You are currently viewing প্রোগ্রাম কী? প্রোগ্রামিং কেন শিখবেন?

ফেসবুক, ইউটিউব এবং ICT বই এর বদৌলতে আমরা প্রোগ্রামিং বা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শব্দটির সাথে পরিচিত। আমরা যখন একটি কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করি তখন এটি কীভাবে আমাদের কমান্ড অনুযায়ী কাজ করে তা নিয়ে আমাদের একটা কৌতূহল থেকেই যায়। আসলে প্রতিটি প্রোগ্রাম কীভাবে কাজ করবে তা একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে বলে দেওয়া থাকে। তো এসকল অ্যাপ বা সার্ভিস কীভাবে কাজ করে তা জানতে হলে আমাদের প্রোগ্রামিং সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন প্রোগ্রামিং কি, এটি কেন শিখবেন এবং জনপ্রিয় কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জেনে নিই। 

প্রোগ্রাম কী?

প্রোগ্রাম হল কতগুলো নির্দিষ্ট কমান্ড বা ইন্সট্রাকশন যা কম্পিউটারকে কাজ করতে সাহায্য করে। আমরা জানি যে কম্পিউটারের নিজস্ব কোন বিবেক বা বুদ্ধি নেই সে শুধু ০ ও ১ বা বাইনারি ভাষা বুঝে। অর্থাৎ আমরা কম্পিউটার দিয়ে যা যা করি তা বাইনারি তে কনভার্ট হয়ে তারপর কাজ করে।

এখন কম্পিউটার দিয়ে কোন কাজ পরিচালনা করার জন্য তাকে প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে নিয়ম তৈরি করে দেওয়া হয়। প্রোগ্রাম যখন রান করা হয় তখন সিস্টেম সেই ইন্সট্রাকশন ফলো করে একে একে কাজ গুলো করতে থাকে।

মোটকথা অনেকগুলো খুচরা কাজের সমষ্টি হল প্রোগ্রাম যা লেখা হয় বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দ্বারা।

প্রোগ্রামিং কি?

আমরা জানি যে অনেকগুলো ইন্সট্রাকশন নিয়ে প্রোগ্রাম তৈরি হয় এবং সেই ইন্সট্রাকশন গুলো লিখে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া তা হল প্রোগ্রামিং। বিশদভাবে বলতে গেলে আমরা যখন কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করি তখন আমাদের একটি পরিকল্পনা সাজানো হয়।

যে পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। কম্পিউটার সাইন্সের ভাষায় এই পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করাই হলো প্রোগ্রামিং। যেমন আমরা যদি কম্পিউটারে একটি ভিডিও দেখতে চাই তাহলে আমাদের ভিডিও প্লেয়ার বা মিডিয়া প্লেয়ার প্রোগ্রাম এর প্রয়োজন পরবে।

প্রতিটি মিডিয়া প্লেয়ার প্রোগ্রামকে প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে বলে দেওয়া থাকে যে কীভাবে সে উক্ত ভিডিও ফাইল প্লে করার জন্য কি কি কমান্ড কম্পিউটারে প্রেরণ করবে, সেই কমান্ডগুলো বাইনারিতে কনভার্ট হয়ে ০ ও ১ আকারে কম্পিউটারকে ইন্সট্রাকশন দেয়। কম্পিউটার সেই ইনপুট নিয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ গুলো করতে থাকে। বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে এই কমান্ড গুলো লেখা হয়ে থাকে।

সর্বোপরি বলা যায় যে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে প্রোগ্রাম তৈরি করার যে প্রক্রিয়া তাকে প্রোগ্রামিং বলে।  

প্রোগ্রামিং কেন শিখবেন?

ধরুন, আপনি একা একটি নৌকা নিয়ে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন। পথে ঝড়ের কারণে আপনার নৌকা ডুবে গেল এবং আপনি একটি অচেনা দ্বীপের তীরে গিয়ে উঠলেন। এখন কক্সবাজার বন্দরে ফিরে আসতে আপনার একটি নৌকা তৈরি করতে হবে কিন্তু আপনি নৌকা তৈরি করার প্রক্রিয়া জানেন না। এ কারণে আপনাকে সেই দ্বীপে আটকে থাকতে হবে।

এখন আপনি যদি নৌকা তৈরি করার প্রক্রিয়া জানতেন তাহলে কিন্তু নতুন নৌকা তৈরি করে ফিরে আসতে পারতেন। এখানে নৌকা বানানোর সাথে প্রোগ্রামিং এর সম্পর্ক একই। কম্পিউটার বা মোবাইল এর সাথে একজন মানুষ প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে কমিউনিকেট করে নতুন নতুন প্রোগ্রাম তৈরি করে যা আমাদের কাজগুলোকে আরও সহজ করে তোলে।

কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকে প্রোগ্রামিং একটি জনপ্রিয় ক্রিয়েটিভ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কারণ প্রোগ্রামিং একটি আনন্দের বিষয়। এটি খোলা মনে মানুষকে লজিকালি চিন্তা করতে শেখায়। পুরো বিশ্ব যেভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত থেকে আর বেশি উন্নত হচ্ছে, তেমনি প্রোগ্রামিং এর মান-মর্যাদা বেড়েই চলছে। বর্তমান সময়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ক্রিপ্টোকারেন্সি, ব্লকচেইন ইত্যাদি প্রযুক্তির দুনিয়ায় যে বিপ্লব ঘটিয়েছে সেখানে প্রোগ্রামিং এর ভূমিকা সব থেকে বেশি। 

অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদির জন্য প্রোগ্রামিং শেখার বিকল্প কিছু নেই। মোটকথা, আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে কম্পিউটার এবং মোবাইলের প্রয়োজন পরে। প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে এ সকল ডিভাইস টুল হিসেবে ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সহজেই করে ফেলতে পারি।

ক্যারিয়ার হিসেবে প্রোগ্রামিং একটি অতি উচ্চ মানের পেশা। এখানে যেমন বেশি আয় করার সুযোগ থাকে তেমনি উন্নত জীবন পরিচালনা করা যায়। ক্যারিয়ার হিসেবে প্রোগ্রামিং প্রতিটি তরুণ-তরুণীর সর্বপ্রথম চয়েজ। প্রোগ্রামিং শিখে ইনহাউজ চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। 

এখন আপনি ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে প্রোগ্রামিং শিখতে পারেন অথবা প্যাশন থেকে শিখতে পারেন। যে উদ্দেশে শেখেন না কেন, এটি আপনার জীবন পরিবর্তন করে দিবে।

জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ

আমরা জানি যে, প্রোগ্রামিং করার জন্য আমাদের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানতে হবে। তো চলুন বর্তমান সময়ের কয়েকটি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জেনে নেই।

Python: পাইথন একটি জনপ্রিয় ওপেন সোর্স প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। 1991 সালে Guido van Rossum পাইথন সফটওয়্যার ফাউন্ডেশনের সাহায্যে বিশ্বব্যাপী পাইথন রিলিজ করেন। এর পর থেকে ধীরে ধীরে লিনাক্স, অ্যান্ড্রয়েড, উইন্ডোজ, ম্যাক সহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম এর জন্য পাইথন অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট আসতে থাকে। এটি একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। পাইথনের সিনট্যাক্স এবং স্ট্রাকচার অনেক সহজ যে কারণে যে কেউ সহজেই এই ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে পারে। ক্রস প্ল্যাটফর্ম কম্প্যাটিবিলিটি আছে জন্য সকল ডিভাইসে এবং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়।

বর্তমান সময়ে Python ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কম্পিউটার সায়েন্স, ডাটা মাইনিং এবং ডাটা অ্যানালাইসিস সহ প্রযুক্তির প্রায় সকল সেক্টরেই ব্যবহার হয়। পাইথনের বিশাল লাইব্রেরি ও মডিউল কালেকশন থাকার কারণে যে কোন প্রোজেক্ট সহজে এবং দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা যায়।

Stack Overflow একটি জরীপ আয়োজন করে যেখানে পাইথন পপুলারিটির দিক থেকে ১০০% এর মধ্যে ৬৫% ভোট পায়। পাইথন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের একটি বিশাল কমিউনিটি আছে এবং শেখার জন্য প্রচুর ফ্রি এবং পেইড রিসোর্স আছে। যেখানে কোনো সমস্যা নিয়ে সাহায্য চাইলেই সহজে সমাধান পাওয়া যায়। 

বর্তমান সময়ে Intel, Microsoft, Apple, Meta, Netflix, Google, IBM, Pixar সহ বড় বড় টেক জায়ান্ট কোম্পানি পাইথন ব্যবহার করে। 

Java: জাভা একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। জাভা এবং জাভাস্ক্রিপ্ট দুটি পুরোপুরি আলাদা ল্যাঙ্গুয়েজ। জাভা অনেক শক্তিশালী ও হাই লেভেল ল্যাঙ্গুয়েজ এবং পুরোটাই ক্লাস নির্ভর। ১৯৯৫ সালে James Gosling জাভা রিলিজ করেন। বর্তমানে ওরাকল এই ল্যাঙ্গুয়েজ মেইনটেন করে। 

Java অনেক গোছানো এবং সিকিউর হওয়ায় ডেভেলপাররা মডিউল তৈরি করে সহজে কোড রি-ইউজেবল করতে পারে। এতে প্রোজেক্ট ভিত্তিক কাজ করার সময় সময় বাঁচে এবং কাজ দ্রুত গতির হয়। জাভা অ্যাপ্লিকেশান গুলোর একটি বিশেষত্ব আছে। যেমন জাভা ভার্চুয়াল মেশিন (JVM) এর মাধ্যমে আপনি যে কোন অপারেটিং সিস্টেমে জাভা প্রোগ্রাম কোন ঝামেলা ছাড়াই রান করা যায়। 

আপনি জাভা প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার এন্টারপ্রাইজ জাতীয় অনেক বড় বড় সফটওয়্যার তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া এটি ব্যবহার করে ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশান, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশান, বিগ ডাটা সহ অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপ করতে পারবেন। যদিও জাভা একটি ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের ল্যাঙ্গুয়েজ তবে আপনি পরিশ্রম করলে এর কমপ্লেক্স সিনট্যাক্স গুলো শিখে ডেভেলপমেন্ট করতে পারবেন।  

JavaScript: জাভাস্ক্রিপ্ট একটি পপুলার স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ। বর্তমান সময়ের মডার্ন ওয়েবসাইট জাভাস্ক্রিপ্ট ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। এটি একটি স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়ার কারণে শুধু ব্রাউজারে রান হয়। আপনি এই ব্লগ পড়ার সময় খেয়াল করবেন পেজ এর উপরের দিকে একটি নোটিফিকেশন বার আসছে। এই বার ডেভেলপ করা হয়েছে জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে। মোটকথা একটি ওয়েব টেকনোলজির ক্লাইন্ট সাইডের ৯৮% নিয়ন্ত্রণ করে জাভাস্ক্রিপ্ট।

1995 সালে Brendan Eich আমাদের মাঝে জাভাস্ক্রিপ্টকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তখন থেকে আজ অবধি এই ল্যাঙ্গুয়েজ এর উপর নির্ভর করে অনেক লার্নিং রিসোর্স এবং কমিউনিটি তৈরি হয়েছে। জাভাস্ক্রিপ্ট ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ছাড়াও গেম ডেভেলপমেন্ট, রিপিটিভ টাস্ক, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে ব্যবহার হয়ে থাকে।

Google, Netflix, Paypal, BigBusket সহ অন্যান্য কোম্পানিগুলো JavaScript প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে তাদের ফিচার রিচ টেকনোলজি ম্যানেজ করে।

C & C++: C হল সকল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর বস। ১৯৭২ সালে C আবিষ্কৃত হওয়ার পর কম্পিউটার সাইন্সে এক বিশাল রেভুলেশন শুরু হয়। অপেক্ষাকৃত কম মেমোরি ইউজ করার কারণে অপারেটিং সিস্টেম আর্কিটেকচার, ড্রাইভার ইত্যাদি তৈরি করার জন্য এটি ব্যবহার করা হত।

C++ হল C এর উন্নত রূপ। অর্থাৎ C++ কে উন্নত ভার্সনে পরিণত করার জন্য এতে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ফিচার যোগ করা হয়। এতে বেসিক প্রোগ্রামিং করা ছাড়াও অ্যাপ্লিকেশান ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট করা শুরু হয়। 

বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম ও ড্রাইভার তৈরি করা ছাড়াও C++ সাইন্টিফিক কম্পিউটিং, ফাইনান্সিয়াল অ্যাপ্লিকেশান, গেম ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ব্রাউজার তৈরি সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। C এর সিনট্যাক্স অনেক সহজ কিন্তু C++ এর সিনট্যাক্স একটু কঠিন যে কারণে শিখতে বেগ পেতে হয়। তবে এই ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে পারলে অন্যান্য সকল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা সহজ হবে। 

PHP: এটি একটি সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ। পুরো বিশ্বের ৭৫% ওয়েবসাইটের সার্ভার সাইড মেইন্টেইন করার জন্য পিএইচপি ইউজ করা হয়। এটি একটি ওপেন সোর্স প্রোজেক্ট যেখানে বিশ্বের হাজার হাজার প্রোগ্রামার বিভিন্ন টুল, ফিচার, এক্সটেনশন, ফ্রেমওয়ার্ক ডেভেলপ করে উন্মুক্ত করে দেয়। 

যে কারণে PHP অনেক বেশি রিসোর্সফুল ও সহজে ব্যবহারযোগ্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ওয়ার্ডপ্রেস তৈরি করা হয়েছে পিএইচপি এর উপর নির্ভর করে, যা এই সিএমএস কে অনেক শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। 

বিশাল কমিউনিটি ও লার্নিং রিসোর্স থাকায় আপনি যে কোনো সময় পিএইচপি শেখা শুরু করে দিতে পারবেন। পিএইচপি এর আরও একটি বড় গুন হল এটি ডাটাবেসের সাথে অনেক ভালো কমিউনিকেট করতে পারে সে কারণে API ডেভেলপমেন্ট এবং মেইনটেইন করা অনেক সহজ হয়। 

পিএইচপি দ্বারা আপনি ওয়েব ব্যাকএন্ড ডেভেলপমেন্ট, কুকি অ্যান্ড সেশন ম্যানেজমেন্ট, অ্যাপ্লিকেশান ডেভেলপমেন্ট, থিম ডেভেলপমেন্ট সহ আরও অনেক ধরনের কাজ করতে পারবেন। ক্রস প্ল্যাটফর্ম সাপোর্ট করায় আপনাকে অপারেটিং সিস্টেম বা সার্ভার এনভারমেন্ট নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

GO: গো বা গোলাং গুগলের তৈরি করা একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। ২০০৭ সালে গুগলের ইঞ্জিনিয়ারগণ গো ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি সহজ এবং ফাস্ট কম্পাইলিং ল্যাঙ্গুয়েজ। গো এর সিনট্যাক্স অনেক সহজ যার কারণে বিগিনার থেকে এক্সপার্ট সবাই অল্প কয়েকদিনেই এই ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে পারবে। 

শুরুতে নেটওয়ার্ক প্রোগ্রামিং এর জন্য GO এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এটি দিয়ে ক্লাউড কম্পিউটিং, বিগ ডাটা, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ্লিকেশান ডেভেলপমেন্ট, মেশিন লার্নিং, সিস্টেম প্রোগ্রামিং ইত্যাদি কাজ করা হয়। 

Uber, Google, Twitch, Dropbox তাদের সার্ভিস ডেভেলপ ও মেইন্টেইন করার জন্য ব্যাপকভাবে গোলাং ব্যবহার করে। 

Swift: সুইফট একটি অ্যাপল প্রোডাক্ট যার সূচনা হয় ২০১৪ সালে। অ্যাপল মূলত সুইফট প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করে তাদের প্রোডাক্ট গুলো তৈরি করার জন্য। যেমন ম্যাকওএস, আইওএস ও অন্যান্য অ্যাপল অ্যাপ্লিকেশান তৈরি করার জন্য সুইফট ইউজ করা হয়। 

রিয়েল টাইমে কোন আইডিয়া বা টুল তৈরি করার জন্য এই ল্যাঙ্গুয়েজের একটি প্লেগ্রাউন্ড ফিচার আছে। যেখানে আপনি কোড লিখে তা রিয়েল টাইমে আউটপুট দেখতে পারবেন। তাছাড়া সুইফট অবজেক্টিভ C থেকে ২.৬ গুন ফাস্ট। বর্তমান সময়ে আপনি যদি আইওএস ডেভেলপার হতে চান তাহলে Swift জানার কোনো বিকল্প নেই। 

অ্যাপল কোম্পানি বাদেও Uber, Robinhood জাতীয় ফাইনান্সিয়াল কোম্পানি Swift প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে সার্ভিস মেইন্টেইন করে। 

R: এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে অনেকেই পাইথনের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। কারণ পাইথন যে যে কাজ করার জন্য বিশ্বে এত বেশি পপুলার R ল্যাঙ্গুয়েজ ও প্রায় সে সকল কাজ করে। R একটি ওপেনসোর্স প্রোজেক্ট যা মেইন্টেইন করে প্রোগ্রামার গুলো। 

R দিয়ে সাধারণত ডাটা অ্যানালাইসিস, ডাটা সায়েন্স, স্ট্যাটিস্টিক কম্পিউটিং, ভিজুয়ালাইজেশন ইত্যাদি কাজ সহজেই করা যায়। এই ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজ এর থেকে অনেক কঠিন। তবে R শেখার জন্য অনেক রিসোর্স অনলাইনে পাওয়া যায় এবং এদের অনেক বড় একটি ওয়ার্কিং কমিউনিটি আছে। 

Rust: মজিলা তাদের সিস্টেম প্রোগ্রামিং এর জন্য রাস্ট প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভেলপ করে। এই ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করে ডিভাইস ড্রাইভার, অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্ক প্রোটোকল, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশান ও কমান্ড লাইন টুল সহ আরও অনেক কিছু মেইনটেইন ও ডেভেলপ করা হয়। 

Rust এর একটি বিশেষ গুন হল এটি অনেক কম মেমোরি ইউজ করে এবং অনেক সিকিউর। আপনি চাইলে এই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে গেম ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ওয়েব ব্রাউজার সহ আরও অনেক কিছু তৈরি করতে পারবেন। 

বর্তমানে Meta, Microsoft, Amazon সহ আরও অনেক বড় বড় কোম্পানি তাদের ডেভেলপমেন্টে রাস্ট ইউজ করে। বলা যায় C++ এর অল্টারনেটিভ হিসেবে রাস্ট অনেক বড় জায়গা দখল করে আছে।

SQL: এসকিউএল হল একটি ডাটাবেজ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। বিশ্বে বর্তমানে যতগুলো ডাটাবেজ ডেভেলপমেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ আছে এসকিউএল তাদের মধ্যে সব থেকে উপরে আছে। কারণ ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্টের জন্য যে যে ফিচার লাগে তার সব এসকিউএল এর ভেতরে আছে। 

এই ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ প্রায় সকল ধরনের প্লাটফর্ম এর সাথে কম্প্যাটিবল। অ্যাডভান্স লেভেলের ডাটা অ্যানালাইসিস করার জন্য অনেক কার্যকরী। এছাড়া এসকিউএল দ্বারা আপনি মডার্ন ডাটা রিলেটেড অনেক কিছুই করতে পারবেন। বর্তমানে Microsoft, NTT Data, Accenture সহ অন্যান্য টেক  কোম্পানিগুলো ডাটা ম্যানেজ করার জন্য SQL ইউজ করে।

HTML কি একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ? 

এইচটিএমএল একটি মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ। একটি ল্যাঙ্গুয়েজকে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হতে হলে তাতে লজিক, কন্ডিশন এবং ফাংশন থাকতে হবে। HTML এর ভেতরে এগুলোর একটিও নেই। একটি ওয়েব পেজ তৈরি করার জন্য যে ফাউন্ডেশন তৈরি করা হয় সেখানে এইচটিএমএল ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে CSS একটি স্টাইলশিট ল্যাঙ্গুয়েজ যা ওয়েব পেজ বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশানকে ডিজাইন করা জন্য ব্যবহৃত হয়। 

প্রোগ্রামিং একটি আনন্দের কাজ। যে প্রোগ্রামিং করতে পারে তার কাছে এর থেকে মজার কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই। উপরিউক্ত আলোচনায় আমরা প্রোগ্রাম কি, কীভাবে প্রোগ্রামিং শিখব এবং বর্তমান সময়ের কিছু জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করলাম।

Leave a Reply