You are currently viewing সাইবার সিকিউরিটি কি, ইন্টারনেট সিকিউরিটির গুরুত্ব ও ব্যবহার
সাইবার সিকিউরিটি

ইন্টারনেটের মূল চাবি হচ্ছে ডাটা। ডাটা ছাড়া ইন্টারনেট পুরোপুরি অচল। কিন্তু এই ডাটা সুরক্ষা দিতে আমরা বরাবরি উদাসীনতা দেখাই। বর্তমানে আমরা ইন্টারনেটে প্রায় বিভিন্ন প্রকারের সাইবার হামলা বা হ্যাকিং এর কথা শুনে থাকি। সাধারণত অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে আমাদের অনিহার কারণে এই ধরনের হামলার হতে হয়।

এতে অনেক সেনসিটিভ ডাটা হ্যাকারের হাতে চলে যায় অথবা ধ্বংস হয়ে যায়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা। আমাদের আজকের লেখায় সাইবার সিকিউরিটি কি এবং কত প্রকার সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

সাইবার সিকিউরিটি কি

সাইবার সিকিউরিটি মূলত হচ্ছে সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ককে হ্যাকারের হাত থেকে রক্ষা করা। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সকল তথ্য অনলাইনে জমা হচ্ছে। হ্যাকার আমাদের এই পার্সোনাল ডাটাকে জিম্মি করে ব্ল্যাক মেইল এর মতো নিকৃষ্ট কাজ করছে। যা আমাদের সামাজিক অবস্থান ও মানুষিক শান্তিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। যে কারণে এই ধরনের ইন্টারনেট চালিত ডিভাইসের প্রয়োজনীয়তা এত বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

সাধারণ মানুষকে হ্যাকারের কালো থাবা থেকে মুক্ত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি। সাইবার দুনিয়ায় নেটওয়ার্ক ও স্টোরেজ ডিভাইসগুলোকে হ্যাক হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সাইবার সিকিউরিটি তথা কম্পিউটার সিকিউরিটির প্রয়োজন পরে। এটি মূলত ডিজিটাল প্লাটফর্ম গুলোকে সম্ভাব্য হ্যাকিং থেকে সুরক্ষা দেওয়াকে বুঝায়। 

সহজ কথায় সাইবার সিকিউরিটি বলতে যে কোন মূল্যে কম্পিউটার, মোবাইল সহ যে সকল ডিভাইস নেটওয়ার্ক দিয়ে চলে তা হ্যাকারের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়াকে সাইবার সিকিউরিটি বলে। এই সুরক্ষা বলতে সাধারণত-

  • ম্যালওয়্যার
  • র‍্যাঞ্জমওয়্যার
  • ট্রোজান
  • অ্যাডওয়্যার
  • ফিশিং
  • ব্রুট-ফোর্স
  • ডিডস
  • সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং 

ইত্যাদি থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করাকে বোঝায়। নিচে সাইবার সিকিউরিটি কত প্রকার, ও কি কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

সাইবার সিকিউরিটি কত প্রকার ও কি কি

সাইবার সিকিউরিটি কি

সাইবার সিকিউরিটি একটি ভাইটাল বিষয়। বর্তমান এই প্রযুক্তির স্বর্ণযুগে প্রতিটি ডিভাইস ও নেটওয়ার্ককে সুরক্ষা দেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রযুক্তি আমাদের জীবনের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে আমরা চাইলেও এগুলোকে আলাদা করতে পারবো না। নিচে সাইবার সিকিউরিটির কোন কোন বিষয় গুলো আমাদের জানা জরুরি তা নিচে দেওয়া হল। 

মোবাইল সিকিউরিটি

মোবাইল সিকিউরিটি হচ্ছে মোবাইল ডিভাইস যেমন ট্যাব বা স্মার্টফোন কে হ্যাক হওয়া থেকে সুরক্ষা দেওয়া। এই ডিভাইস গুলোকে আমাদের সব থেকে বেশি সুরক্ষা প্রদান করা উচিত কারণ এখানে আমাদের পার্সোনাল অনেক ছবি, ভিডিও থাকে। পাশাপাশি কাজের সুবিধার্থে আমরা বিজনেস ডিটেইলস এবং ব্যাংকিং রিলেটেড ডাটাও মোবাইলে রাখি। 

যে কারণে হ্যাকার এই ডিভাইসগুলোকে বেশি টার্গেট করে থাকে। অন্যদিকে মোবাইল ডিভাইসের বিষয়ে আমরা সিকিউরিটি নিয়ে তেমন চিন্তা করি না। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে কোন ফিশিং লিংকে প্রবেশ করে বা পাইরেটেড সাইট থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার পাশাপাশি ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে ফেলি। যা আমাদের ডিভাইসের ডাটা নিয়ে হ্যাকারের কাছে পৌঁছে দেয়। আমাদের ডে টু ডে ডিভাইস হিসেবে স্মার্টফোন ডিভাইসকে সুরক্ষা দেওয়া আমাদের সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি থাকা প্রয়োজন। মোবাইল সিকিউরিটির মূল বিষয় গুলো হচ্ছে-

  • ডাটা এনক্রিপশন
  • অপারেটিং সিস্টেম আপডেট
  • বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন
  • অফিশিয়াল অ্যাপস্টোর ইউজ করা
  • লোকেশন ট্র্যাকিং সচল রাখা
  • অ্যাপ আপ টু ডেট রাখা

ইত্যাদি বিষয়গুলো নিশ্চিত করা। পাশাপাশি লক স্ক্রিন, স্ট্রং পাসওয়ার্ড, পাবলিক ওয়াইফাই ইউজ না করা, পাবলিক প্লেসে থাকা USB চার্জার ইউজ না করা মোবাইল সিকিউরিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। 

নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি

নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি হচ্ছে নেটওয়ার্কের উপরে যে যে ধরনের সাইবার অ্যাটাক হয় সেগুলোকে প্রতিরোধ করা। কারণ প্রায় সময় হ্যাকারের হাতে সরাসরি ডিভাইসের অ্যাক্সেস থাকে না। সরাসরি অ্যাক্সেস না থাকায় ডিভাইসে প্রবেসের জন্য হ্যাকার ইন্টারনেট তথা নেটওয়ার্কের সাহায্য নেয়। প্রথমে নেটওয়ার্ক ইউজ করে সিস্টেমে প্রবেশ করে ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে তারপর সাইটে ব্যাকডোর তৈরি করে পরবর্তীতে ডিভাইসের অ্যাক্সেস নেয়। 

অর্থাৎ আপনি যদি আপনার নেটওয়ার্ক কে নিরাপত্তা দিতে পারেন তাহলে আপনার ডিভাইস হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা ৮০% কমিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমান সময়ে নেটওয়ার্ককে সুরক্ষা দেওয়ার অনেকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। যার মধ্যে-

  • ফায়ারওয়াল
  • ভিপিএন (VPN)
  • এনক্রিপশন
  • এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি

অন্যতম যা সরাসরি নেটওয়ার্ককে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। একটা কথা মনে রাখতে হবে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে চাইলে সবার প্রথমে নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে। নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ছাড়া কখনোই সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। 

ইনফরমেশন সিকিউরিটি

ইনফরমেশন সিকিউরিটি হচ্ছে তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। একজন হ্যাকারের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে ইনফরমেশন সংগ্রহ করা। কারণ ইনফরমেশন হচ্ছে অনলাইন দুনিয়ার সব থেকে বড় হাতিয়ার। সাধারণত তথ্য সুরক্ষা বলতে বোঝায় বিভিন্ন এনক্রিপশন, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল, অথেনটিকেশন দিয়ে ডাটা সুরক্ষিত রাখা। কারণ এগুলো অ্যাপ্লাই করার ফলে কেউ আপনার ডাটা সরাসরি অ্যাক্সেস করতে পারবে না। 

ইনফরমেশন সুরক্ষিত রাখার জন্য নিম্নে বর্ণিত প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন-

  • অ্যাক্সেস কন্ট্রোল
  • এনক্রিপশন 
  • ডাটা ব্যাকআপ 
  • বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন
  • ডিজিটাল সিগনেচার

ইত্যাদি ব্যবহার করে যে কোন প্রকারের ডাটা সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। অন্যদিকে সাইবার সিকিউরিটি জগতে ইনফরমেশন সিকিউরিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর কারণ হচ্ছে যেহেতু ইন্টারনেট বলতেই ইনফরমেশনের বোঝায় সেহেতু এই ডাটা সুরক্ষা দিতে না পারলে ইন্টারনেটের প্রধান উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। 

ক্লাউড সিকিউরিটি 

ক্লাউড বর্তমান সময়ের একটি হট টপিক। কারণ ক্লাউড ইউজ করার অনেক অনেক সুবিধা রয়েছে যা আমাদের গতানুগতিক স্টোরেজ ধারণাকে একদম পাল্টে দিয়েছে। ক্লাউড আসার পর ডাটা সংরক্ষণ ক্যাপাসিটি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ডাটার সিকিউরিটি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ছোট বড় সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট হোস্ট করার পাশাপাশি স্টোরেজ ইউজ করার জন্য ক্লাউড ব্যবহার করছে। 

যে কারণে এই সেক্টরে সিকিউরিটির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লাউড সিস্টেমে সবার ট্রাস্ট বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর ফাস্ট দাত্রা ট্র্যান্সফার ক্যাপাবিলিটি ও ডাটা সিকিউরিটি। যাইহোক ক্লাউড সিকিউরিটির প্রধান উপাদান গুলো হচ্ছে- 

  • থ্রেট ইন্টেলিজেন্স এবং মনিটরিং
  • ডেটা ব্যাকআপ
  • ডেটা রিকভারি
  • আইডেন্টিটি অ্যান্ড অ্যাক্সেস ম্যানেজমেন্ট
  • অ্যাক্সেস কন্ট্রোল
  • এনক্রিপশন

এই প্রযুক্তি গুলো ঠিকভাবে ইমপ্লিমেন্ট করতে পারলে সহজেই ডাটা ব্রিচ সহ সাইবার অ্যাটাক প্রতিরোধ করা আরও সহজ হবে। 

ডাটা সিকিউরিটি

ডাটা সিকিউরিটি

সাইবার সিকিউরিটি বলতে সাধারণত এই ডাটা সিকিউরিটিকে বোঝায়। ডাটাকে অনেকভাবেই সিকিউর করা যায়। তবে তাদের মধ্যে এনক্রিপশন, ডেটা মাস্কিং, ডেটা ব্যাকআপ এবং অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমান সময়ে হ্যাকারদের প্রধান টার্গেট থাকে ডাটা চুরি করা। ডাটা চুরি করার জন্য তারা নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে।

এই সকল অ্যাটাক প্রতিরোধ করার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ও মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ইউজ করতে হবে। এই প্রযুক্তি গুলো সকল ধরনের অবৈধ লগইন প্রতিরোধ করে থাকে। যে কারণে অবাঞ্ছিত কেউ অ্যাকাউন্ট লগইন করতে পারে না এবং আমাদের ডাটার সুরক্ষা নিশ্চিত হয়ে থাকে। 

এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি

এন্ডপয়েন্ট হচ্ছে নেটওয়ার্ক ও ডিভাইসের মধ্যে সংযোগের জায়গা। আমরা যদি এই জায়গায় সুরক্ষা বলয় স্থাপন করতে পারি তাহলে হ্যাকার নেটওয়ার্ক থেকে ডিভাইসে প্রবেশের মুখেই বাধাপ্রাপ্ত হবে। এতে আমাদের ডিভাইসে থাকা ডাটা সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে। এই ধারণার উপরে ভর করেই এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি সিস্টেমের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। 

বর্তমানে এন্ডপয়েন্ট সিকিউরিটি নিশ্চিত করার সব থেকে ভালো মাধ্যম হচ্ছে ফায়ারওয়াল, এনক্রিপশন ও অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার। এগুলো নেটওয়ার্ক এন্ডপয়েন্ট থেকে ডিভাইসকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।  

ফিজিক্যাল সিকিউরিটি

ফিজিক্যাল সিকিউরিটি হচ্ছে ডিভাইসের হার্ডওয়্যার তথা সার্ভার এবং ডিভাইসকে সুরক্ষা প্রধান করা। ধরুন আপনি আপনার সিস্টেমে সকল ধরনের এনক্রিপশন সহ ডাটা সুরক্ষা দেওয়ার সব কিছু করে ফেলেছেন। কিন্তু আপনার সার্ভার কোন হ্যাকার তার দখলে নিয়ে নিয়েছে। তাহলে কি আপনার ডাটা গুলো সুরক্ষিত থাকল? অবশ্যই না। 

এই কারণে ফিজিক্যাল সিকিউরিটি অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। সাধারণত ফিজিক্যাল সিকিউরিটি বলতে ডাটা সেন্টারকে সুরক্ষিত রাখাকে বোঝায়। ডাটা সেন্টার সুরক্ষিত রাখার জন্য ক্যামেরা, বায়োমেট্রিক্স এবং অ্যালার্ম সিস্টেমের সাহায্য নেওয়া যায়। 

অ্যাক্সেস ম্যানেজমেন্ট সিকিউরিটি

অ্যাক্সেস ম্যানেজমেন্ট সিকিউরিটি হচ্ছে ডাটা অ্যাক্সেস করতে প্রপার পরিচয় দেওয়া। অর্থাৎ আপনার ডাটা আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ অ্যাক্সেস করতে পারবে না। যেমন আপনি ছাড়া আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অন্য কেউ অ্যাক্সেস করতে পাসওয়ার্ড লাগে ঠিক তেমনি। 

ডাটা সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অ্যাক্সেস ম্যানেজমেন্ট সিকিউরিটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি আপনার সিস্টেমে বায়োমেট্রিক্স ও মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ইউজ করে সহজেই হ্যাকার ও অবৈধ অ্যাক্সেস থেকে ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন। 

শেষ কথা

আমাদের আজকের আলোচনায় সাইবার সিকিউরিটি কি এবং এর মধ্যে কোন কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। মূলত অনলাইনে নিজেকে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সাইবার সিকিউরিটি অনেক জরুরি। এই আর্টিকেল পরে আপনি কি কি কাজ করলে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত হবে সে বিষয়ে ধারণা পাবেন। 

Leave a Reply