You are currently viewing গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে করে?
গ্রাফিক্স ডিজাইন

আর্ট হলো একটি শিল্প। গ্রাফিক্স ডিজাইন এই শিল্পকেই প্রযুক্তির যুগে বাঁচিয়ে রাখছে। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার তার শিল্পের পরিচর্যা করার পাশাপাশি তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। আমরা সেখান থেকে জ্ঞান অর্জন করে নিজেদের বিকশিত করি। অনেক বেশি ক্রিয়েটিভ পেশা হওয়ায় বিশ্ব জুড়ে এর চাহিদা অনেক। চলুন গ্রাফিক্স ডিজাইন কি, কীভাবে করে এবং এর দ্বারা কি কি করা যায় সে সম্পর্কে বিশদ ধারণা নিয়ে আসি।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?

ছোটবেলায় স্কুলে আমাদের ছবি আঁকার জন্য উৎসাহিত করা হত। তখন ফুল, মাছ, গাছ-পালা ইত্যাদি আঁকতাম আর আনন্দিত হতাম। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় কত সুন্দর সুন্দর ছবি এবং গ্রাফিক্স দেখতে পাই। আর্টিস্ট তার মনের কল্পনাকে কত সুন্দর করে রং তুলি দিয়ে বাস্তব করে তোলে। 

একজন আর্টিস্ট বা ডিজাইনার যখন কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে মনের মাধুরী মিশিয়ে তার কল্পনাকে একটি ডিজিটাল অবস্থায় প্রকাশিত করে তখন তাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলে। গ্রাফিক্স একটি জার্মান শব্দ যার অর্থ চিত্র বা চিত্র নকশা। 

যাইহোক, গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো একটি ক্রিয়েটিভ পেশা। এখানে একজন চিত্রকার তার কল্পনাকে বাস্তবে সবার সামনে ফুটিয়ে তোলে। তার চিত্রকর্মকে এমন ভাবে প্রদর্শিত করা হয় যা দেখে মানুষ তার চিত্রকর্মে ডুবে যায়। 

ইন্টারনেটের যুগে কম্পিউটারে গ্রাফিক্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে কোনো ইমেজ বা ভিডিও চিত্র তৈরি করাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলে। অন্যভাবে বললে, একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলে। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন সাধারণত দুই ধরনের হয় যেমন স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স এবং মোশন গ্রাফিক্স। স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্সে একটি নির্দিষ্ট ইমেজের উপর নির্ভর করে ডিজাইন করা হয়। অন্যদিকে মোশন গ্রাফিক্সে অ্যানিমেশন ও ভিডিও গ্রাফিক্স তৈরি করা হয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে করে?

গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য আপনার নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। এই সেক্টর অনেক প্রচলিত হলেও তা শিখতে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কীভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে হয় সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। 

দৃঢ় পরিকল্পনাঃ যে কোন ডিজাইনিং শিখতে গেলে সবার প্রথমে প্রয়োজন হয় দৃঢ় পরিকল্পনার। আপনার পরিকল্পনা যত শক্তিশালী হবে আপনি তত তাড়াতাড়ি সফলতা পাবেন। বিশেষ করে গ্রাফিক্স এর মত কঠিন এবং ক্রিয়েটিভ কাজের জন্য আপনাকে সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। তো গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে এই সেক্টরের কোন বিষয় আপনি শিখবে এবং তা দিয়ে পরবর্তীতে কি করবেন।

বিষয় নির্ধারণঃ আমরা জানি, গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রধানত দুই প্রকার। যেমন স্টিল ইমেজ এবং মোশন গ্রাফিক্স। স্টিল ইমেজ ডিজাইন আবার প্রধানত তিন প্রকার যেমন রাস্টার ইমেজ (পিক্সেল বেসিস), ভেক্টর ইমেজ (পিক্সেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট), টাইপোগ্রাফি অন্যদিকে মোশন গ্রাফিক্স দুই প্রকার যেমন অ্যানিমেশন ও ভিডিও গ্রাফিক্স। এই গ্রাফিক্স প্রকারভেদের আবার আরও অনেক প্রকারভেদ আছে যেমন লোগো ডিজাইন, ফটো ম্যানুপুলেশন, বুক কভার, বিজনেস কার্ড ডিজাইন ইত্যাদি। 

এই সব গুলো আপনি একবারেই শিখতে পারবেন না। আপনি পরবর্তীতে চাকরি করবেন নাকি ফ্রিল্যান্সিং করবেন তার উপর নির্ভর করে বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। এতে পরবর্তীতে কাজ শেখার পর আপনার ক্যারিয়ার শুরু করতে ঝামেলা পোহাতে হবে না। 

কোর্স করাঃ পরিকল্পনা ও বিষয় নির্ধারণ হয়ে যাবার পরে আপনাকে অনলাইন বা অফলাইন (আপনার যা পছন্দ) কোর্স করতে হবে। এই কোর্সের মাধ্যমে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের দুনিয়ায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারবেন। 

আপনার নির্ধারিত বিষয়ের উপর কোর্স সম্পন্ন করার পর সেই বিষয়ে আপনার ধারণা হবে। কোর্সে আপনাকে হাতে ধরে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখানো হবে। 

গ্রাফিক্স সফটওয়্যার শেখাঃ ডিজাইন শেখার সময় আপনি গ্রাফিক্স সফটওয়্যার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করবেন। তবে সেই সীমিত জ্ঞান দিয়ে বাস্তব দুনিয়ায় বেশি দিন টিকে থাকতে পারবেন না। এই জন্য আপনাকে নিজ উদ্যোগে গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার এর টুল গুলো সম্পর্কে জানতে হবে এবং বেশি বেশি প্র্যাকটিস করতে হবে। 

আপনি যত বেশি প্র্যাক্টিস করবেন তত অভিজ্ঞ হবেন এবং উক্ত টুল গুলো দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে আপনার ডিজাইন পারদর্শিতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। তাছাড়া চাকরি করতে গেলে বা অনলিনে কাজ করতে গেলে আপনাকে এই সফটওয়্যার গুলোর উপরেই কাজ করতে হবে। 

প্রোজেক্ট তৈরি করাঃ আপনি যত বেশি বেশি প্রোজেক্ট করবেন তত অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। এতে আপনার প্রবলেম সল্ভিং পারদর্শিতা বৃদ্ধি পাবে। প্রোজেক্ট করার কারণে আপনার শেখা জ্ঞান কীভাবে বাস্তব দুনিয়ায় কাজ করে সে সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন। এছাড়া প্রজেক্টগুলো আপনার কাজের ধরন ও অভিজ্ঞতার সীমা প্রকাশ করবে। 

পোর্টফোলিও তৈরি করাঃ কঠিন এবং সহজ বিষয় মিলিয়ে প্রোজেক্ট তৈরি করে তা দিয়ে সুন্দর পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে। মনে রাখবেন কেউ যখন আপনাকে কাজ দিবে তখন তারা আপনার চেহারা দেখবে না, আপনার কাজ এবং অভিজ্ঞতা দেখবে। এই কারণে পোর্টফলিও তৈরি করার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। 

চাকরি করাঃ নিজেকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পর আপনি স্বনামধন্য দেশি-বিদেশি কোম্পানিতে অনেক উচ্চ বেতনে চাকরি করতে পারবেন। শুরু থেকেই অনলাইন এবং অফলাইন দুনিয়ায় গ্রাফিক্সের চাহিদা ছিল এবং সারাজীবন থাকবে। তাই এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। 

ফ্রিল্যান্সিং করাঃ আপনার চাকরি করার ইচ্ছা না থাকে অনলাইনে অন্যের কাজ করে দিয়ে আয় করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোয় গ্রাফিক্স ডিজাইনারের অনেক চাহিদা। আপনি পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা দেখাতে পারলে নিয়মিত কাজ করতে পারবেন। এতে একাধারে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে এবং আয় হবে। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে কি কি করা যায়?

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে আপনি সব ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে পারবেন। তবে এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় নিচে দেওয়া হলো। 

  • লোগো ডিজাইনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখলে আপনি আপনার বা ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ এর জন্য লোগো ডিজাইন করতে পারবেন। 
  • ওয়েব ডিজাইনঃ ওয়েব ডিজাইন করার জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হবে। কারণ ইন্টারনেটে আমরা যে সকল ওয়েবসাইট দেখতে পাই তা সাধারণত একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের তৈরি। 
  • বুক কভার ডিজাইনঃ কোন পাবলিকেশনের জন্য বা কোন লেখকের বই এর কভার তৈরি করার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন জানতে হবে। 
  • বিজনেস কার্ড ডিজাইনঃ বিজনেস কার্ড একটি বিজনেস বা ব্যক্তির পরিচয় বহন করে। প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রির অনেক পপুলার এই শাখায় কাজ করতে হলে প্রয়োজন পরে গ্রাফিক্স ডিজাইন জ্ঞানের। 
  • অ্যানিমেশন তৈরিঃ অ্যানিমেশন বা কার্টুন পুরো বিষয়টাই গ্রাফিক্স। আপনার কল্পনা যত সুন্দর, আপনার অ্যানিমেশন বা কার্টুন তত সুন্দর হবে। এই কারণে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে অ্যানিমেশন বা কার্টুন হাউজের প্রধান চালিকা শক্তি বলা হয়। 
  • ইমেজ এডিটিংঃ বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ইমেজ এডিটিং করার প্রয়োজন পরে। গ্রাফিক্স ডিজাইন জানা থাকলে খুব সহজেই আমরা ইমেজ এডিটিং করতে পারবো। 
  • ভিডিও গ্রাফিক্স তৈরিঃ বিভিন্ন মুভি বা ইউটিউব ভিডিওতে আমরা নান্দনিক গ্রাফিক্স দেখে থাকি। এগুলো তৈরি করে সাধারণত একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। 

গ্রাফিক্স ডিজাইন সফটওয়্যার

নিচে গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য যে সব সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় সে গুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। 

Adobe Photoshop অ্যাডোবি ফটোশপ গ্রাফিক্স দুনিয়ার রাজা। বিশেষ করে স্টিল ইমেজ নিয়ে কাজ করার জন্য ফটোশপ এর বিকল্প কিছু নেই। এখানে আপনি লোগো থেকে শুরু করে কভার ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ডিজাইন সহ আরও অনেক কিছু করতে পারবেন। 

Adobe Illustrator ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যার প্রধানত ভেক্টর ডিজাইনের জন্য সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয়। এখানে আপনি লোগো, বিজনেস কার্ড, ইনভাইটেশন কার্ড, পোস্টার ইত্যাদি গ্রাফিক্স উপাদান তৈরি করতে পারবেন। 

Figma ওয়েব পেজ এবং UI/UX ডিজাইন করার জন্য ফিগমা একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী গ্রাফিক্স সফটওয়্যার। সাধারণত ওয়েব পেজ এবং অ্যাপলিকেশন গ্রাফিক্স তৈরি করার জন্যই ফিগমা সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। 

Adobe Premiere Pro মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইন করার জন্য সব থেকে বেষ্ট সফটওয়্যার হচ্ছে প্রিমিয়ার প্রো। এখানে ভিডিও গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন, কার্টুন ইত্যাদি তৈরি করার জন্য সকল টুল এবং এক্সটেনশন আছে। 

সময় যত যাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন তত উন্নত হবে। বর্তমানে এআই ডিজাইন ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক পরিবর্তন এনেছে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা এক ক্লিকেই অনেক সুন্দর সুন্দর গ্রাফিক্স আর্ট তৈরি করতে পারবো।

Leave a Reply