Table of Contents
ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন কি?
একবার কল্পনা করে দেখুন তো, আপনি কোন তথ্যর জন্য আপনার ফোন কে জিজ্ঞেস করছেন আপনার ফোন আপনাকে উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। দারুণ না ব্যাপার টা? একদম একজন মানুষের মতো বা বন্ধুর মতো আপনার সাথে আপনার ফোনের কথোপকথন হচ্ছে এবং আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পাচ্ছেন। আমরা কোন তথ্যর জন্য সাধারণত সার্চ ইঞ্জিনে টেক্সট করে সার্চ করার সাথে অভ্যস্ত, কিন্তু এখন দিন বদলাচ্ছে। আমরা সহজেই ভয়েস সার্চ এর মাধ্যমে আমাদের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে নিতে পারছি এবং ভবিষ্যতে আমরা ভয়েস সার্চকে আরও উন্নত দেখবো এই কথা বলাই বাহুল্য!
ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন মূলত টেক্সট সার্চ এর বিকল্প। ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড ডিভাইসগুলি ব্যাবহার করে ভয়েস এর মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন থেকে তথ্য গ্রহণ করাই ভয়েস সার্চ। অপরদিকে, একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ প্রযুক্তি এবং সার্চ ইঞ্জিন এর উপযুক্ত করে তোলার মাধ্যমে ভয়েস সার্চ রেজাল্ট এ অবস্থান উন্নয়ন করাই মূলত ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন। ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর বদৌলতে আমরা গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, সিরি এবং অ্যামাজন অ্যালেক্সার মতো প্রযুক্তির দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা লক্ষ্য করতে পারছি এবং আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে ভয়েস সার্চ এর জন্য নিজেকের অবস্থান শক্ত করার জন্য ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভয়েস সার্চ কিভাবে কাজ করে?

ভয়েস সার্চ মূলত টাইপ করার পরিবর্তে কথা বলার মাধ্যমে তথ্য প্রদান করে থাকে। যখন আপনি একটি ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড ডিভাইস ব্যবহার করে কন তথ্য জানার জন্য জিজ্ঞাসা করেন তখন ডিভাইসটি আপনার কথার অর্থ বুঝার জন্য ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) ব্যবহার করে সাধারণ সার্চ এর মতো সার্চ ইঞ্জিন এ অনুসন্ধান করার মাধ্যমে সবচেয়ে সেরা উত্তরটি আপনাকে প্রদান করে থাকে। এখানে মূলত আপনার কথা বলা এবং সার্চ ইঞ্জিন এ সেই কথা পৌঁছে দেওার কাজতি করে থাকে NPL. সার্চ ইঞ্জিন এর পাশাপাশি এখন আমরা স্বয়ংক্রিয় নানান যন্ত্রে, রোবটিক্স, মেশিন লার্নিং এর মতো বড় বড় সেক্টর এ ভয়েস সার্চ এর ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত ভয়েস সার্চ আমাদের তথ্য অনুসন্ধান করার নিয়ম কে বদলে দিচ্ছে।
ভয়েস সার্চ এর গুরুত্ব
ভয়েস সার্চ এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আরও বৃদ্ধি পাবে, এখন ভয়েস সার্চ আর কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য নয় বরং ক্রমাগতভাবে মূলধারায় পরিণত হচ্ছে। Grand View Research এর তথ্যমতে ২০২৩ সালে ভয়েস সার্চ এর মার্কেট সাইজ ছিল $৩.০৫ বিলিয়ন ডলার যা ২০৩০ সাল নাগাদ বৃদ্ধি পাবে ২৩.৮ CAGR এ। ভয়েস সার্চ এর জনপ্রিয়তার ফলে আমরা প্রচলিত যে এসইও দেখে আসছি তাতে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন ওয়েবসাইট টেক্সট সার্চ এর পাশাপাশি ভয়েস সার্চ এর দিকেও বিশেষভাবে নজর দিতে বাধ্য হচ্ছে।
এছাড়াও, ভয়েস সার্চ এর জনপ্রিয়তা, রোবটিক্স এর বিপ্লব এর কাড়নে দিন দিন ভয়েস সার্চ এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আমরাও তা মেনে নিচ্ছি, অভ্যস্ত হচ্ছি।
ভয়েস সার্চ এবং টেক্সট সার্চ এর মধ্যে পার্থক্য কি?
ভয়েস সার্চ এবং টেক্সট সার্চ এর মধ্যে যদি আমরা পার্থক্য খুঁজতে যাই তাহলে সাধারণ চোখে আমাদের কাছে ধরা দেবে সার্চ করার ধরন। যেমন ভয়েস সার্চ এর ক্ষেত্রে আমরা কথা বলার মাধ্যমে কোন কিছু সার্চ করি অপরদিকে টেক্সট সার্চ এ কিছু লিখে সার্চ করা হয়ে থাকে। পার্থক্য সামান্য মনে হলেও এখানে বিস্তর তফাত রয়েছে, যা আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করবো।
একবার ভাবুন তো, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন তো মানুষ নয়। তাহলে আপনার কথার উত্তর কিভাবে দিচ্ছে? এখানেই প্রধান তফাৎ, মানুষের ভয়েস এবং ডিভাইসের বোঝার ক্ষমতা পুরোটাই প্রসেস করা হয় Natural language processing (NPL) এর দ্বারা। এছাড়াও লিখে সার্চ করা Keyword গুলোর থেকে ভয়েস সার্চ এর Keyword তুলনামূলক বড় হয় এবং প্রশ্নবোধক ও হয়ে থাকে। মূলত এখন ভয়েস সার্চ এ যা নিয়ে সার্চ করা হয় তার সিংহ ভাগই প্রশ্ন টাইপ সার্চ।
ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন করার সাধারণ নিয়ম সমূহ

ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে এইটা সাধারণ এসইও এর মতো না। এখানে অনেক বিষয় আছে যা অনেকটা ব্যতিক্রমী, এখানে মানুষ লিখে সার্চ করার পরিবর্তে কথা বলার মাধ্যমে উত্তর খুঁজে থাকে। আজকে আমরা ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর বার্ষিক নিয়ম সম্পর্কে জানবো।
কীওয়ার্ড স্ট্রাটেজি
ওয়েবসাইট এসইও করার সময় অনেক প্রকার কীওয়ার্ড সম্পর্কে অবগত হয়েছি, যার মধ্যে অন্যতম লং-টেইল কীওয়ার্ড এবং শর্ট-টেইল কীওয়ার্ড। ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর ক্ষেত্রে লং-টেইল কীওয়ার্ড এবং প্রশ্ন টাইপ কীওয়ার্ড গুলকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কাড়ন অধিকাংশ ভয়েস সার্চ হয়ে থাকে বড় এবং প্রশ্নবোধক। উদাহরণ সরূপ বলতে গেলে একটি সাধারণ কীওয়ার্ড হতে পারে “ভালো খাবারের হোটেল” কিন্তু ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর ক্ষেত্রে আমরা ব্যবহার করবো “ঢাকায় ভালো খাবার হোটেল কোথায়?” আশাকরি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
কন্টেন্ট অপটিমাইজেশন (অন-পেজ এসইও)
যেকোনো ধরনের কন্টেন্ট তা হতে পারে ওয়েবপেজ, পোস্ট বা অন্যকিছু তা তৈরি করার সময় আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে তা যেন সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়। প্রয়োজনে ওয়েবসাইট এর প্রতিটি ব্লগ পোস্ট এ FAQ অ্যাড করে দিতে হবে। আরেকটি বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তা হল ওয়েবসাইট এর কন্টেন্ট গুলোর টোন হতে হবে সাধারণ কথোপকথন এর মতন। এইরকম ছোট ছোট দিক গুলো রপ্ত করতে পারলে সহজেই ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এ ভালো করা সম্ভব।
লোকাল এসইও (অফ-পেজ এসইও)
ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর ক্ষেত্রে লোকাল এসইও বড় রকমের ভূমিকা পালন করে থাকে। কাড়ন ভয়েস সার্চ গুলো বেশিরভাগই হয়ে থাকে লোকেশন ভিত্তিক উদাহরণ সরূপ বলা যায়, ঢাকায় ভালো খাবার হোটেল কোথায়? কাজেই ওয়েবসাইট এর পরিচিতি বারাতে এবং ভয়েস সার্চ ফ্রেন্ডলি করতে লোকাল এসইও এর গুরুত্ব অপরিসীম। এজন্য Google My Business এর মতো বিষয়গুলোতে ভালো করার কোন বিকল্প নেই।
টেকনিক্যাল এসইও
ভয়েস সার্চ এ ভালো করার পূর্বশর্ত ওয়েবসাইট টেকনিক্যালি স্মুথ রাখা। ওয়েবসাইট এর লোডিং স্পিড এর দিকে বিশেষ নজর রাখার পাশাপাশি ওয়েবসাইট করতে হবে মোবাইল ফ্রেন্ডলি। ভয়েস সার্চ এর বেশীরভাগ সার্চ হয়ে তাকে মোবাইল ভিত্তিক কাজেই মোবাইল ফ্রেন্ডলি করা অত্যাবশ্যকীয়। এছাড়াও সার্চ ইঞ্জিন যেন ওয়েবসাইট এর বিষয়বস্তু সহজেই বুঝতে পারে সেক্ষেত্রে স্ট্রাকচার্ড ডেটা ব্যবহার করতে হবে।
ই-কমার্সের জন্য ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন
ভয়েস সার্চ এর ব্যাপ্তি বোধয় ই-কমার্স সাইট গুলতে হবার আগে ছড়িয়েছে। বিশেষ করে Amazon, eBay, Esty এর মতো ওয়েবসাইট গুলতে ভয়েস সার্চ সুবিধা অ্যাড করার পরে থেকে। এছাড়াও Amazon Alexa এর দ্বারা কেনাকাটার বিষয়টি হতে পারে একটি ভালো মানের উদাহরণ।
বর্তমানে ই-কমার্স এর গ্রাহকরা ভয়েস সার্চ এর মাধ্যমে প্রোডাক্ট খুঁজে থাকেন, প্রোডাক্ট এর তুলনা করে থাকেন, পণ্যর দামের তুলনাও করে থাকেন। বর্তমানে সম্ভব্য গ্রাহকদের ক্যাপচার করতে ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট কে প্রস্তুত করা সময়ের দাবি। ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন গুলো এমন ভাবে তৈরি করা উচিৎ জেন তা সমস্যা সমাধান করতে পারেন অর্থাৎ যা যেন প্রশ্নের উত্তর হতে পারে। সাধারণত ক্রেতারা যা নিয়ে প্রশ্ন করে থাকে তার উত্তর যেন সেখানে পেয়ে যায়। এছাড়াও ই-কমার্স এ কাস্টমর সাপোর্ট এ AI এর সাহায্যে ইনস্ট্যান্ট ফিডব্যাক এর ব্যবস্থা করা, যেন তা কাস্টমর এর সকল FAQ গুলো সমাধান করতে পারে।
ভয়েস সার্চ অপ্টিমাইজেশনে সাধারণ চ্যালেঞ্জ সমূহ

ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন জেহতু এখনও একটু নতুন প্রযুক্তি বলা যায়, তাই এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ, সীমাবদ্ধতা থাকবে এইটাই সাধারণ বিষয়। আজকে আমরা ৩ টি প্রধান চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবো।
- নতুন প্রযুক্তির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া
- নিত্যনতুন অ্যালগরিদম
- এসইও এবং ভয়েস সার্চ অপ্টিমাইজেশন এর ভারসাম্য বজায় রাখা
নিত্যনতুন নানান চ্যালেঞ্জ এর মধ্যে অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এইটা নতুন প্রযুক্তি। ভয়েস সার্চ এর জন্য আমাদের ওয়েবসাইট আগে থেকে প্রস্তুত করা ছিল না। কাজেই এখানে বড় একটি সমস্যা এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও জেহতু এটি নতুন প্রযুক্তি তাই সার্চ ইঞ্জিন গুলো এখনও এটি নিয়ে ক্রমাগতভাবে কাজ করেই যাচ্ছে যার ফলে আমরা কিছুদিন পর পর নতুন অ্যালগরিদম পরিবর্তন হতে দেখছি। এর ফলে ওয়েবসাইট এর সাম্প্রতিক অবস্থান ধরে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভয়েস সার্চ এর বিপ্লব হচ্ছে এর মানে এই নয় যে প্রথাগত এসইও চলে যাচ্ছে। ভয়েস সার্চ এবং প্রথাগত এসইও এর ভারসাম্য একই সাথে রক্ষা করাও একটি বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবুও আমরা আশারাখি সকল সমস্যা ছাপিয়ে ভয়েস সার্চ অপ্টিমাইজশন এবং এসইও উভয়ই ভালো করবে ভবিষ্যতে।
ভয়েস সার্চ অপ্টিমাইজেশানের ভবিষ্যৎ
আমরা উপরে আলোচনা করেছি, Grand View Research এর তথ্যমতে ২০২৩ সালে ভয়েস সার্চ এর মার্কেট সাইজ ছিল $৩.০৫ বিলিয়ন ডলার যা ২০৩০ সাল নাগাদ বৃদ্ধি পাবে ২৩.৮ CAGR এ। এ থেকে সহজেই বুঝা যাচ্ছে আমরা ভবিষ্যতে কি দেখতে যাচ্ছি। এছাড়াও AI ক্রমাগত আরও উন্নত হচ্ছে যার ফলে AI দ্বারা ভয়েস সার্চ বিষয়টিও অনেক নরমালাইজড হয়ে যাবে এবং সাধারণ মানুষ ভালো ফিডব্যাক পাবে। আমরা এখন যে রোবটিক্স, মেশিন লার্নিং এর মতো বিপ্লব দেখতে পাচ্ছি ভবিষ্যতে তা আরও অগ্রগতি হবে এবং ভয়েস সার্চ বা ভয়েস কমান্ড এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। Google Assistant, Gemini AI (Voice), Alexa বা Siri এর মতো প্রোজেক্ট গুলো অনেক ভালো করবে এর পাশাপাশি ভয়েস-অ্যাক্টিভেটেড ডিভাইসগুলির ও প্রচলন বৃদ্ধি পাবে।
ভয়েস সার্চ এর ফলে প্রথাগত এসইও তে সাময়িক একটু প্রভাব ফেললেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের জন্য এসইও এবং ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন এর কম্বিনেশন টা সফলতা বইয়ে আনবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
