You are currently viewing গুগল সার্চ কনসোল কি? গুগল সার্চ কনসোলের কাজ কি?
গুগল সার্চ কনসোল কি

গুগল সার্চ কনসোল গুগলের একটি ওয়েবমাস্টার টুল। ওয়েবসাইটের সর্বাত্মক অবস্থা পর্যালোচনা এবং সার্চ ইঞ্জিনে সাইট কি অবস্থায় আছে তা জানার জন্য এই টুলের কোন বিকল্প নেই। আমরা অনেকেই সার্চ কনসোল এবং এনালিটিক্স এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারি না। 

আমাদের আজকের লেখায় আমরা গুগল সার্চ কনসোল কি, কীভাবে কাজ করে এবং কেন প্রয়োজন সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করবো। এতে আপনি নিজেই এনালিটিক্স ও সার্চ কনসোলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন। 

গুগল সার্চ কনসোল কি?

গুগল বর্তমান সময়ের সব থেকে বড় টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর একটি। শুরুর দিকে তারা একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে অনেক গুলো সার্ভিস প্রদান করে থাকে। তাদের সার্চ নির্ভর ইন্ডাস্ট্রির দ্বারা পরিচালিত সার্ভিসগুলোর মধ্যে অ্যাডসেন্স, এসইও, অ্যাডস, ইউটিউব, ওয়েবসাইট ইত্যাদি অন্যতম। 

ওয়েবসাইট তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য থাকে ভিজিটরদের কাছে কনটেন্ট পৌঁছানো। গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ওয়েবসাইট কনটেন্ট পুরো পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে দেয়। এই কাজ নির্ভুল ভাবে করার জন্য সঠিক এবং কার্যকরী টুল এর  প্রয়োজন হয়। 

গুগল সার্চ কনসোল গুগলের একটি ফ্রি টুল। এই টুল ইউজ করে গুগল তার সার্চ পেজে ওয়েবসাইট কনটেন্ট কীভাবে শো করবে তা নির্ধারণ করে। অন্যদিকে গুগল সার্চ কনসোল ইউজারের ডাটা বিশদভাবে পর্যালোচনা করে তা ওয়েব মাস্টারকে প্রদর্শন করে। 

শুরুর দিকে Google Webmaster Tool হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৫ সালে নাম পরিবর্তন করে Google Search Console নামকরণ করা হয়। ওয়েবসাইট মনিটর করার জন্য এর থেকে ভালো এবং কার্যকরী টুল আর কোথাও নেই। ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং ধরে রাখার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ব্রোকেন লিংক বা URL সরিয়ে ফেলার জন্য সার্চ কনসোল অনেক কার্যকরী। 

তাছাড়া আপনার ওয়েবসাইট যদি গুগলে সার্চ করে বের করতে চান তাহলে তা গুগল সার্চ কনসোল ব্যবহার করে ইনডেক্স করতে হবে। গুগল তার সার্চ রেজাল্টে যা দেখায় তার সব তাদের ডেটাবেজে ইনডেক্স করা থাকে। 

ডি-ইনডেক্স করা কোনো ওয়েবসাইট গুগল সার্চে দেখা যায় না। অর্থাৎ আপনি যদি ইচ্ছা পোষণ করেন যে আপনার ওয়েবসাইট যে কেউ গুগলে সার্চ করে খুঁজে পাবে তাহলে আপনাকে গুগল সার্চ কনসোল টুল ব্যবহার করতে হবে। 

গুগল সার্চ কনসোলের কাজ কি?

গুগল সার্চ কনসোলের কাজের ক্ষেত্র ব্যাপক। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার পর থেকে এর কাজ শুরু হয় যা ওয়েবসাইট পার্মানেন্ট বন্ধ হওয়ার পর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। নিচে সার্চ কনসোলের কাজ কি কি তা বর্ণনা করা হলো। 

ইউআরএল ইন্সপেকশনঃ আপনি যখন সার্চ কনসোলে আপনার ওয়েবসাইট দিয়ে ভেরিফাই করবেন তখন সেটি অটোমেটিক ইন্সপেক্ট হয়ে ডেটা শো করবে। কিন্তু আপনার যদি কোন নির্দিষ্ট পেজের ডেটা লাগে তখন কি করবেন?

এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য গুগল সার্চ কনসোলে URL Inspection নামক একটি অপশন পাবেন। এখানে কাঙ্ক্ষিত URL দিয়ে Inspect বাটুনে ক্লিক করলে উক্ত লিংক সম্পর্কিত সকল তথ্য পেয়ে যাবেন। এখানে আপনার HTTP রিকোয়েস্ট সেন্ড হয়েছে কিনা বা কোনো ইরর আছে কিনা তা চিহ্নিত করা যায়। 

ফেচ গুগলঃ গুগলে কোনো ওয়েবসাইট সাবমিট করা হলে তাদের সিস্টেম থেকে একটি বট এসে পুরো সাইট ক্রল করে। বট পুরো ওয়েবসাইট ক্রল করে সেখান থেকে ডেটা নিয়ে গুগলকে দেয় যা পরবর্তীতে আমরা সার্চ পেজে দেখতে পাই। 

কোন কারণে যদি কোন ওয়েব পেজ ইনডেক্স না হয় অথবা ইনডেক্স হওয়ার পর সার্চ পেজে শো না করে তবে এই ফিচার কাজে লাগে। প্রধানত গুগলের ফেচ ফিচার ব্রোকেন ইনডেক্স পেজ ঠিক করতে এবং গুগল ওয়েব পেজকে কীভাবে দেখে তা জানতে ব্যবহার করা হয়। 

এতে আপনি ওয়েবসাইটে থাকা প্রতিটি সমস্যাযুক্ত পেজ ঠিক করতে পারবেন যা র‍্যাঙ্কিং সহ অন্যান্য বিষয়ে অনেক সাহায্য করে। অন্যদিকে আপনার কাঙ্ক্ষিত পেজ কেন ইনডেক্স হচ্ছে না এবং হলেও কত সময়ের মাঝে ইনডেক্স হবে সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাবেন। 

সার্চ রিপোর্টঃ সার্চ রিপোর্ট হচ্ছে আপনার পুরো ওয়েবসাইটের সম্পূর্ণ ডেটা। এখানে সার্চ ইঞ্জিনে সাবমিট করার পর কি কি পরিবর্তন হয়েছে বা ভিজিটর আসার কারণে আপনার ওয়েবসাইট ভ্যালু যোগ হয়েছে কিনা তা জানতে পারবেন। 

সাধারণত সার্চ রিপোর্টে অন্যান্য তথ্যের সাথে সাথে Impression, CTR, Clicks এবং Position থাকে। অর্থাৎ আপনার সাইট সার্চ পেজে কোথায় আছে, কেমন ভিজিটর পাচ্ছে, কোথায় ভিজিটর বেশি সময় দিচ্ছে ইত্যাদি বিষয় সার্চ রিপোর্ট থেকে জেনে নিতে পারবেন। 

অ্যাপেয়ারেন্সঃ স্ট্রাকচারড ডেটা সার্চ ইঞ্জিন পেজে টপে থাকার জন্য অনেক কার্যকরী অপশন। তাছাড়া গুগলের সম্প্রতি চালু করা Highlight ফিচার সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য অ্যাপেয়ারেন্স সেটিং ব্যবহার করতে হয়। 

তো সার্চ কনসোলের Data Highlighter অপশন ব্যবহার করে আর্টিকেল, ইভেন্টস, লোকাল বিজনেস, রেস্টুরেন্ট, বুকস, প্রোডাক্টস ইত্যাদি পেজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাইলাইট করা যায়। এই ফিচার একই সাথে ইউজারদের সহজে প্রয়োজনীয় ডেটা খুঁজে পেতে সাহায্য করে এবং সার্চে র‍্যাংক করায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 

মোবাইল ইউজাবিলিটিঃ আমরা ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় কম্পিউটার ছাড়াও মোবাইল, ট্যাব ইত্যাদি ডিভাইস ব্যবহার করে থাকি। মোবাইলে আমাদের ওয়েবসাইট কেমন দেখা যায় এবং মোবাইল রিলেটেড সকল সমস্যা মনিটর করার জন্য এই ফিচার কার্যকরী। 

তাছাড়া সাইট রেস্পন্সিভ কিনা বা আলাদা AMP পেজ আছে কিনা এবং থাকলে সেই সম্পর্কিত সেটিংস পরিবর্তন করার জন্য মোবাইল ইউজাবিলিটি অপশন ব্যবহার করা হয়। 

রিমুভ ইউআরএলঃ প্রায় সময় ওয়েবসাইটে 404 Not Found ইরর সম্বলিত পেজ চোখে পরে। একজন ইউজার যখন দেখে ওয়েবসাইটে এই সমস্যা আছে তখন তারা পুরো ওয়েবসাইট স্কিপ করে চলে যায়। এতে একাধারে বাউন্স রেট বারে, র‍্যাঙ্কিং কমে, ভিজিটর বিরক্ত হয়, বিশ্বাস কমে, ওয়েবসাইটের অথরিটি কমে যায়। 

এগুলো যে কোনো ওয়েবসাইটের জন্য খারাপ সংকেত। তাছাড়া গুগল ইনফরমেশন ছাড়া খালি পেজ পছন্দ করে না। যদি আপনি সার্চ কনসোলে এরকম কোন সমস্যা দেখেন তখন রিমুভ ইউআরএল ফিচার ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিন থেকে সেই পেজ সরিয়ে দিতে পারবেন। 

অন্যদিকে কোনো পেজ যদি সার্চ ইঞ্জিনে ভুলে ইনডেক্স হয়ে যায় যেমন ক্যাটাগরি, তখন এই ফিচার ব্যবহার করে উক্ত পেজ বা লিংক সার্চ পেজ থেকে সরিয়ে দিতে পারবেন।  

সাইটম্যাপঃ একটি ওয়েবসাইটে কতগুলো এবং কি কি লিংক আছে তাদের সমন্বয়ে তৈরি হয় সাইটম্যাপ। সার্চ কনসোলে ওয়েবসাইট যোগ করার পর সাইটম্যাপ যোগ করতে হয়। এতে সার্চ কনসোল এবং গুগল বুঝতে পারে সাইটে কি কি লিংক আছে। 

এতে গুগল যে ক্রল বট পাঠায় তা খুব দ্রুত ওয়েবসাইট ক্রল করে ডেটা সংগ্রহ করতে পারে। কারণ ক্রলারকে নতুন করে প্রতিটি লিংক ডাউনলোড করতে হয় না। সাইটম্যাপ সাবমিট করার কারণে তা আগে থেকেই প্রসেস হয়ে থাকে। 

গুগল সার্চ কনসোল কেন ব্যবহার করবেন?

গুগল সার্চ কনসোল বিভিন্ন কারণে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ বিশেষ কিছু কারণ নিচে বর্ণনা করা হলো। 

  • গুগলে ঠিকমতো সাইট ইনডেক্স হয়েছে কিনা তা জানার জন্য এই টুল ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। 
  • কোনো পেজ ইনডেক্স না হলে বা ইনডেক্স রিলেটেড কোনো সমস্যা খুঁজে বের করে তা সমাধান করার জন্য সার্চ কনসোল প্রয়োজন। 
  • গুগল থেকে আসা সার্চ ট্র্যাফিক সম্পর্কে ধারণা পেতে এই টুল প্রয়োজন। 
  • গুগলে কি কি কিওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্চ করা হয়েছে সে সকল ডেটা পাওয়া যায়। যা পরবর্তীতে এসইও এবং কনটেন্ট অপ্টিমাইজ করতে সাহায্য করে। 
  • যে কোন ধরনের ইনডেক্স, স্প্যাম সহ অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে অ্যালার্ট পেতে গুগল সার্চ কনসোল সহায়তা করে। 

প্রায় সকল ওয়েবসাইট মালিকের কাছে ওয়েবসাইট ম্যানেজ করার জন্য গুগল সার্চ কনসোল একটি গো টু টুল। এর ফিচারগুলো আধুনিক টেকনোলজির সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। এতে এর কর্মক্ষমতা অনেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে।

Leave a Reply