Table of Contents
ই-কমার্স এসইও কি?
এসইও কি তা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। কিন্তু ই-কমার্স এসইও ধারনাটি তুলনামূলক একটু নতুন মনে হতে পারে! ই-কমার্স এসইও কি? এই প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে আমাদের ই-কমার্স সম্পর্কে একটু চিন্তাভাবনা করার আছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারবো ই-কমার্স এসইও কি, এর প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব কতটুকু।
এখন আমরা অনেক কিছুই অনলাইন এ কেনা-বেচা হতে দেখি, যা একসময় আমরা কল্পনাও করতে পারতাম না। কিন্তু এখন আমরা সকলেই অনলাইন এ কেনা-বেচার সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মূলত অনলাইন এর মাধ্যমে কেনা বেচার এই পদ্ধতিকে বলা হয় ই-কমার্স।
আগের তুলনার বর্তমানে ই-কমার্স এর প্রচলন বৃদ্ধি পেয়েছে তা বলাই বাহুল্য। ঠিক সেই কারনেই এখন ই-কমার্স ব্যবসায় এসেছে প্রতিযোগিতা, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার পণ্য বা সেবা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য নানান ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে যার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি মাধ্যম হচ্ছে ই-কমার্স এসইও।
সহজ করে বলতে গেলে, প্রোডাক্ট এর ভিজিবিলিটি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সেল বৃদ্ধি করার জন্য ই-কমার্স এসইও করা হয়। ই-কমার্স এসও করার ফলে SERP পেজ এর প্রথমের দিকে প্রোডাক্ট পেজ নিয়ে আসার পাশাপাশি ভাল ট্রাফিক পাওয়া যায় এর ফলে অর্গানিক ভাবে সেল বৃদ্ধি পায়। ই-কমার্স এসইও কে ভাবা হয় অ্যাড এর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বা পরিপূরক হিসেবে।
ই-কমার্স এসইও এর গুরুত্ব

বর্তমানে, বিশেষ করে কভিড-১৯ প্যান্ডেমিক এর পর থেকে আমরা ই-কমার্স এর জাগরণ হতে দেখছি এবং MarketWatch এর তথ্যমতে ২০৩০ সাল নাগাদ এর মার্কেট সাইজ $৪৭.৭৩ ট্রিলিয়ন গিয়ে দাঁড়াবে। এর থেকে আমরা কল্পনা করতে পারছি যে কি পরিমাণের বিপ্লব আমরা দেখবো সামনের দিন-গুলতে! বর্তমানে আমরা Amazon, eBay, Alibaba এবং বাংলাদেশ এ Daraz এর মত অনেক প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স এর সাথে পরিচিত, এমন আরও অনেক ই-কমার্স আসবে তা বলাই বাহুল্য।
ই-কমার্স এই জোয়ার এ সকলেই চাইবে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সেল করতে, এখানেই বাজিমাত করবে ই-কমার্স এসইও। ইতিমধ্যেই ই-কমার্স এসইও এর গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ হিসেবে বলা যায়, দীর্ঘমেয়াদী সুফল এবং ব্যতিক্রম হিসেবে ই-কমার্স এসইও এর গ্রহণযোগ্যতা। তাই আপনি যদি চিন্তা করেন একটি ই-কমার্সের দীর্ঘমেয়াদী সুফল তাহলে ই-কমার্স এসইও কে আপনার গুরুত্ব দিতেই হবে।
সাধারণ এসইও এবং ই-কমার্স এসইও এর মধ্যে পার্থক্য
এসইও এর মুল কাজ কিন্তু ওয়েবপেজ কে SERP পেজ এর প্রথমের দিকে নিয়ে এসে ভাল ট্রাফিক জেনারেট করা। সাধারণত আমরা এই একটি লক্ষে স্থির থেকে ওয়েবসাইট এসইও করে থাকি। কিন্তু ই-কমার্স এসইও এর বিষয়টি একটু ভিন্ন, এখানে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। এখন আমরা জানবো সাধারণ এসইও থেকে কেন ই-কমার্স এসইও একটু ব্যতিক্রম সে বিষয়ে।
ই-কমার্স এসইও এর মুল লক্ষ্য অরগানিক ভাবে ওয়েবসাইট থেকে সেল বৃদ্ধি করা। এজন্য একজন ই-কমার্স এসইও এক্সপার্ট কে প্রথম থেকে অর্থাৎ কীওয়ার্ড রিসার্চ থেকে সেই চিন্তা মাথায় রেখে কীওয়ার্ড সিলেক্ট করতে হয়। এছাড়াও ই-কমার্স এসইওতে ওয়েবসাইট এর বাকি সব ওয়েবপেজ এর থেকে প্রোডাক্ট পেজ এর দিকে বেশি নজর দেওয়া হয়। প্রোডাক্ট পেজ গুলো অন্য-পেজ করার সময় বিশেষ কিছু বিবেচ্য বিষয় রয়েছে যা সাধারণ এসইও থেকে অনেকটাই আলাদা, যা আমরা নিচে বিস্তারিত ভাবে জানবো। এছাড়াও অফ-পেজ অপটিমাইজেশন এর ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু ভিন্নতা যা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।
সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে এবং ই-কমার্স এসইও এর প্রধান কাজ কি?
সার্চ ইঞ্জিন মূলত লাইব্রেরির মতো, আমরা যেমন লাইব্রেরিতে গিয়ে কোন নির্দিষ্ট বই খুঁজি এবং আমাদের পছন্দমতো সবচেয়ে সেরা বইটি নিয়ে থাকি। সার্চ ইঞ্জিন ও ঠিক সেভাবে আমাদের সার্চ করা কীওয়ার্ড এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট SERP পেজ এর প্রথমদিকে রাখে।
আশাকরি আমরা সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে পারছি। তবে ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলো সাধারণ ওয়েবসাইট এর থেকে একটু বড় হয়ে থাকে (পেজ বেশি হয়ে থাক) যার বেশিরভাগই প্রোডাক্ট পেজ। অপরদিকে ই-কমার্স এর ভিজিটররা সাধারণত প্রোডাক্ট এর নাম দিয়ে বেশি সার্চ করে থাকেন।
এতো এতো ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর প্রডাক্ট পেজ এর ভিতরে কিভাবে ভিজিটর এর সামনে পৌঁছানো যায় এইটাই মূলত ই-কমার্স এসইও এর প্রধান কাজ।
ই-কমার্স এসইও এর মূল বিষয়বস্তু

একটি সাধারণ ওয়েবসাইট এসইও করার মতো ই-কমার্স ওয়েবসাইট এসইও করার ও প্রধান বিষয়বস্তু প্রায় একই কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ দিক বিবেচনা করতে হয়। নিচে ই-কমার্স এসইও এর মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা হল:
- ই-কমার্সের জন্য কীওয়ার্ড রিসার্চ
- ই-কমার্সের জন্য অন-পেজ এসইও
- ই-কমার্সের জন্য অফ-পেজ এসইও
- ই-কমার্সের জন্য টেকনিক্যাল এসইও
- ই-কমার্স এসইওতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা
ই-কমার্সের জন্য কীওয়ার্ড রিসার্চ
ই-কমার্স এর জন্য কীওয়ার্ড রিসার্চ করার সময় কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হয় যার মধ্যে অন্যতম ক্রেতার চাহিদা। একজন ক্রেতা কি কি চাইতে পারে (কি কি নিয়ে সার্চ করতে পারে) তা বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হয়।
আমরা জানি প্রতিটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস মানুষের সমস্যা সমাধান করে থাকে। কীওয়ার্ড রিসার্চ করার সময় আমাদের সেই বিষয়টি মাথার রাখতে হবে। ক্রেতা তাদের সমস্যার বিষয়ে কিছু জানতে চাইলেও যেন আমরা তার সমাধান দিতে পারি অপরদিকে সমাধান এর বিষয়ে সার্চ করলেও যেন আমরা তার কাছে পৌছাতে পারি। এছাড়া বাকি সব একটি সাধারণ ওয়েবসাইট এর মতোই, যেমন সব রকমের কীওয়ার্ড এর সংমিশ্রণ রাখতে হবে। (শর্ট-টেইল কিওয়ার্ড, লং-টেইল কিওয়ার্ড, লোকাল কিওয়ার্ড, ব্র্যান্ড কিওয়ার্ড, নেতিবাচক কিওয়ার্ড, রিলেটেড কিওয়ার্ড)। এর পাশাপাশি কয়েকটি বিষয়ে নজর দিয়ে হবে:
- টার্গেটেড ভিজিটর
- কীওয়ার্ড সিলেকশন
- সার্চ ভলিউম
- কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি
ই-কমার্সের জন্য অন-পেজ এসইও
অন-পেজ এসইও এর মুল লক্ষ্য ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন উপযোগী করে তোলা। যেন সার্চ ইঞ্জিন এর রোবট যাকে আমরা ক্রলার হিসেবে চিনি সে সহজেই আমাদের ওয়েবসাইট এর কন্টেন্ট গুলো বুঝতে পারে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ইনডেক্স করে দেয়। এছাড়াও একজন ভিজিটর যেন ওয়েবসাইট এর সবকিছু সুন্দর ভাবে বুঝতে পারে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় অন্য-পেজ এসইও মাধ্যমে। ই-কমার্স এসইওতে অন-পেজ করার সময় বিশেষ কিছু দিক বিবেচনা করতে হয় নিম্নে তা তুলে ধরা হল:
- কনটেন্ট কোয়ালিটি
- কীওয়ার্ড এর সঠিক ব্যবহার
- মেটা ট্যাগ এন্ড মেটা ডেস্ক্রিপশন্স
- প্রডাক্ট এর টাইটেল এবং ডেস্ক্রিপশন্স
- প্রডাক্ট ইমেজ অপ্টিমাইজেশন
- ইন্টারনাল এবং এক্সটারনাল লিঙ্ক এর ব্যবহার
- মোবাইল ফ্রেন্ডলী
ই-কমার্সের জন্য অফ-পেজ এসইও
ই-কমার্স কে যদি একটি ব্র্যান্ড এ রূপান্তরিত করানো যায়, তাহলে ব্যবসায়িক ভাবে সফলতা অর্জন করা অনেক সহজ হয়ে যায়। মূলত অফ-পেজ এসইও এর মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট এর ডোমেইন অথোরিটি বাড়ানোর পাশাপাশি একটি সাধারণ ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড এ রূপান্তর করানো সম্ভব।
ওয়েবসাইট এর বাইরে গিয়ে অপটিমাইজেশন এর যেসব কাজ করা হয় তাকে বলা হয় অফ-পেজ এসইও। ই-কমার্স এর জন্য অফ-পেজ এসইও সাধারণ একটি ওয়েবসাইট এর মতোই তবে এখানে বিশেষ কিছু দিক বিবেচনায় নিতে হয় তা নিচে তুলে ধরা হল:
- প্রোডাক্ট পেজ এর জন্য ব্যাকলিংক
- লোকাল এসইও
- স্যোসাল মিডিয়া
- ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
ই-কমার্সের জন্য টেকনিক্যাল এসইও
টেকনিক্যাল এসইও এমন একটি পক্রিয়া যা ওয়েবসাইট এর টেকনিক্যাল সমস্যা গুলো সমাধান করে ক্রলার এবং ভিজিটর এর জন্য উপযোগী করে তোলে। একটি ওয়েবসাইট টেকনিক্যালি ভাল অবস্থানে থাকলে সেই ওয়েবসাইট এর ইনডেক্স তাড়াতাড়ি হয় এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলো ওই ওয়েবসাইট কে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ই-কমার্স এসইও তে টেকনিক্যাল এসইও এর যেসব দিক খেয়াল রাখতে হয় তা নিচে তুলে ধরা হল:
- সাইট স্পিড এবং পারফরমেন্স
- ই-কমার্সের জন্য মোবাইল অপ্টিমাইজেশান
- প্রোডাক্ট পেজ এর জন্য ক্রলার এবং ইনডেক্স উন্নয়ন করা
- প্রোডাক্ট পেজ এর জন্য স্কিমা মার্কআপ
- HTTPS এবং ওয়েবসাইট নিরাপত্তা
ই-কমার্স এসইওতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ চলতেছে, যার বদৌলতে আমরা অনেক ছোট বড় এফ-কমার্সও তৈরি হতে দেখছি প্রতিনিয়ত। তবে এফ-কমার্স এবং ই-কমার্স এর বিষয়টা এক মনে হলেও এখানে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে, কোন এক সময় এই বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করা হবে।
সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া সিগন্যাল (লাইক, কমেন্ট, শেয়ার) সরাসরি কোন ওয়েবসাইট এর এসইওতে ভূমিকা রাখেন তবে ওয়েবসাইট এ ট্রাফিক ড্রাইভ করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। সেক্ষেত্রে ই-কমার্স এসইও এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা রয়েছে এবং তা ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
কিভাবে একজন ই-কমার্স এসইও এক্সপার্ট হবেন?

একজন সফল ই-কমার্স এসইও এক্সপার্ট হতে গেলে আপনাকে প্রথমেই একজন ভালো সেলস পারসন হতে হবে, বলা যায় এইটা ই-কমার্স এর সাথে কাজ করার পূর্বশর্ত। আপনাকে কাস্টমার/ ভিজিটর এর চাহিদা বুঝতে হবে এবং সেই হিসেবে আপনার কার্যক্রম পরিচালনা করার এবিলিটি থাকতে হবে।
এছাড়া ই-কমার্স এসইও এক্সপার্ট হবার পথ সাধারণ একজন এসইও এক্সপার্ট হবার মতোই। “কিভাবে একজন সফল এসইও এক্সপার্ট হবেন” সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি আপনি আমাদের সেই ব্লগ-পোস্ট টি পরলে বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে যাবে আশাকরি।
ই-কমার্স এসইও এর ভবিষ্যৎ কেমন হবে?
আশাকরি শুরুতেই আমরা এই বিষয়ে একটা ভালো ধারনা লাভ করেছি। তবুও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আছে। গ্লোবাল ই-কমার্স বাজার ২০২২ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১২.২২ CAGR-এ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০৩০ সালে গিয়ে তা দাঁড়াবে $৪৭.৭৩ ট্রিলিয়ন ডলারে। আরেকটি হিসাব কষে নেওয়া যাক, Research and Markets এর তথ্যমতে ২০৩০ সাল নাগাদ এসইও এর মার্কেট সাইজ দাঁড়াবে $১২৯.৬ বিলিয়ন ডলারে।
এখানে ২ টি বিষয় স্পট এবং স্বচ্ছ তা হচ্ছে, ই-কমার্স এবং এসইও ২ টি সেক্টরই ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে। তাহলে বলাই বাহুল্য যে আগামীতে আমরা ই-কমার্স এসইও কে অনেক উঁচু স্থানে দেখতে যাচ্ছি।
উপসংহার
পরিশেষে এটুকু বলতে চাই যে, এক সময় যা আমরা ভাবিনি তা এখন হচ্ছে, এমন অনেক ব্যবসায় আছে যা কখনও ই-কমার্সে আসার কথা ছিল না কিন্তু আসছে এবং বেশ ভালো করতেছে। পাশাপাশি আমরা যেমন এখন এক ক্যাশ-লেস সোসাইটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এর সাথে সাথে হ্যাসেল ফ্রি কেনাকাটার জগতটাও ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুরো বিষয়টি সংক্ষিপ্ত করলে আমরা এইটা জোর দিয়ে বলতেই পারি যে আমরা ই-কমার্স এবং ই-কমার্স এসইও কে একটা ভালো অবস্থানে দেখতে যাচ্ছি ভবিষ্যতে।