You are currently viewing বর্তমান সময়ের সেরা গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেন্ড গুলো কি কি
গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেন্ড

গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেন্ড হচ্ছে বর্তমান সময়ে কোন ধরনের ডিজাইন গুলো মানুষ চর্চা করছে এবং ভবিষ্যতে কোন গুলো মানুষের মধ্যে চাহিদা তৈরি করবে। ডিজাইন একটি ক্রিয়েটিভ বিষয়। এখানে মানুষের আবেগ ও অনুভূতি ব্যবহার করে মন শীতল করা ভিজুয়াল তৈরি করা হয়। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট থেকে শুরু করে কর্পোরেট লাইফে গ্রাফিক্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কোন ট্রেন্ডগুলো সামনে গ্রাফিক্স ডিজাইন ওয়ার্ল্ড এ অবদান রাখবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

গ্রাফিক ডিজাইন ট্রেন্ড 

নিচে সাম্প্রতিক সময়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন ট্রেন্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

মোশন গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশন 

মোশন গ্রাফিক্স ও অ্যানিমেশন

মোশন গ্রাফিক্স হচ্ছে এমন ধরনের গ্রাফিক্স যেখানে এলিমেন্ট গুলো মুভ করে। অর্থাৎ এটি দেখতে অনেকটা ভিডিও ফাইলের মতো। এখানে ডিজিটাল ফুটেজ তৈরি করার জন্য এলিমেন্টের মোশন এবং রোটেশন ইউজ করা হয়। ধরুন আপনি একটি ত্রিভুজ তৈরি করলেন। 

এখন চাচ্ছেন এই ত্রিভুজকে আপনি আপনার ইচ্ছামতো মুভ করবেন। গতানুগতিক গ্রাফিক্সে এটা না করা গেলেও মোশন গ্রাফিক্সে এটি সহজেই করা যায়। তাছাড়া আমরা যে অ্যানিমেশন মুভি দেখি তার মধ্যেও অনেক আছে যা মোশন গ্রাফিক্স দিয়ে তৈরি করা হয়। 

অন্যদিকে অ্যানিমেশন হচ্ছে অনেক অ্যাডভানস একটি বিষয়। বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপি অনেক ধরনের অ্যানিমেশন মুভি তৈরি হয়। অনেক মুভি এক্সট্রা অর্ডিনারি হয়ে থাকে যেগুলো অস্কার পর্যন্ত পেয়ে যায়। গ্রাফিক্স দুনিয়ায় অ্যানিমেশন অনেক বড় একটি সেক্টর দখল করে রয়েছে। এই বিশাল পরিমাণ মার্কেট থাকার কারণে এর চাহিদা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।  

৩ডি ডিজাইন

৩ডি ডিজাইন হচ্ছে ত্রিমাতৃক ডিজাইন। এখানে সফটওয়্যার ইউজ করে এমন ভাবে শেপ বা অবজেক্ট তৈরি করা হয় যা দেখতে একদম বাস্তব মনে হয়। প্রযুক্তি উন্নতির সাথে সাথে ২ডি ডিজাইন থেকে আপডেট হয়ে ৩ডি ডিজাইনে উন্নীত হয়েছে। 

এই ধরনের ডিজাইনের সব থেকে বড় উদাহরণ হচ্ছে মুভিতে দেখানো স্পেশাল ইফেক্টস। এখানে CGI এর সাথে ক্যারেক্টার তৈরি করে তা থেকে বাস্তবসম্মত আউটপুট তৈরি করা হয়। এটি অনেক সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর। টেক ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে চিকিৎসা, প্রকৌশল, ডিজিটাল মিডিয়া ইত্যাদি সেক্টরে এর কাজের ক্ষেত্র এবং সম্ভাবনা বেড়েই চলছে। 

বর্তমান সময়ে- 

  • ৩ডি প্রিন্টিং
  • বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং (BMI)
  • প্রোডাক্ট ডিজাইন
  • ভিজুয়াল ইফেক্টস (VFX)
  • ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
  • জেনারেটিভ ডিজাইন

ইত্যাদি ৩ডি ডিজাইন প্রচলিত রয়েছে। এখানে কাজের ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট আসার পর এখানে কাজের সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি নতুন নতুন আইডিয়া তৈরি হচ্ছে। 

মিনিমালিস্ট ডিজাইন

মিনিমালিস্ট ডিজাইন অর্থ হচ্ছে হিজিবিজি ও অনেক রং ব্যবহার না করে সাধারণ ডিজাইন করা। কারণ আমাদের হিউম্যান ব্রেইন সবসময় ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চায়। খেয়াল করে দেখবেন আপনার শুধু শহরের কোলাহল ছেড়ে নিরিবিলি পরিবেশে বসে থাকতে মন চাইবে। এটা কিন্তু আপনার ব্রেইন আপনাকে বলে দিচ্ছে যে নিরিবিলি বসে থাকলে মন ভালো হয়ে যাবে এবং মনে শান্তি ফিরে আসবে। 

ঠিক তেমনি আমরা যখন কোন হিজিবিজি ডিজাইনের দিকে তাকাই আমাদের ব্রেইন ঠিক এমনভাবেই রিঅ্যাক্ট করে থাকে। একটা সময় হিজিবিজি ডিজাইন মানুষকে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হলেও বর্তমানে দৃশ্য ভিন্ন। এখন মানুষ খুব সাদামাঠা ডিজাইন দেখতে পছন্দ করে। খেয়াল করে দেখবেন ওয়েবসাইট গুলো তাদের লোগো, ব্যানার, বাটুন সহ যে যে জায়গায় গ্রাফিক্স ইউজ করে তা অনেক মিনিমাল হয়ে থাকে। ডিজাইন কনসেপ্টের এই পরিবর্তন থেকে মিনিমাল ডিজাইন যে ট্রেন্ডে রয়েছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। 

ক্যারেক্টার ডিজাইন

ক্যারেক্টার ডিজাইন সরাসরি ইমোশনাল ডিজাইনের সাথে সম্পর্কিত। ইলাস্ট্রেশন অথবা স্টোরি টেলিং এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ইমোশনাল আপিল তৈরি করা হয়। মার্কেটিং থেকে শুরু করে কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করা অথবা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য এই ডিজাইন ট্রেন্ড অনেক কার্যকর। সাধারণত বেশ কয়েক ধরনের ক্যারেক্টার ডিজাইন বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যেমন-

  • ভাইরাল ডিজাইন
  • ৩ডি শেপ দিয়ে ইলাস্ট্রেশন
  • ইন্টারঅ্যাক্টিভ ক্যারেক্টার
  • সেলফি এক্সপ্রেশন
  • স্টোরি টেলিং ইলাস্ট্রেশন, ইত্যাদি

ক্যারেক্টার ডিজাইন ও ইমোশনাল ইলাস্ট্রেশন বিষয়টি সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যা সামনের বছরগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ ক্রিয়েটিভ আইডিয়া বিকাশে এআই অনেক হেল্পফুল। একজন ডিজাইনার আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউজ করে অল্প সময়ে ইউনিক ও আপিলিং ডিজাইন আইডিয়া তৈরি করতে পারে। যা মানুষের মনে কার্যকরী ইফেক্ট তৈরি করে থাকে।  

ম্যাশআপ ডিজাইন

ডিজিটাল কোলাজ এবং ম্যাশআপ ডিজাইন হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যেখানে অনেক গুলো ইমেজ ও টেক্সচার এক সঙ্গে মিশিয়ে গ্রাফিক্স তৈরি করা হয়। এর সব থেকে বড় উদাহরণ হচ্ছে ২ডি এবং ৩ডি ডিজাইন এক সঙ্গে করে সাথে টেক্সট অ্যাড করে সুন্দর সুন্দর ডিজাইন তৈরি হচ্ছে। 

গতানুগতিক কোলাজ সিস্টেমে একই সাথে কয়েকটি ইমেজ এক জায়গায় করে তারপর আলাদা আলাদা ফ্রেম হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু ডিজিটাল কোলাজ সিস্টেমে এক ফ্রেমে কয়েকটি ইমেজ এক জায়গায় করে কোলাজ করা হয়। যা দেখতে অনেক সুন্দর ও অর্থবহ হয়। পাশাপাশি উক্ত ফ্রেমে বিভিন্ন ডিজাইনের টেক্সট অ্যাড করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে অনেক আকর্ষণীয় ডিজাইন তৈরি করা সম্ভব হয়। 

ইউজার ইন্টারফেস 

ইউজার ইন্টারফেস 

আমরা সকলেই UX এবং UI সম্পর্কে শুনেছি। এখানে UX দ্বারা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এবং UI দ্বারা ইউজার ইন্টারফেসকে বোঝানো হয়। এই ধরনের ডিজাইন করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইউজারকে ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে বেশি সময় ধরে ধরে রাখা। এখন একটি অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের ডিজাইন যদি আকর্ষণীয় না হয় তাহলে কিন্তু ভিজিটর সেখানে থাকতে চাইবে না। 

অন্যদিকে কোন ফিচার যদি ঠিক মতো না থাকে বা সহজে খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলেও কিন্তু ভিজিটর বিরক্ত হবে। যা ওয়েবসাইট বা অ্যাপের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তবে কত কয়েক বছর থেকেই ডিজাইনার গণ এই বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। যে কারণে সময়ের সাথে সাথে এই সেক্টর ডিজাইন দুনিয়ায় অনেক বড় একটি অংশ দখল করে নিয়েছে। 

সময়ের সাথে সাথে এখানে কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। মার্কেটপ্লেস থেকে শুরু করে কর্পোরেট দুনিয়ায় ইউআই ও ইউএক্স ডিজাইনারের চাহিদা বেড়েই চলছে। সামনের দিন গুলোতে এই চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন নতুন অনেক কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। 

এআই ডিজাইন 

শুরুতে যখন এআই মার্কেটে আসলো তার পরে থেকেই টেক ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসা শুরু করেছে। টেক্সট কন্টেন্ট লেখা থেকে শুরু করে ইমেজ, অডিও এমনকি ভিডিও পর্যন্ত তৈরি করে দেওয়ার কাজ করছে এআই। এই প্রযুক্তির এই অভাবনীয় কার্যকারিতার কারণে অনেক টেক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের ধরণ পাল্টে গেছে। 

যেমন আপনি এখন Midjourney অথবা DALL-E এর মতো এআই ইউজ করে মন মতো ডিজাইন তৈরি করে নিতে পারবেন। এখানে শুরুর দিকে তেমন অ্যাকুরেট ডিজাইন তৈরি করতে না পারলেও বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এই প্রযুক্তি আসার পরে ডিজাইন ট্রেন্ডে যা যা যুক্ত হয়েছে-

  • ইমেজ এনহান্সমেন্ট
  • অ্যাডাপ্টিভ ডিজাইন
  • ইমেজ এডিটিং
  • কন্টেন্ট সাজেশন
  • টেক্সট টু ইমেজ
  • অটোমেটেড ডিজাইন টুল
  • লোগো তৈরি
  • মোশন গ্রাফিক্স
  • ব্রান্ড ডিজাইন, ইত্যাদি। 

এআই দিয়ে সহজে ডিজাইন করা যায় জন্য ই-কমার্সের প্রোডাক্ট থেকে শুরু করে অন্যান্য ডিজাইন সেক্টরে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে এআই যত উন্নত ও শক্তিশালী হবে এর ব্যবহার অন্যান্য সেক্টরের পাশাপাশি ডিজাইন সেক্টরেও বৃদ্ধি পাবে। 

শেষ কথা

গ্রাফিক্স ডিজাইন একটি পপুলার সেক্টর। কমার্শিয়াল কাজের জন্য গ্রাফিক্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য কথার পাশাপাশি তা যদি ভিজুয়ালভাবে দেখানো যায় তাহলে তা মনের মধ্যে বেশি প্রভাব ফেলে। এই কারণে মার্কেটিং এর মতো সেক্টরে মানুষের কাছে পণ্য সম্পর্কে চাহিদা তৈরি করতে ডিজাইন অনেক বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এই লেখায় গ্রাফিক ডিজাইন ট্রেন্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

Leave a Reply