পর্যবেক্ষণ করে সমস্যার সমাধান করতে হয়। যেমন, ধরুন একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে ১০ জন কর্মচারী কাজ করে। তাদের আন্ডারে ১০ টি কম্পিউটার আছে যা ইন্টারনেটের সাথে সরাসরি কানেক্টেড থাকে। কোন কারণে যদি একটি কম্পিউটার কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে পুরো প্রোজেক্ট ডেলিভারি দিতে দেরি হয়ে যাবে।
আইটি বিষয়ক টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলে নেটওয়ার্ক, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ এবং সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। এই কারণে প্রতিষ্ঠান গুলো আইটি সাপোর্ট সার্ভিস খোঁজ করে। মোটকথা, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্ক ইত্যাদি সহ অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয় পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করার প্রক্রিয়াকে আইটি সাপোর্ট সার্ভিস বলে।
আইটি এক্সপার্ট কে?
একজন আইটি এক্সপার্ট হওয়ার জন্য কিছু বিষয় জানা থাকতে হয় যা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
শিক্ষাঃ একজন অভিজ্ঞ আইটি এক্সপার্ট হওয়ার জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সাধারণত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে শিক্ষা লাভ করাকে আমরা আইটি এক্সপার্ট হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। তবে এই সেক্টর এর থেকেও আরও অনেক বড়।
একজন আইটি টেকনিশিয়ানকে একাধারে হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি ট্রাবলশুটিং বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হয়। গতানুগতিক ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার পাশাপাশি এ সকল বিষয়ে বিশদ জ্ঞান থাকা অতি জরুরি।
যাইহোক, আইটি এক্সপার্ট হওয়ার জন্য যে যে বিষয় জানতে হয় তা আপনি অনলাইনে বা অফলাইনে কোর্স করে শিখতে পারবেন। শেখা হয়ে গেলে পার্সোনাল প্রোজেক্ট করার পাশাপাশি কোন প্রতিষ্ঠানের আন্ডারে বাস্তবধর্মী কাজ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। এতে আপনার পুথিগত বিদ্যা বাস্তব জীবনে কীভাবে কাজে লাগে সে সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে।
সার্টিফিকেটঃ আমরা জানি কোন কাজের দক্ষতা প্রমাণ করার জন্য সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। একজন আইটি সাপোর্ট এক্সপার্ট হিসেবে যখন আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে জব খুঁজতে যাবেন তখন তারা আপনার সার্টিফিকেট দেখে যাচাই করবে।
আইটি টেকনিশিয়ান হিসেবে ট্রেনিং করার পর অনলাইনে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সার্টিফিকেট নিতে পারবেন। যেমন ভেন্ডর ভিত্তিক কোর্স করে Cisco’s CCNA, Microsoft MTA, PowerMTA, Windows Server, Virtualbox ইত্যাদি বিষয়ে A+, Network A+ ইত্যাদি সার্টিফিকেট নিতে পারবেন।
এই সার্টিফিকেট গুলো প্রমাণ করে আপনি আইটি সাপোর্ট ক্যাটাগরির কোন কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ। তাছাড়া যখন কোন প্রতিষ্ঠানে জবের জন্য যাবেন সেখানে তারা আপনার সনদ দেখে হায়ার করার সাহস পাবে। কারণ আপনি যে আইটি সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করেছেন।
অভিজ্ঞতাঃ পুথিগত বিদ্যা এবং অভিজ্ঞতার মধ্যে বিশদ পার্থক্য আছে। আমরা বই পুস্তকে যা শিখি তা আমাদের অনেক সীমিত জ্ঞান দান করে। অন্যদিকে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিখলে তা আমাদের জ্ঞান আরও পরিপক্ব করে।
তাছাড়া বাস্তব জীবনে কাজ করতে গেলে নানা ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয় যা বইয়ে সমাধান দেওয়া থাকে না। তখন শুধু কাজে লাগে বাস্তব জীবনে কাজ করার অভিজ্ঞতা। যাইহোক, আইটি সাপোর্ট বিষয়টি হচ্ছে টেকনিক্যাল বিষয়। এখানে সব কিছু হাতে কলমে করতে হয়।
ইলেকট্রনিক জিনিস হওয়ার কারণে নানা ধরনের সমস্যার দেখা দেয়। সেই সমস্যাগুলো কম খরচে সমাধান এবং ভবিষ্যতে যেন আর এই ধরনের সমস্যা না হয় সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হয়।
টেকনিক্যাল জ্ঞানঃ টেকনোলজিতে আপনি তখনি ভালো করতে পারবেন যখন এই বিষয়ে আপনার আগে থেকেই আগ্রহ থাকবে। টেকনোলজি বিষয়টি পুরোপুরি টেকনিক্যাল ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ আইটি সেক্টরে ভালো করতে হলে টেকনিক্যাল জ্ঞান সব থেকে বেশি থাকতে হবে।
আইটি প্রতিষ্ঠানে একজন টেকনিক্যাল লোক প্রয়োজন হয়-
- অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল ও আপগ্রেড করতে।
- সিস্টেম সবসময় সচল রাখতে।
- হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রয়োজন মোতাবেক পরিবর্তন বা আপগ্রেড করতে।
- সিস্টেম পারফর্মেন্স পর্যবেক্ষণ ও পরিমার্জন করতে।
- যে কোন সিস্টেম ইরর সাথে সাথে ট্রাবলশুট করে সমস্যা খুঁজে বের করতে।
- যে কোন সিস্টেম সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সমস্যা সমাধান করতে।
- আইটি অবকাঠামো সময়ের সাথে আপগ্রেড করতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাজেস্ট করতে।
এছাড়া পুরো আইটি ইনফ্রাস্টাকচার কীভাবে চলবে, কোথায় কি যোগ বা বাতিল করতে হবে ইত্যাদি বিষয় পরিচালনা করার জন্য যে সকল টেকনিক্যাল এবং কমিউনিকেশন স্কিল প্রয়োজন তা থাকতে হবে।
লেটেস্ট টেকনোলজিঃ পুরোনো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার যেকোনো কোম্পানির আইটি অবকাঠামোর জন্য ক্ষতিকর। পুরোনো ডিভাইস হ্যাক করা নতুন ডিভাইস হ্যাক করার থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ। এছাড়া নতুন টেকনোলজি ডিভাইস বা সফটওয়্যার অনেক উন্নত ও প্রয়োজনীয় ফিচার সাপোর্ট করে।
একজন আইটি টেকনিশিয়ানকে সবসময় নিত্য নতুন টেকনোলজি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এগুলো তার বিভিন্ন প্রোজেক্টে অ্যাপ্লাই করে দেখতে হবে। এতে কোন কর্পোরেট আইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচারে নতুন টেক প্রোডাক্ট যোগ করা সহজ হবে।
আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার
আপনি আইটি সেক্টরে দুইটি পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। নিচে পদ্ধতি দুইটি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট কন্ট্রাক্টরঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট কন্ট্রাক্টর অনেকটা ফ্রিল্যান্সিং এর মতই। অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য যেমন ক্লাইন্ট নিজে নিজে খুঁজে বের করতে হয় তেমনি এখানেও ক্লাইন্ট এবং প্রোজেক্ট নিজে খুঁজে বের করত হয়।
ক্লাইন্ট খুঁজে বের করার জন্য অনলাইন সার্চ, ই-মেইল মার্কেটিং, কোল্ড কল ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা সহজ হয়। তাছাড়া আপনি কোন আইটি কনসাল্টিং কোম্পানির কাছে সাহায্য চাইতে পারেন যেন তারা তাদের কোন প্রোজেক্টে আপনাকে অ্যাড করে নেয়। এতে একাধারে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে এবং নতুন নতুন মানুষদের সাথে মিলিত হয়ে পটেনশিয়াল ক্লাইন্ট খুঁজে বের করতে পারবেন।
চাকরিঃ বর্তমান বিশ্ববাজারে আইটি প্রফেশনালদের দাম অনেক বেশি। এখানে কাজের কোন শেষ না থাকলেও অভিজ্ঞ লোকের অনেক অভাব। তবে দিন দিন মানুষ অন্যান্য পেশার পাশাপাশি আইটি পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে।
একজন আইটি প্রফেশনাল হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া অন্যান্য পেশার থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ। বর্তমান সময়ে প্রতিটি দেশে ছোট বড় অনেক স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোয় আইটি সাপোর্ট সার্ভিসের প্রয়োজন তৈরি হচ্ছে।
আপনি যদি সঠিক পন্থায় একজন আইটি প্রফেশনাল হিসেবে নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারেন তবে অনায়াসে চাকরি ম্যানেজ করে ফেলতে পারবেন। একজন আইটি প্রফেশনালের বেতন বাংলাদেশের কাজের পরিবেশের উপর ভিত্তি করে ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার এর মত হয়ে থাকে। অন্যদিকে বাইরের দেশে বিশেষ করে উন্নত কান্ট্রিতে এই বেতন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তো আইটি প্রফেশনাল হিসেবে ক্যারিয়ার তৈরি করতে আপনাকে এই সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন এর পাশাপাশি সার্টিফিকেট নিতে হবে। অনেক সুন্দর এবং তথ্যবহুল পোর্টফলিও তৈরি করে সরাসরি সার্কুলার অনুযায়ী জবে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন অথবা আইটি কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে পারবেন। মনে রাখবেন, আপনার সমস্যা সমাধানের পারদর্শিতা যত বেশি হবে কম্পিটিশনে তত এগিয়ে থাকবেন।
আইটি প্রফেশন বর্তমান সময়ে তরুণ তরুণীদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয় একটি পেশা। এখানে যেমন কাজের ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশ করা যায় তেমনি অনেক ভালো আয় করা যায়। পুরো লেখায় কীভাবে নিজেকে একজন আইটি কনসালটেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।