কি-ওয়ার্ড শব্দটা এসইও এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে খুবই জরুরি একটি বিষয়। আমরা অনেকেই আছি এসইও বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেক অ্যাডভান্স বিষয়ে অগাধ জ্ঞান রাখি। কিন্তু কি-ওয়ার্ড শব্দটি নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিতে থাকি। অনেকের মনে প্রশ্ন হয় যদি একটি ওয়ার্ডকে কি-ওয়ার্ড বলে, তাহলে চারটি ওয়ার্ডকে কি কি-ওয়ার্ড বলা যায়? এসব অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে মূলত আমাদের এই আয়োজন। তাই, আজকে আমাদের আর্টিকেলের বিষয় নির্ধারণ করেছি, ‘কি-ওয়ার্ড কী এবং এসইও তে কি-ওয়ার্ডের অর্থ কী’ এই নিয়ে। আশা করি ভালো লাগবে।
কি-ওয়ার্ড কী?
কি-ওয়ার্ড হচ্ছে এক প্রকার আইডিয়া এবং টপিক যা একটি কন্টেন্ট সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে। এসইও এর ক্ষেত্রে একজন ইউজার গুগলে যে সমস্ত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ লেখে থাকে, তাকেই কি-ওয়ার্ড বলে থাকে। আরো সহজ করে বললে বলা যায়, যে কি-ওয়ার্ড একটি কন্টেন্টকে সবচেয়ে ভালো রিপ্রেজেন্ট করে, বা ঐ নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড দিয়ে ঐ কন্টেন্টকে গুগলে খুঁজে পাওয়া যায় তাই কি-ওয়ার্ড।
একজন কন্টেন্ট রাইটার যখন একটি কন্টেন্ট লেখে, তখন সেই কন্টেন্টটি খুঁজে পাওয়ার জন্য স্পেসিফিক কিছু শব্দকে টার্গেট করে, যাতে করে কেউ সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে ঐ সমস্ত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দ্বারা সার্চ করলে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত যা কন্টেন্ট কে সবচেয়ে ভালো রিপ্রেজেন্ট করে, সে সমস্ত শব্দকে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ বলে।
Keyword কেন গুরুত্বপূর্ন?
কি-ওয়ার্ডের গুরত্ব বোঝার আগে আমরা আপনাকে আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই, কি-ওয়ার্ডের ভূমিকাটা কি?
কি-ওয়ার্ড মূলত একটি যোগসূত্র তৈরি করে আপনার কন্টেন্ট এবং সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে। অর্থাৎ, আপনার কন্টেন্ট লেখার সময় যে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ফোকাস করা হয়, সেটির মাধ্যমে পুরো কন্টেন্টটি কি নিয়ে লেখা হয়েছে তা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে। আমি বোঝার সুবিধার্থে কন্টেন্টের শিরোনাম কে কি-ওয়ার্ড বলার চেষ্টা করছি। অর্থাৎ একটা শিরোনাম যেমন পুরো কন্টেন্টকে সেটির প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করে, তেমনি একটি কি-ওয়ার্ড সার্চ ইঞ্জিনকে আপনার কন্টেন্ট কি নিয়ে লেখা হয়েছে তা নিয়ে ধারণা দিয়ে থাকে।
আমাদের সকলের প্রধান টার্গেট থাকে আমাদের কন্টেন্ট কে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজের প্রথম সারিতে রাখা। তাই সার্চ ইঞ্জিন গুলোকে আপনার কন্টেন্ট টি খুঁজে পেতে বা র্যাঙ্ক করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে এই কি-ওয়ার্ড।
ঘটনা ১- সাকিব একটি আর্টিকেল লিখেছে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে এবং ভালো রেফারেন্স দিয়ে। সবকিছু সে খুব সুন্দর করে অপটিমাইজ করেছে, কিন্তু কন্টেন্ট লেখার আগে তার কি-ওয়ার্ড নিয়ে ধারণা ছিলো না। কি-ওয়ার্ড কোথায় ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কেও তার কোন ধারণা নেই, ফলে তার কন্টেন্ট সার্চ ইঞ্জিনে শো-করছে না।
ঘটনা বিশ্লেষণ- সাকিবের ঘটনায় ফেরার আগে আমি যদি আপনাদের একটি প্রশ্ন করি- ‘আচ্ছা আপনি কোন কিছুর প্রয়োজন হলে গুগলকে কী লেখে সার্চ করেন?’ আপনি যাই লেখে সার্চ করেন না কেন, আমরা সেটিকে বলছি কি-ওয়ার্ড। ধরুন আপনি সার্চ করলেন ‘How to create a blogger account’? এখন সার্চ ইঞ্জিন গুলো আপনাকে কিসের রেজাল্ট দেখাবে? নিশ্চই কিভাবে ব্লগ একাউন্ট খুলতে হয় তা সম্পর্কিত ফলাফল দেখাবে। এতটুকুতে আমাদের কোন ঝামেলা নেই।
এবার লক্ষ্য করি, গুগল কাকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে প্রথম সারিতে দেখাবে, নিশ্চই ‘How to create a blogger account’? এটার সাথে ম্যাচ করে এমন পোস্টই প্রথমে দেখাবে। হ্যাঁ, এমনই সাধারনত হয়।
অর্থাৎ আমরা দেখতে পারলাম, আমাদের কি-ওয়ার্ডের সাথে নিল রঙের হেডলাইন গুলো মিলে যাচ্ছে। এই মিলে যাওয়ার কারণে গুগল আমাদেরকে এই কন্টেন্টটি সহজে খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে।
তবে আমি বলছি না, শুধুমাত্র হেডলাইন আর কি-ওয়ার্ড ম্যাচ করার কারণে সার্চ ইঞ্জিন গুলো আপনার লেখাকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম সারিতে রাখবে। সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে র্যাঙ্ক করায় তা সম্পর্কে আরেকটু ভালো আইডিয়া পেতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।
এবার আসি সাকিব প্রসঙ্গে,
সাকিব হয়তো একজন সাধারন ইউজার কিভাবে সহজে তার আর্টিকেলটি খুঁজে পাবে সেই সম্পর্কে চিন্তা করেনি। সে কি-ওয়ার্ড গুলো একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর দিক থেকে চিন্তা করে লেখেনি। ফলে সহজে কোন ইউজার তার আর্টিকেলটি খুঁজে পাচ্ছে না।
এখান থেকে আমরা আরেকটা বিষয় যদি লক্ষ্য করি, তাহলে যা দাঁড়ায় সেটি হচ্ছে, আপনি যদি সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে আপনার আর্টিকেলটি নিয়ে যেতে চান তাহলে আপনার কি-ওয়ার্ড এবং টাইটেল একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর দিক থেকে চিন্তা করতে হবে।
একজন সাধারণ ব্যবহারকারী কি নিয়ে সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে সার্চ করে বেশি পরিমানে তা সম্পর্কে ধারনা পেতেই কি-ওয়ার্ড রিসার্চ টার্মটির উদ্ভব। এই কি-ওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে যদি আপনি জানতে পারবেন ইউজাররা কি কি বিষয় সবচেয়ে বেশি খুঁজছে।
কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করে আপনি যদি একটি ভালো মানের কি-ওয়ার্ড খুঁজে পেয়ে আপনার আর্টিকেল ঐ নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডকে কেন্দ্র করে লেখেন, এবং সাধারণ অপটিমাইজেশন রুল গুলো মেনে চলেন, তাহলে ধারণা করা যায়, সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজে আপনার আর্টিকেলটি প্রথম সারিতে থাকবে।
Long-tail keyword কী?
Long-tail keyword হচ্ছে- খুব নির্দিষ্ট ফোকাস বিশিষ্ট তিন/চার এরও অধিক শব্দ দিয়ে গঠিত শব্দ গুচ্ছ।
-Stephen Mahaney
একজন গ্রাহক যখন অনেক গুলো শব্দ দিয়ে সার্চ করেন, তিন বা চারের অধিক শব্দ যখন সার্চ ইঞ্জিনে ব্যবহার করেন, তখন তিনি খুব নির্দিষ্ট কিছু খুঁজে থাকেন। যা অনেক সময় ভয়েস সার্চ এ দেখা যায়।
- Weather
- What is the weather of …. City.
উপরের দুইটা কি-ওয়ার্ড যদি আমরা লক্ষ্য করি, প্রথম কি-ওয়ার্ডকে আমরা বলি শর্ট টেইল কি-ওয়ার্ড, আর দ্বিতীয় কি-ওয়ার্ডকে আমরা বলি লং টেইল কি-ওয়ার্ড। প্রথম ধরণের কি-ওয়ার্ড আমরা ব্যবহার করি সাধারণত কি-বোর্ড সার্চে। আর দ্বিতীয় ধরনের কি-ওয়ার্ড সার্চ করি ভয়েস সার্চে। Long tail keyword গুলো সাধারণত কম ভলিয়মের হয়ে থাকে, এবং অল্প সংখ্যক নির্দিষ্ট টপিকের পোস্টে এই ধরনের কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কি-ওয়ার্ডের কোয়ালিটি
কি-ওয়ার্ডের কোয়ালিটি অনেক রকম হয়ে থাকে। এখানে প্রধান প্রধান কয়েকটি কি-ওয়ার্ডের কোয়ালিটি নিয়ে লেখবো। শুরুতে একনজরে দেখে নিনি-
- সার্চ ভলিয়ম
- কম্পিটিশন
- প্রাইস(কস্ট পার ক্লিক)
- শব্দের সংখ্যা
- Intend বা প্রবণতা
সার্চ ভলিয়ম
একটি কি-ওয়ার্ডের সার্চ ভলিয়ম দ্বারা বোঝা যায়, ঐ কি-ওয়ার্ডটি কতবার সার্চ করা হয়েছে। কোন কি-ওয়ার্ডের সার্চ ভলিয়ম যদি ৩০০ হয়, তাহলে বলা যায় ঐ কি-ওয়ার্ডটি মাসে ৩০০ বার সার্চ করা হয় গুগলে। এখানে আরেকটি বিষয় ম্যাটার করে, সেটি হচ্ছে লোকেশন। এই লোকেশন এর উপর ভিত্তি করে সার্চ ভলিয়মের পরিবর্তন হয়।
বাংলাদেশে যে কি-ওয়ার্ড বেশি পরিমানে সার্চ ভলিয়ম থাকে, তা পার্শ্ববর্তী দেশে ঐ পরিমান নাও থাকতে পারে। তাই এই সার্চ ভলিয়মের ক্ষেত্রে লোকেশন বিষয়টি ভালো করে দেখতে হবে।
আপনারা যদি সার্চ ভলিয়মের সঠিক তথ্য জানতে চান, তাহলে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে পেইড কি-ওয়ার্ড রিসার্স টুল ব্যবহার করবেন। কারণ লোকাল যেসকল টুলস আপনাকে সার্চ ভলিয়ম সম্পর্কে ধারণা দিবে, তার সাথে বাস্তবতার মিল খুব কমই পাওয়া যায়। যেমনঃ মজ, এহরেফ, এসইমরাশ ইত্যাদি অনেক পেইড কি-ওয়ার্ড রিসার্স টুল রয়েছে।
কম্পিটিশন
সার্চ ভলিয়মের পর আরেকটি বিষয় নজরে আনা সবচেয়ে বেশি জরুরি, সেটি হচ্ছে কম্পিটিশন স্কোর । হ্যাঁ, সার্চ ভলিয়ম যত বেশি তত ভালো। কিন্তু সব ক্ষেত্রে বিষয়টা সত্য নয়। সার্চ ভলিয়ম যত বেশি হবে, এর অর্থ দাঁড়াবে যে- ঐ স্পেসিফিক কি-ওয়ার্ডে প্রতি মাসে সার্চের সংখ্যাও বেশি। তবে লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, যে কি-ওয়ার্ডে সার্চ ভলিয়ম বেশি ঐ কি-ওয়ার্ডের কম্পিটিশনও বেশি। এক্ষেত্রে একটি কি-ওয়ার্ড টার্গেট করার ক্ষেত্রে কম্পিটিশন বিষয়টা নজরে রাখা দরকার। ভিন্ন ভিন্ন এসইও টুল ভিন্ন ভিন্ন নামে এটিকে ডেকে থাকে।
KD: Semrush কি-ওয়ার্ডের কম্পিটিশন বোঝাতে KD ব্যবহার করে থাকে। যত বেশি স্কোর হয়, তত বেশি কম্পিটিশন বোঝায়।
Difficulty: মজ কি-ওয়ার্ডের কম্পটিশন বোঝাতে ডিফিকাল্টি শব্দটা ব্যবহার করে থাকে।
সিপিসি (কস্ট পার ক্লিক)
এটিকে সংক্ষেপে বলা হয় সিপিসি। একটি কি-ওয়ার্ডের সিপিসি দ্বারা বোঝানো হয়, ঐ নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ডের প্রতি ক্লিকের বিপরীতে কত টাকা দিতে হবে যদি সার্চ ইঞ্জিনে ঐ কি-ওয়ার্ড দ্বারা এড দেখানো হয়। সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এ আমরা দেখেছি কিভাবে সার্চ ইঞ্জিনে অ্যাড দিতে হয়। ঐ অ্যাডের দেয়ার জন্য প্রতি কি-ওয়ার্ডের বিপরীতে কত ডলার খরচ করতে হবে, তার ধারণাই মূলত দিয়ে থাকে কস্ট পার ক্লিক, অর্থাৎ সিপিসি।
শব্দের সংখ্যা
একটি কি-ওয়ার্ড সর্ট-টেইল হবে নাকি লং টেইল হবে তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় সর্ট-টেইল কি-ওয়ার্ড গুলোর কম্পিটিশন অনেক বেশি থাকে। তাই স্পেসিফিক কিছু করতে গেলে দেখা যায়, কি-ওয়ার্ড হিসেবে লং-টেইল কি-ওয়ার্ডকে নিতে হয়।
Intend বা প্রবণতা
কি-ওয়ার্ড সিলেকশনের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূলত কি উদ্দেশ্যে কি-ওয়ার্ড সার্চ করা হয় তাই হচ্ছে ইন্টেন্ট অফ এ কি-ওয়ার্ড। সাধারনত তিন ধরণের ইন্টেন্ড কি-ওয়ার্ডের দেখা পাওয়া যায়-
- ট্রানজেকশনাল
- নেভিগেশনাল
- ইনফরমেশনাল
ট্রানজেকশনাল Intend
যে ধরণের কি-ওয়ার্ড সরাসরি কোন কিছু কেনার উদ্দেশ্যে সার্চ করা হয়, তাকে বলা হয় ট্রানজেকশনাল ইন্টেন্ট কি-ওয়ার্ড। যেমন ‘Size 10 red sneakers under 80 dollars, where can i sign up for cheap flight alerts’ ইত্যাদি।
নেভিগেশনাল Intend
কোন কিছু নেভিগেট করার মত অর্থাৎ খোঁজাখুঁজি মূলক কি-ওয়ার্ড গুলোকে বলা হয়ে থাকে নেভিগেশনাল ইন্টেন্ড কি-ওয়ার্ড। যেমন, (what is serp, Barack Obama twitter’ ইত্যাদি।
ইনফরমেশনাল Intend
এটি খুব সহজ ভাবেই অনুমেয়, সাধারণত আমরা কোন কিছু খুঁজতে, জানতে যে ধরণের কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করি, সেটাই ইনফরমেশনাল ইন্টেন্ড কি-ওয়ার্ড। যেমনঃ ‘Where is Cox’s Bazar, What is seo’ ইত্যাদি।
একের অধিক শব্দ যদি থাকে তাহলে তাকে কি কি-ওয়ার্ড বলা যায়?
হ্যাঁ, যায়। কি-ওয়ার্ড হচ্ছে মূলত সার্চ ইঞ্জিনে আপনি যা যা সার্চ করবেন সব। যেখানে যদি একটি শব্দ ব্যবহার করেন তাহলে ঐটি পুরোটাই কি-ওয়ার্ড। আর যদি একের অধিক শব্দ থাকে তাকে বলবেন লং-টেইল কি-ওয়ার্ড।