You are currently viewing পিপিসি মার্কেটিং কি? কিভাবে পিপিসি মার্কেটিং কাজ করে?

PPC বা পে-পার-ক্লিক হচ্ছে একটি ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি, যার প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে- এটিকে পে করতে হয় শুধুমাত্র যখন অনলাইন ইউজাররা পিপিসি অ্যাডে ক্লিক করে তখন। আর বেশিরভাগ ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি শুধু অ্যাড শো করার উপর টাকা নিয়ে থাকে। এতে করে কখনো ক্যাম্পেইন সফল হয়, আবার কখনো বিফল হয়। কিন্তু পিপিসি মার্কেটিং এ শুধুমাত্র অ্যাডে ক্লিক করলে তবেই এটিকে পে করতে হয়। অর্থাৎ আপনার টাকা বিফলে যাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। 

আর এই অ্যাড গুলো তখনই শো করে যখন অডিয়েন্সের কি-ওয়ার্ড এবং ক্রাইটেরিয়ার সাথে ম্যাচ করে। এই ধরনের অ্যাডের দেখা বিভিন্ন এপস গুলোতেও মিলে। এছাড়াও সবচেয়ে বেশি পরিমানে এই ধরনের অ্যাড দেখা যায় গুগল, বিং, এবং ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিনে। 

পিপিসি কী? 

পিপিসি এর ইতিহাস

পিপিসি বা পে-পার-ক্লিক হচ্ছে একটি অ্যাডভার্টাইজিং মডেল, যেখানে অ্যাডভার্টাইজারদের পে করতে হয় প্রতি ক্লিকে অ্যাড করার পর। মার্কেটাররা প্রথমে একটি অ্যাড তৈরি করে এরপর বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে এই অ্যাড গুলো বিড করে। সার্চ ইঞ্জিন ওয়েব পেইজে রেজাল্ট শো করানোর ফলো বেশির ভাগ ক্লিক রিলিভেন্ট সার্চ এর থেকে আসে। ফলে সবচেয়ে যোগ্য / প্রয়োজনীয় অডিয়েন্স পাওয়া যায়। 

পিপিসি মার্কেটাররা প্রথমে একটা ল্যান্ডিং পেইজ তৈরি করে সফল একটি ক্যাম্পেইন রান করানোর জন্য। এরপর তারা অ্যাড গুলো এমন ভাবে ডিজাইন করে করে যেন ক্লিক করার সাথে সাথে ল্যান্ডিং পেইজে অডিয়েন্স চলে আসে।  একজন সফল মার্কেটার এর উচিত যতগুলো অডিয়েন্স তার ওয়েবসাইটে আসে, ততগুলো অডিয়েন্সের ডাটা কালেক্ট করা। অন্তত পক্ষে ই-মেইল হ’লেও কালেক্ট করা উচিত যাতে করে পরবর্তীতে তাদেরকে টার্গেটেড অডিয়েন্সে রুপান্তর করা যায়। 

বিভিন্ন রকম পিপিসি অ্যাড দেখা যায় যেমন সার্চ অ্যাড, লোকাল সার্চ অ্যাড, ডিসপ্লে অ্যাড, এবং রিমার্কেটিং অ্যাডস। এই অ্যাড গুলো কখনো দেখা যায় ওয়েব পেইজে, কখনো দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়া ফ্ল্যাটফর্মে, এবং কখনো মোবাইল অপ্যাস এ দেখা মিলে। বিশেষ করে ইমো টাইপের সোশ্যাল মিডিয়াতে অ্যাড গুলো দেখা যায়। 

এই অ্যাড গুলোর আরেকটি বিশেষত্ব হচ্ছে দেখতে অনেকটা কন্টেন্টের সাথে ম্যাচ করে যায়, যেন অ্যাড এর অংশটিও কন্টেন্টের একটি অংশ। এতে করে অনেক অডিয়েন্স বিভ্রান্ত হয়ে ক্লিক করে বসেন তবে, ঘাবড়ানোর কারন নেই। সোশ্যাল মিডিয়া ফ্ল্যাটফর্মে একটু সতর্ক থাকলে এগুলো এড়িয়ে চলা যায়। ফেসবুক এবং টুইটারে এই ধরনের অ্যাড শো করানোর সময় তারা ছোট করে লেখে দেয় ‘স্পন্সর্ড বা প্রমোটেড’। তাই পাঠক একটু চোখ কান খোলা রাখলে আপনিও এই ধরনের অ্যাড সহজে চিনতে পারবেন।

পিপিসি এর ইতিহাস

নব্বই এর দশকে অনেক ওয়েবসাইট দাবি করে থাকে পিপিসি মডেলের আবিস্কারক হিসেবে। উদাহারন হিসেবে বলা যায়,  প্ল্যানেড ওয়াসিসের কথা। তারা ১৯৯৬ সালের দিকে একটি পিপিসি নিয়ে ডকুমেন্ট পাবলিশ করে। ঐ ডকুমেন্টে তারা সর্বপ্রথম পিপিসি শব্দের কথা জানা যায়। তখন ‘আরেক ইন্টারফেস ২’ নামক একটি ডেভেলোপার প্রতিষ্ঠান এই রকম একটি বিজনেস মডেল নিয়ে হাজির হন। তাদের ইন্টারফেসের তৎকালীন নাম ছিলো ‘পে-পার-ভিজিট’। তাদের প্রোগ্রামটি মূলত ডিজাইন করা হয়েছিলো ডেক্সটপ অ্যাপলিকেশনের জন্য যেখানে ফিচারিং লিংক থেকে ইনফরমেশনার এবং কমার্সিয়াল ওয়েবসাইটে রেফার করবে। যতদূর জানা যায়, ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে অবধি ৪০০ মেজর ব্রান্ড পে করেছিলো ০.০০৫-০.২৫ ডলার প্রতি ক্লিকের বিপরীতে। 

১৯৯৮ সালের দিকে গোটুডট কম (বর্তমানে ইয়াহু কিনে নেওয়ায় এর পরিবর্তীত নাম হয়েছে ‘ইয়াহু জিমিনি’), প্রতিষ্ঠানটি পে-পার-ক্লিক এর নামে একটি পূর্নাঙ্গ প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলো ক্যালিফোর্নিয়ার টেড কনফারেন্সে। ধারনা করা হয়, এই প্রেজেন্টেশন এবং কনফারেন্সের মাধ্যমেই পূর্নাঙ্গ পিপিসি মডেলের আবির্ভাব হয়েছে। আর এই মডেলের পুরো কৃতিত্ব দেওয়া হয় আইডিল্যাব এবং গোটু ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা বিল গ্রোসকে। 

গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনে সর্ব প্রথম অ্যাডভার্টাইজিং কনসেপ্ট নিয়ে আসেন ১৯৯৯ এর শেষ মাসে। যদিও গুগল অ্যাডওয়ার্ড এর আবির্ভাব হয় পরের বছর অক্টোবর মাসে। গুগলে পিপিসি চালু হয় ২০০২ সালের দিকে। এর আগের কন্সেপ্ট এর নাম ছিল Cost-per-thousand impressions বা কস্ট পার মিলি (CPM) নামে। 

কিভাবে পিপিসি কাজ করে? 

পিপিসি মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম। পে পার ক্লিক অ্যাডভার্টাইজ নির্ভর করে বিডিং সিস্টেম এর উপর যা পরিচিত ‘অ্যাড অকশন (Auction)’ নামে। এই অ্যাড অকশনের মাধ্যমে বেশিরভাগ সার্চ ইঞ্জিন অনলাইনে পিপিসি মার্কেটিং কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে থাকেন। 

অ্যাড অকশন কি?

অ্যাড অকশন এই নামের চেয়ে সবাই বেশি চেনে অ্যাডসেন্স পেইজ নামে। অর্থাৎ খুব কম লোকজনই জানেন বা শুনেছেন এই অ্যাড অ্যাকশন। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি যতজন অ্যাড অকশন না চেনেন তার থেকে বেশি চেনেন অ্যাডসেন্সকে। অ্যাডসেন্স কথাটা সরাসরি কেন বললাম না অনেকের মনে এই প্রশ্ন আসতে পারে। হ্যাঁ, আমি বোঝানোর সার্থে অ্যাডসেন্স কথাটা বললে সরাসরি বুঝে যেতেন, কিন্তু যারা বিস্তারিত জানার আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন তাদের জন্য মূলত লেখা যাতে পরবর্তীতে আপনি টার্ম গুলো ধরতে পারন বা ভালো বুঝতে পারেন বিষয় গুলো। 

অ্যাড অ্যাকশন দু’ ধরনের হয়। এক, আপনার ওয়েবসাইটে কতগুলো অ্যাড শো করাবেন তার উপর নির্ভর করে আপনি ধারণা পাবেন কত টাকা আয় করতে পারবেন অ্যাড থেকে। দুই, অ্যাড অ্যাকশনে একজন মার্কেটার প্রতি ক্লিকের জন্য কত খরচ করতে রাজি আছেন সেটিও সার্চ ইঞ্জিন গুলোকে বুঝিয়ে দিতে পারবেন, এই দু’টিই অ্যাড অ্যাকশন।

এই অ্যাড অ্যাকশনে একজন অ্যাডভার্টাইজার ঠিক তার প্রয়োজন মত কি-ওয়ার্ডে বিড (Bid) করে থাকেন। অর্থাৎ যে কি-ওয়ার্ডের জন্য সিলেক্ট করেন, সেই সকল কি-ওয়ার্ড থেকে ওয়েবসাইটে ভিজিটর আশা করেন। একটি উদাহারণ দিলে বিষয়টি আরো ক্লিয়ার হয়ে যাবেন।

ধরুন একজন অ্যাডভার্টাইজার চাচ্ছেন, তার ওয়েবসাইটের শীতকালিন পোশাক বিক্রি করবেন। তখন তিনি হয়তো একটি কি-ওয়ার্ড সিলেক্ট করবেন ‘Winter Jacket’ নামে এবং এই কি-ওয়ার্ডের জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করা খুব কঠিন বিষয়, অনেকাংশে সম্ভব না। কারন খুবই হাই-কম্পিটিটিভ কি-ওয়ার্ড।

হাই কম্পিটিটিভ বলে কি মার্কেটারদের জন্য তাদের ব্যবসা প্রমোট করার আর কোন পথ খোলা নেই? 

হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। মূলত এই কারণেই পিপিসি মার্কেটিং এর উদ্ভব। এরকম হাই কম্পিটিশনের জন্য অ্যাডভার্টাইজারকে  সার্চ ইঞ্জিনে বিড করতে হয়। অনেকটা এইরকম যে, অ্যাডভার্টাইজার সার্চ ইঞ্জিনকে জিজ্ঞেস করছেন, আচ্ছা ‘গুগল’ আপনাকে ‘Winter jacket’ কি-ওয়ার্ডে প্রতি ভিজিটর বিপরীতে কত টাকা করে দিতে হবে। গুগল তার এরিয়া দেখে, লোকেশন দেখে কি-ওয়ার্ডের ধরন দেখে মার্কেটারদের জানিয়ে দেয় কত টাকা দেওয়ার বিপরীতে তারা কতগুলো অ্যাড দেখাবে বা প্রতি ক্লিকে কত করে দিতে হবে এই সব জানিয়ে দিবে। মূলত এগুলোই বিডের অংশ। তাই বলে, সার্চ ইঞ্জিন গুলো শুধুমাত্র টাকার ধরন দেখে র‍্যাঙ্ক করিয়ে দিবে অ্যাডে? 

না, বাস্তবিক অর্থে সেটিও হয় না। একটা কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সার্চ ইঞ্জিন গুলো মূলত সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে তাদের অডিয়েন্সের সুবিধার কথা। এই দিকটি মাথায় রেখে তারা সার্চ ইঞ্জিনের এলগরিদম সাজিয়ে থাকে। তো প্রশ্ন হচ্ছে- যত বেশি টাকা তত উপরে র‍্যাঙ্ক? 

না, সার্চ ইঞ্জিন গুলো আরও অনেক বিষয়ের দিকে নজর দিয়ে থাকেন। যেমন- কোয়ালিটি স্কোর, অ্যাড এক্সটেনশন ইত্যাদি। কারন তাদের মূল লক্ষ্যই থাকে ব্যবহারকারীদের সুবিধার কথা। ধরুন একজন ইউজার ‘Winter Jacket’ নামের কি-ওয়ার্ড গুগলে সার্চ করলো। এখন যদি গুগল টাকা খেয়ে উল্টাপাল্টা রেজাল্ট তাদের হোমপেইজে দেখায় তাহলে ইউজারকি সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে? অবশ্যই পাবে না। তাই যেভাবেই হোক সার্চ ইঞ্জিনগুলো ইউজারদের সর্বোচ্চ সুবিধার কথা। এই সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে অ্যাড দেখানোর সুযোগ দিয়ে থাকে।

ধরুন একজন অডিয়েন্স সার্চ করলো ‘Winter Jacket’। তখন গুগলের ইন্টিলিজেন্ট সার্চ এলগরিদম অনেক গুলো দিক বিবেচনা করে তার নিকট সার্চ রেজাল্ট পাঠায়। যদিও আসলে গুগল কি কি বিষয় নিয়ে যাচাই বাচাই করে তা কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়, তবুও কিছু বিষয় অনেক সার্চ ইঞ্জিন বোদ্ধারা ধারণা করে থাকেন। যেমন আপনি কোথায় থেকে সার্চ করছেন তার আশেপাশে কারা উইনটার জ্যাকেট বিক্রি করে, তাদের রিভিউ কেমন, তাদের ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট কেমন, গুগল মাই বিজনেসে সব তথ্য দেয়া আছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে গুগল সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে রেজাল্ট শো করায়। 

এসইএম(SEM) এবং পিপিসি(PPC) এর পার্থক্য 

এসইএম(SEM) এবং পিপিসি(PPC) এর পার্থক্য

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এবং পে-পার-ক্লিক মার্কেটিং উভয়ের একই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ উভয়ই সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে অ্যাড দেখানোর জন্যে কাজ করে থাকে। তবে দু’টোর মাঝে কিছুটা পার্থক্য নিশ্চই আছে। সেগুলো জানাচ্ছি সংক্ষেপে-

সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং(SEM) এর মধ্যে দু’ধরনের মার্কেটিং রয়েছে। একটি হ’লো অর্গানিক যা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন নামে পরিচিত। অন্য আরেকটি হচ্ছে পেইড অর্থাৎ প্রতি শুধুমাত্র গুগলে অ্যাড দেখানোর জন্য পে করতে হয় যা পে-পার-ক্লিক নামে পরিচিত।

পে-পার-ক্লিক(PPC) ও একটি সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং। তবে এটির শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিনে রেজাল্ট দেখানোর জন্য পেমেন্ট দাবি করে না। এটিকে তখনই পেমেন্ট করতে হয় যখন ইউজাররা ক্লিক করেন। অর্থাৎ আপনার ওয়েব সাইটের ল্যান্ডিং পেইজ বা ওয়েব পেইজে অ্যাডের মাধ্যমে প্রতি ক্লিকের বিনিময়ে পেমেন্ট করতে হয়। 

যাদের সময় কম তাদের জন্য-

  • সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং    –  শুধুমাত্র অ্যাড দেখানোর জন্য পেমেন্ট নিয়ে থাকে।
  • পে-পার-ক্লিক মার্কেটিং- প্রতি ক্লিকের বিপরীতে পেমেন্ট নিয়ে থাকে।

Leave a Reply