নেটওয়ার্ক সার্ভার হচ্ছে একটি কম্পিউটার সিস্টেম যা ডিভাইস থেকে ডিভাইসে ডাটা ট্র্যান্সফার ও নেটওয়ার্ক সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি নেটওয়ার্ক চলাচলের জন্য একটি সেন্ট্রাল হাব হিসেবে কাজ করে। সহজ কথায় বলতে গেলে এটি একটি রাস্তা বা হাইওয়ে যা একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটি কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। এবং উক্ত কম্পিউটার দুটিতে ডাটা পাস করে থাকে। মূলত আমরা ইন্টারনেট বলতে যা বুঝি তা আসলে এই নেটওয়ার্ক সার্ভারকেই বোঝায়। নিচে নেটওয়ার্ক সার্ভার কীভাবে কাজ করে এবং এর ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Table of Contents
নেটওয়ার্ক সার্ভার কম্পিউটার কীভাবে কাজ করে
একটি নেটওয়ার্ক সার্ভার কি কি বিষয়ের উপরে কাজ করে সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
রিকোয়েস্ট রিসিভ
নেটওয়ার্ক সার্ভার গুলোর কাজ হচ্ছে সবসময় রিকোয়েস্ট আসছে কিনা সে সম্পর্কে সজাগ থাকা। অর্থাৎ এই সার্ভার গুলো রিকোয়েস্ট রিসিভ করার জন্য সবসময় ওপেন থাকে। রিকোয়েস্টগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে যেমন ফাইল অ্যাক্সেস রিকোয়েস্ট, ই-মেইল রিট্রাইভ রিকোয়েস্ট ইত্যাদি।

রিকোয়েস্ট প্রোসেসিং ও রেসপন্সিং
নেটওয়ার্ক সার্ভার রিকোয়েস্ট রিসিভ করার পর তার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে প্রসেস করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, নেটওয়ার্ক সার্ভার একটি ওয়েব পেজ রিকোয়েস্ট যেভাবে হ্যান্ডেল করে একটি ডাটাবেজ রিকোয়েস্ট কিন্তু সে ভাবে হ্যান্ডেল করে না।
এটি প্রথমে আগত রিকোয়েস্টের ধরণ নির্ধারণ করে তার জন্য প্রযোজ্য প্রোসেসিং পাওয়ার খরচ করে। মূলত একটি নেটওয়ার্ক সার্ভার তার কাছে আসা রিকোয়েস্ট হ্যান্ডেল করার জন্য সার্ভার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার রিসোর্স ব্যবহার করে থাকে।
রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট
নেটওয়ার্ক সার্ভার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলতে উক্ত সার্ভার কীভাবে রিকোয়েস্ট রিসিভ, প্রসেস ও সেন্ড করে থাকে তাকে বোঝায়। কারণ নেটওয়ার্ক সার্ভার সবসময় রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার জন্য রেডি থাকে। যে কারণে একই সাথে অনেকগুলো রিকোয়েস্ট নিয়ে কাজ করতে হয়।
সার্ভার এই সকল রিকুয়েস্ট তার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাবিলিটির মাধ্যমে গুছিয়ে নেয়। এই সিস্টেমের মাধ্যমে কোন টাস্ক কীভাবে এবং কখন প্রসেস করা হবে তা নিশ্চিত করে যা হার্ডওয়্যার ইউজ স্টাবল রাখতে সহায়তা করে থাকে।
নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট
নেটওয়ার্ক সার্ভার ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট করার পাশাপাশি IP অ্যাসাইন করা, ডাটার গতিশীলতা ও ডাটার সিকিউরিটি প্রোটোকল মেইন্টেইন করে থাকে। এতে সার্ভারের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ম্যানেজ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
নেটওয়ার্ক সার্ভারের গুরুত্বপূর্ণ ফিচারস
নিচে নেটওয়ার্ক সার্ভারের গুরুত্বপূর্ণ ফিচার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
উচ্চ প্রোসেসিং পাওয়ার
নেটওয়ার্ক সার্ভারের প্রোসেসিং পাওয়ার অনেক বেশি হয়ে থাকে। কারণ এই ধরনের সার্ভারের একই সাথে অনেকগুলো রিকোয়েস্ট হ্যান্ডেল করতে হয়। যে কারণে এর প্রোসেসিং পাওয়ার বেশি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই কারণে নেটওয়ার্ক সার্ভারগুলোয় লেটেস্ট শক্তিশালী প্রসেসর ইউজ করা হয় যেগুলোতে অনেক গুলো করে কোর থাকে।
এত বেশি পরিমাণ প্রোসেসিং পাওয়ার প্রয়োজন হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে বড় সাইজের ডাটাবেজ ও উচ্চ মাত্রার ভিজিটর হ্যান্ডেল করা। যেহেতু নেটওয়ার্ক সার্ভারে একই সাথে অনেকগুলো রিকোয়েস্ট আসা স্বাভাবিক সেহেতু এই রিকোয়েস্টগুলো হ্যান্ডেল করাও জরুরি নাহলে ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে থাকবে। আমাদের আইটিনাটহোস্টিং এর সকল সার্ভারে উচ্চ প্রোসেসিং ক্ষমতা সম্পন্ন সিপিইউ ইউজ করা হয়। পাশাপাশি NVMe এসএসডি স্টোরেজ হিসেবে থাকায় সার্ভার স্পিড অনেক বেশি হয়ে থাকে।
উচ্চ মেমোরি ক্যাপাবিলিটি
সার্ভার প্রিমিয়াম না চিপ তা নির্ধারণ করার যত প্যারামিটার রয়েছে মেমোরি পাওয়ার তার মধ্যে অন্যতম। সাধারণত একটি সার্ভার কেমন পারফর্ম করবে তা তার মেমোরি হার্ডওয়্যার ও ক্যাপাবিলিটির উপরে নির্ভর করে থাকে। অন্যদিকে একই সাথে অনেকগুলো রিকোয়েস্ট গ্রহণ ও হ্যান্ডেল করার জন্য উচ্চ মেমোরি ক্যাপাবিলিটি থাকতে হয়। নাহলে ডাটা প্রসেস ঠিকভাবে হয় না যা নেটওয়ার্ক সার্ভারের ডাটা ট্র্যান্সফার পারফর্মেন্সে প্রভাব ফেলে।
অত্যাধুনিক সিকিউরিটি প্রোটোকল
একজন হ্যাকার যখন কোন সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে তখন সে নেটওয়ার্ক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে থাকে। নেটওয়ার্ক সার্ভার গুলো ডাটা ট্র্যান্সফার করার সময় বিভিন্ন আধুনিক ট্রান্সফার প্রোটোকল ইউজ করে থাকে। এতে ডাটা অনেক সিকিউরভাবে ট্র্যান্সফার হয়ে থাকে। যে কারণে হ্যাকার দ্বারা ডাটা চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে। বর্তমান সময়ে নেটওয়ার্ক সার্ভার গুলো তাদের ডাটা সেফ গার্ড করার জন্য ফায়ারওয়াল, এনক্রিপশন, এসএসএল ইত্যাদি ইউজ করে থাকে।
ভার্চুয়ালাইজেশন সাপোর্ট
ভার্চুয়ালাইজেশন প্রযুক্তি একটি সার্ভারে অনেকগুলো ভার্চুয়াল সার্ভার তৈরি করার সুবিধা দিয়ে থাকে। এতে যেমন রিসোর্স ইউটিলাইজেশন হয় তেমনি বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশন ইউজ করা সুবিধাজনক হয়ে থাকে।
ডাটাবেজ সার্ভার কি
ডাটাবেজ সফটওয়্যার যে হার্ডওয়্যারের উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয় তাকে ডাটাবেজ সার্ভার বলা হয়। ডাটাবেজ সফটওয়্যারগুলোর প্রধান কাজ হচ্ছে ইউজার বা বিভিন্ন কোম্পানির ডাটা স্টোর করা ও সেগুলো ম্যানেজ করা। মূলত একটি ডাটাবেজ সার্ভারের ব্যাক-এন্ড ফাংশন ও ফ্রন্ট-এন্ড ফাংশন থাকে। যেখানে ব্যাক-এন্ড ডাটা স্টোর করার কাজ করে এবং ফ্রন্ট-এন্ড উক্ত ডাটা অ্যাক্সেস ও মডিফাই করার সুবিধা দিয়ে থাকে। নিচে একটি ডাটাবেজ কীভাবে কাজ করে থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ডাটাবেজ সার্ভার কীভাবে কাজ করে
একটি ডাটাবেজ সার্ভার তৈরি হয় স্টোরেজ এবং মেমোরি ও ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের সমন্বয়ে। DBMS বা Database Managment Software হচ্ছে একটি অ্যাপ্লিকেশন যা ব্যাক-এন্ড ফাংশনের সাথে কমিউনিকেট করে থাকে। অর্থাৎ যখন কোন ইউজার ডাটাবেজে কোন ডাটা ইনপুট করে তা ডিবিএমএস এর মাধ্যমে প্রসেস হয় এবং এটি ব্যাক-এন্ডে ইনফরমেশন অ্যাক্সেস রিকোয়েস্ট সম্পন্ন করে থাকে। ইনফরমেশন রিকোয়েস্ট অনেক ধরনের হয়ে থাকে যেমন, নতুন ডাটা ইনপুট, পূর্বের ডাটা অ্যাক্সেস, ডাটা মডিফাই, ডাটা ডিলিট, অ্যাক্সেস ডিটেইলস মডিফাই ইত্যাদি।
ডাটাবেজ সার্ভারের ধরণ
অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ডাটাবেজ সার্ভার কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। নিচে সে সম্পর্কে নিচে ধারণা দেওয়া হলো।
- সেন্ট্রালাইজড ডাটাবেজ সার্ভার: এই ধরনের সার্ভার একটি নির্দিষ্ট লোকেশন থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। সাধারণত বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের ডাটা সিকিউর রাখার জন্য নিজস্ব সেন্ট্রালাইজড ডাটাবেজ সার্ভার ইউজ করে থাকে। কারণ এতে উক্ত সার্ভারে তাদের পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব থাকে এবং ডাটা সিকিউরিটি অনেক বৃদ্ধি পায়।
- ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটাবেজ সার্ভার: এটি অনেকটা ওয়েব সার্ভারের মতো করে সাজানো থাকে। অর্থাৎ এই ধরনের ডাটাবেজ সার্ভার মাল্টিপল লোকেশনে থাকে। যে কারণে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে দ্রুততার সাথে ডাটা অ্যাক্সেস করা যায়।
- অপারেশনাল ডাটাবেজ সার্ভার: এটি হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম যেখানে আপনি ইচ্ছামতো বারবার ডাটা আপডেট করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আপনার ডিভাইস অবশ্যই অথরাইজড হতে হবে।
- ক্লাউড ডাটাবেজ সার্ভার: আমরা ক্লাউড সার্ভার সম্পর্কে জানি। এটি এমন একটি সিস্টেম যেখানে মাল্টিপল সার্ভার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে এবং ডেডিকেটেড সার্ভারের মতো আচরণ করে। যে কারণে এখানে একই নেটওয়ার্কে মাল্টিপল সার্ভার থাকলেও তারা নিজেদের মধ্যে রিসোর্স শেয়ার করে স্কেলিং করে থাকে। ক্লাউড ডাটাবেজ সার্ভার ঠিক একইভাবে কাজ করে থেকে। এখানে ইউজার অনেক দ্রুত ডাটাবেজ ব্রাউজ করতে পারে এবং ডাটা মডিফাই করতে পারে।

সার্ভার ডাউন মানে কি
সার্ভার ডাউন অর্থ হচ্ছে যখন সার্ভার কোন কারণে বন্ধ হয়ে থাকে অথবা সঠিকভাবে কাজ করে না। সার্ভার ডাউন হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকে, যেমন-
- হার্ডওয়্যার ফেইল করলে
- বরাদ্দকৃত ব্যান্ডউইথ শেষ হয়ে গেলে
- DNS ইস্যু থাকলে
- DDoS অ্যাটাক হওয়ার কারণে
- সার্ভার এক্সপায়ার হয়ে গেলে
- হঠাৎ বেশি ভিজিটর আসার কারণে সার্ভার রিসোর্স শেষ হয়ে গেলে
- সফটওয়্যার মিস-কনফিগারেশন
- সফটওয়্যার ইস্যু থাকলে
- সফটওয়্যার আপডেট ক্রাশ করলে
- থার্ড-পার্টি কোন সফটওয়্যারের ইস্যুর কারণে
- নেটওয়ার্ক ইস্যু থাকলে
- সার্ভার ডাউনটাইম
- সফটওয়্যার ক্রাশ
ইত্যাদি ছাড়াও আরও অনেক কারণে সার্ভার ডাউন থাকতে পারে। এই ধরনের সমস্যায় পরলে সবার আগে হোস্টিং প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ সার্ভার ডাউন থাকলে ওয়েবসাইট যেমন ভিজিট করা জায়না তেমনি ওয়েবসাইটের রেপুটেশন নষ্ট হয় এবং বিজনেসে খারাপ প্রভাব ফেলে।
শেষ কথা
ইন্টারনেটে আমরা যা দেখি তা আমাদের সামনে আসে সার্ভার থেকে। অর্থাৎ আমরা যখন ব্রাউজারে কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য URL প্রবেশ করি তখন তা সার্ভার থেকে ওয়েবসাইটের ফাইল এনে আমাদের সামনে দেখায়। আজকের লেখায় নেটওয়ার্ক সার্ভার, ডাটাবেজ সার্ভার ও সার্ভার ডাউন কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।